Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিজিটাল বৈষম্যই স্মার্ট বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ

মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত
২৩ মে ২০২৩ ১৫:৩০

স্বাধীনতা পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের যত অগ্রগতি তার অধিকাংশই হয়েছে গত এক দশকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের পরবর্তী দেশের মানুষকে নতুন জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়াই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পর সমসাময়িক বিশ্বের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ক্ষেত্র বিশেষে এশিয়ার অনেক দেশ থেকে অর্থনীতি, স্বাস্থ্যনীতি এবং প্রযুক্তিতে বেশ ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা দেয় ডিজিটাল বাংলাদেশের। ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা ছিল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং সুদূরপ্রসারী।

সেই সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দদ্বয়ের অনেক ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল। সবেমাত্র আধুনিকতার ছোয়া লাগতে থাকা সমাজ অতি সহজেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সঠিক অর্থ ঠাহর করতে পারেনি। তবে সময়ের সাথে সাথে সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে৷

গ্রাম-শহর, বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন অফিসে এখন সর্বোত্র প্রযুক্তির ছোয়া। এসবই ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনার ফসল। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পালা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গভার্নমেন্ট এবং স্মার্ট ইকোনমি এই চার বিষয়কে মূল ভিত্তি ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে।

নি:সন্দেহে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তিনির্ভর এবং তরুণ প্রজন্মই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি। এখানে কোন বৈষম্যের চিত্র থাকবেনা। স্মার্ট বাংলাদেশ হলে মানুষের মধ্যে তথ্যের প্রবাহ বেড়ে যাবে, সবার মধ্যে সহযোগীর ক্ষেত্র খুব দ্রুততম সময়ের তৈরি হবে। এর মাধ্যেমে অনেক কর্মসংস্থানের তৈরি হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আরো শক্ত অবস্থানে দাড়াতে পারবে। বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল প্রযুক্তিগত দক্ষতা। প্রযুক্তিগত দক্ষতায় যে জাতি যত দক্ষ অর্থনৈতিকভাবে তারা বেশি সমৃদ্ধ। কারণ মানবজীবনের প্রত্যেকটা মূহুর্তে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার।

স্মার্ট বাংলাদেশ শাসনবিভাগে স্বচ্ছতা আনয়ন করবে। শাসনবিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তখন সময় ক্ষেপণ হবেনা। সবকিছু প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় লাল ফিতার দৌরাত্ম কমে যাবে। সবাই কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

তবে এতসব আয়োজন এবং পরিকল্পনা পূর্ন সফলতায় রূপ নেবে না যদি প্রযুক্তি ব্যবহারে সবার মাঝে বৈষম্য দূর করা না হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলেও গ্রামের চাইতে শহরের নাগরিকরা এখনও নেটওয়ার্কিং সুবিধা বেশি পায়৷ অধিকাংশ গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন নাই। এর ফলে শহর এবং গ্রামে স্পষ্ট বৈষম্য প্রতিয়মান।

আবার, দেশে পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারে বৈষম্য প্রকট। মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুঠোফোন অর্থনীতি–২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় ২৩ শতাংশ কম নারীর নিজস্ব মুঠোফোন রয়েছে।

মুঠোফোন থাকলেও এর সঠিক ব্যবহার অধিকাংশ নারীরা জানেনা। ইন্টারনেট সংযোগেও পুরুষদের চাইতে নারীরা আরো বেশি পিছিয়ে। ইন্টারনেট ব্যবহার করার সম্ভাবনাও পুরুষের তুলনায় নারীর ৫২ শতাংশ কম।

সবশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এ জেন্ডার বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যার ৬৬.৫৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৫.৫৩ শতাংশ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩৮.০২ শতাংশ পুরুষ এবং ২৩.৫২ শতাংশ নারী।

তবে আশার কথা হল—তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়ে স্কুল থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা পর্যায়ে কাজ করছে সরকার। আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এ কাজের ফল পাওয়া যাবে।

সুতরাং এটা বলা যায় যে, একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে চাইলে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলকে প্রাধান্য দিলে যেমন চলেনা তেমনি শুধু পুরুষকে প্রাধান্য দিলেও চলেনা। বাংলাদেশে জনসংখ্যা পুরুষদের চাইতে নারীরাও কম নয়, হয়ত বেশি অথবা সমান।

তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে শুধু শহর নয় গ্রামকেও সমানভাবে প্রাধান্য দিতে হবে। আবার, পুরুষদের সাথে সাথে নারীদেরও প্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সবার ক্রয়ক্ষমতার মাঝে প্রযুক্তিপণ্য নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

ডিজিটাল বৈষম্যই স্মার্ট বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ মুক্তমত মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর