Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: মজা পুকুরের সংস্কার চাই

মো. জাহিদ হোসেন
১১ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:১০

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে ময়লা আবর্জনা জমে পানি দূষিত হয়ে গেছে। মজা পুকুরগুলো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পরিবেশে। এসব পুকুর সংস্কার করলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশে অন্যরকম আমেজ বিরাজ করত। কিন্তু গত একযুগেও সংস্কারের মুখ দেখেনি পুকুরগুলো। ফলে ময়লা আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে । একটির অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও বাকিদের অবস্থা খুবই শোচনীয়।

জীবনানন্দের শহরে ইবনে বতুতার সেই প্রাচুর্যের নরকের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। সৌন্দর্য আছে কিন্তু সাজানোর কারিগর নাই। যেখানে একটু যত্নেই ক্যাম্পাসটি হয়ে উঠতে পারে বনলতার স্বর্গ। কিন্তু কোনো এক বাধায় যেন তা থমকে আছে, বয়স বাড়লেও যেন দাঁড়াতে পারছে নাহ বিশ্ববিদ্যালয়টি। এর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো পুকুর সংস্কার ।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে মূল ফটকের পাশে ও ভিসি বাংলোর সামনের পুকুরটা সংস্কার করার কথা থাকলেও এখনো সংস্কারের মুখ দেখেনি পুকুরটি। উপাচার্য বলছিলেন , সুইমিং পুল বানাবেন। কিন্তু এখন জীবন বাঁচানোর তাগাদাই মুখ্য বিষয়ে পরিনত হয়েছে ৷ গ্রীষ্মের মরুভূমি খ্যাত ক্যাম্পাসে এই পুকুরটিই অন্যতম জলের আধার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, পুকুরের অবস্থা দিনদিন খুবই খারাপ হচ্ছে, পাড়ের অবস্থা বেহাল। সঠিক যত্ন না নিলে হারিয়ে যেতে পারে পুকুরটি। গ্রীষ্ম আর শীতে পুকুরটি শুকিয়ে যাওয়া অবস্থায় থাকে। পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া খাল থেকে পানি দিলে হয়তো পুকুরটি এমন করুন দশা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আপনারা(কর্তৃপক্ষ) সুইমিংপুল বানাবেন বানান, কিন্তু প্রকৃতির দানকে অবহেলা করবেন কেন? আগে বাঁচিয়ে রাখুন। প্রকৃতির সাথে থেকে কৃত্রিমত্তার ছোঁয়ায় সৌন্দর্যবর্ধন করুন। দয়া করে, বাঁচিয়ে রেখে সংস্কার করুন। এছাড়াও এর ঠিক অপর পাশে আরেকটি পুকুর থাকলেও দিনদিন সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ৷ অর্ধেকটা প্রায় ভরাট করা হয়ে গেছে। হয়তো প্লানে নেই। কিন্তু ক্যাম্পাসের মূল ফটকের দুই পাশে দুইটি পুকুর ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিবে। প্রানবন্ত করে তুলবে দক্ষিনের বাতিঘর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েকে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের একটি প্রানের দাবি,শে রে বাংলা হলের পাশের পুকুরটি সংস্কার করা। পুকুরের অবস্থা এতোই বেহাল যে ওটাকে পুকুর বললে পুকুরের অপমান হবে। পুকুরটি শেওলা, কচুরিপানা আর কলমি লতা-পাতায় এলোমেলো অবস্থায় জর্জরিত। পাড়গুলোয় কঁচু আর লতাপাতায় একাকার। পানিতে কালো রং ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন এমন অবস্থায় পড়ে থাকায় বিশ্রী গন্ধ ছড়াচ্ছে পরিবেশে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ৷ দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ। সংস্কারের অভাবে পুকুরটি দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। তাছাড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাঁতার কাটার মতো তেমন কোনো পুকুর নেই। পাশে নদী থাকলেও খানিকটা দূরে। তাই পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে পুকুর সংস্কারে নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। যদিও এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কয়েকবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে । কিন্তু দুঃখের সহিত বলতে হয়, কথা রাখেনি। কেউ কথা শোনেনি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সৌন্দর্য বর্ধনে উপাচার্যের মন থাকলে তিনি কেন পুকুরটি সংস্কার করছেন নাহ বুঝতে পারছি নাহ। তিনি কয়েকবার ঘুরে গেছেন। মাঝে মাঝেই আসেন, আমাদের বলেন সংস্কার হবে। পুকুরের পাশে আমাদের বসার জায়গা করে দিবে। কিন্তু আজও সংস্কারের মুখ দেখিনি পুকুরটি।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়াই যেখানে মূখ্য বিষয়। তাই শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি পুকুর সংস্কারের বিষয়টি আমলে নেওয়া কতৃপক্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও শিক্ষার্থীরাই সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। কুড়িয়ে এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম। স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে টপকে শীর্ষের আসনে নিয়ে গেছেন প্রিয় ক্যাম্পাসকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রতিষ্ঠার ১৩ বছরেও সাঁতার কাটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো সুইমিংপুল নেই। সংস্কার হয়নি মজা পুকুরের। তাই পুকুরটি সংস্কার ও সুইমিংপুল তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

আমরা জানি, প্রতিবছরই সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি -আন্ত:বিভাগ ও আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার প্রতিযোগিতা। কিন্তু সুইমিংপুল নাহ থাকায় প্রতিযোগিতাগুলো জমঝমাট হয় নাহ। শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিতে পারে নি প্রতিযোগিতাটি। জানি বলবেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি নবীন বিশ্ববিদ্যালয়। নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সংকট আছে ৷ কিন্তু তাই বলে একযুগেও একটি সুইমিংপুল তৈরি হবে নাহ, সংস্কার হবে নাহ পুকুর। আপনারা আর কত বয়স হলে নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা ঘুচাবেন, আর কতবছর অতিবাহিত হলে শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা নিয়ে ভাববেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন ও শিক্ষার্থীদের মন-মনন উন্নয়নে ক্যাম্পাসের পরিবেশের দিকে নজর দিবেন ? বস্তুতঃ বলা যায়, এখানে সংকটের থেকেও বড় বিষয়টি হচ্ছে (আপনাদের) প্রশাসনের উদাসীনতা, তাদের স্থবিরতা। তাই প্রশাসনের একটু সুনজরেই পুকুরগুলো প্রান ফিরে পেতে পারে । পরিশেষে বলবো, শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করুন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করুন। সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু আছে ততটুকু করুন।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এজেডএস

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় মো. জাহিদ হোসেন

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর