Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে বইয়ের পরিবর্তে প্লেট-বাটি কেন?

ইমরান ইমন
১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:১৮

সম্প্রতি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে প্লেট দেওয়ার চিত্র নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। নেটিজেনরা এ নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। দৈনিক ফেনী সম্পাদক আরিফ রিজভী আক্ষেপ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উক্ত ছবি পোস্ট দিয়ে লিখেন, ‘থালা-বাসন বন্ধ হবে কবে’। তার এ মন্তব্য যৌক্তিক।

শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে প্লেট, মগ, বাটি, গ্লাস দেওয়ার সংস্কৃতি এদেশে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সংস্কৃতির পালাবদল ঘটে, সময়ে সময়ে অনেক কিছুইর পরিবর্তন সাধিত হয়। কিন্তু আমরা আমাদের অকার্যকর সংস্কৃতিকে কতটুকু কার্যকর সংস্কৃতিতে রুপান্তর করতে পেরেছি—সে প্রশ্ন এখন আর না ওঠে পারে না। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে উপহার হিসেবে আমাদের মতো এরকম ঘটিবাটির মতো ক্রোকারিজ সামগ্রী দেওয়ার সংস্কৃতি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। পৃথিবীর সব সভ্য ও উন্নত দেশে শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে বই এবং শিক্ষা সহায়ক সামগ্রী দেওয়া হয়। যাতে সেই শিক্ষার্থী এটা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, তার শিক্ষাজীবনের কোনো না কোনো অংশে এটা কাজে লাগে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে এখনও শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে ঘটি-বাটির মতো ক্রোকারিজ সামগ্রী দেওয়া হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে প্লেট, গ্লাস, মগ, ঘটিবাটির মতো ক্রোকারিজ সামগ্রী দেওয়া বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিদপ্তর (মাউশি)। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক এ প্রজ্ঞাপন জারি হয়। উক্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে কোন ধরনের ক্রোকারিজ সামগ্রী দেওয়া যাবে না। এটি শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর পরিবর্তে বয়স উপযোগী মানসম্মত বই অথবা শিক্ষা সহায়ক উপকরণ দিতে হবে।

উপহার হিসেবে ক্রোকারিজ সামগ্রী দেওয়ার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এবং এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হলেও এখনও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেটির তোয়াক্কা করছে না। এখনও দেখা যায়, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে ক্রোকারিজ সামগ্রী দেয়—যেটি সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায় না। তাই সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেটি মানা হচ্ছে না।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতার প্রশ্নও না ওঠে পারে না।

এমনিতেই বর্তমান প্রজন্মের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস হারাতে বসেছে। বর্তমান প্রজন্ম বই পড়া কী জিনিস সেটা এখন ভুলে গেছে। অথচ সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বই পড়ার গুরুত্বপূর্ণ অনস্বীকার্য। বই পড়ার গুরুত্ব প্রসঙ্গে আমাদের জ্ঞানীগুণীরা অনেক কথাই বলেছেন। দেকার্ত বলেছেন, ‘ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর মহৎ লোকের সাথে আলাপ করা’। অস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন, ‘একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন সেটি অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে তা অনেকাংশেই বোঝা যায়’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো’। ওমর খৈয়াম বলেছেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে- বই, সেতো অনন্ত যৌবনা’। মহামতি নেপোলিয়ন বই পড়ার গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল’।

বর্তমানে যে একটা সৃজনশীলতাবিমুখ, মেরুদন্ডহীন প্রজন্ম গড়ে উঠছে সেদিকে কারও নজর নেই। প্রজন্ম নিয়ে, প্রজন্মের এমন দৈন্যদশা নিয়ে যেন ভাবার কেউ নেই! অথচ তরুণ প্রজন্ম হলো একটা দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ। তরুণ প্রজন্মের বেড়ে ওঠা, পরিচর্যার ওপর নির্ভর করে একটা দেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে প্লেট, গ্লাস, মগ, ঘটিবাটির মতো ক্রোকারিজ সামগ্রী দেওয়ার সংস্কৃতি চিরতরে বন্ধ হোক। আর বই হোক উপহারের উপকরণ। কেবল বই দিয়েই প্রজন্মের মাঝে একটি বড় বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া সম্ভব।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

ইমরান ইমন শিক্ষার্থীদের উপহার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর