পাসপোর্ট বইতে জাতির পিতার ছবি সংযোজন
৩১ মে ২০২৩ ১৬:১১
আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে পাসপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্রীয় উপাদান। এটি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট নাগরিকের শুধু বহিরাগমনের সহায়কই নয়,উপরন্তু এটি একটি জাতি ও রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ইতিহাস,ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে।দীর্ঘ নয় মাসের রক্তাক্ত প্রস্রবণ, বহু নিষ্পাপ শিশুসহ ত্রিশলক্ষ তাজা প্রাণ, অসংখ্য পঙ্গুত্ব ও দুইলক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই মহান স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ। এই মহান অর্জনের নেপথ্যে যার সমগ্র জীবনের একক স্বপ্ন, সাধনা, অকৃত্রিম ত্যাগ, অকাতর বিসর্জন সুনিপুণ ভাবে জড়িত তিনি হলেন কালের অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাঙালি জাতির অকৃত্রিম বন্ধু হিসাবে শুধু ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিই নয়, পাশাপাশি তাবৎবিশ্বের শোষিত বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সোচ্চারিত কন্ঠ হিসাবে তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসাবেও ইতোমধ্যে স্বীকৃত হয়েছেন। ১৯৫৬ সালের ৫-৯ এপ্রিল ষ্টকহোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের স্মমেলনে বঙ্গবন্ধু অংশ নিয়ে বলেছিলেন- ‘বিশ্ব শান্তি আমার জীবনের মূলনীতি। নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত ও স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষ, যে কোন স্থানেই হোকনা কেন, তাদের সংগে আমি রয়েছি। আমরা চাই বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক, তাকে সুসংহত করা হোক।’
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ২৯ তম সাধারণ অধিবেশনে সর্বপ্রথম মাতৃভাষায় (বাংলা) বক্তৃতা করে তিনি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন যেখানে তিনি বিশ্বশান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে জোরালো দাবি তুলে বিশ্ববাসীর নজর কেরেছিলেন। এর পূর্বে সদ্য স্বাধীন দেশের একজন অকুতোভয় রাষ্ট্র নায়ক হিসাবে ১৯৭৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ (ন্যাম) সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে তিনি দ্বৈর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন- ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত; শোষক এবং শোষিত; আমি শোষিতের পক্ষে’। এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি সাম্রাজ্যবাদের ভীত কাঁপিয়ে তুলেছিলেন। বিশ্বমানবতার একজন বিরল পরিত্রাতা হিসাবে তিনি ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্বশান্তির নিমিত্তে বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তি পুরষ্কার ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন। তিনি দলমত নির্বিশেষে শুধু জাতীয় সম্পদই নন, বরং ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে ‘বিশ্ব সম্পদ’ও বটে। কেননা, তার মানবহিতৈষী রাজনৈতিক দর্শন কালে-কালান্তরে পৃথিবীর নিপীড়িত, বঞ্চিত মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির পাথেয় হিসাবে গ্রহনীয় হতে থাকবে। তাই জাতীয় সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও তিনি একজন চিরঅনুকরণীয় মহৎ নেতা হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত।
এমনই একজন কালোত্তীর্ণ বিশ্বজনীন মহতী ব্যক্তিত্বকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পাসপোর্টে স্থান দেওয়া খুবই যুক্তিযুক্ত এবং তা আমাদের জাতীয়তা ও রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক মর্যাদাকে বিশ্বের দরবারে আরো উচ্চকিত করবে। ফলে, বহির্বিশ্বে বৃদ্ধি পেতে পারে আমাদের নাগরিক মর্যাদাও। তাই, সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট বইয়ের সূচনা অথবা সুবিধাজনক কোনো পাতায় ‘জাতির পিতা’ এবং ‘FATHER OF NATION’ উল্লেখ করে জাতির পিতার স্পষ্ট ছবি সংযোজন করার মাধ্যমে জাতীয় পাসপোর্টকে আরো অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু-সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
কাজী মাসুদুর রহমান পাসপোর্ট বইতে জাতির পিতার ছবি সংযোজন মুক্তমত