ঢাকা ১৭ উপ-নির্বাচন: একজন সৎ মানুষের খোঁজে
১৪ জুলাই ২০২৩ ১৭:৫৯
সমাজ পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা শিক্ষা। শিক্ষা মানুষকে মানবিক করে, উদার করে, যুক্তিপ্রবণ করে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের সচেতনতা বাড়ে। বাড়ে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ। সমাজে প্রকৃত শিক্ষার বরাবরই অভাব। এই অভাবজনিত কারণে সমাজে যে সকল অসুস্থতা বিরাজ করে তার মধ্যে অনিয়ম, দুর্নীতি, অপরাজনীতি অন্যতম। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি এটাও সত্য অনিয়ম দূর্নীতি লাগামহীনভাবে বাড়ছে। তার বড় একটি কারণ সমাজে শিক্ষার অভাব।
প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ কখনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই রাজনীতির ক্ষেত্রেও শিক্ষিত মানুষের প্রয়োজন। আদর্শিক মানুষের প্রয়োজন। এখানে রাজনীতির বড় একটি অংশ ব্যবসায়ীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রাজনীতি এখন আর শুধু রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। ফলে আদর্শিক রাজনীতির মানুষ পিছিয়ে পড়ছে। কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছে সুযোগ পাচ্ছে ব্যবসায়ীরাই। ব্যবসায়ীরা কেবল তাদের নিজেদের স্বার্থই দেখে। ব্যবসার স্বার্থ দেখাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আদর্শ তাদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়। পুজিঁর ধর্মই এটা। পুজিঁর চরিত্র কেবল নিজের কথা ভাবা। কিন্তু রাজনীতি সে তো মানুষের জন্য, জনমানুষের কল্যান চিন্তাই তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য। ফলে ব্যবসা আর রাজনীতি দুটোর ধরণ ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। তাই রাজনীতি যদি ব্যবসা হয়ে যায় তবে তা দেশ ও মানুষের জন্য বড় ভয়ংকর। আমাদের দেশে অনেকের কাছেই রাজনীতি ব্যবসা। ফলে তারা রাজনীতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে জনমানুষ, দূষিত করছে সকলকেই।
এই রাজনীতিকে শুদ্ধ করতে, মানবিক করতে প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষিত এবং সজ্জন মানুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজন শিক্ষক ও গবেষককে মনোনয়ন দিয়েছেন। যা সত্যিই যথার্থ এবং বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়। এই মুহুর্তে এই আসনটির জন্য এমন একজনকেই প্রয়োজন ছিলো। যিনি একই সঙ্গে রাজনীতিবিদ এবং উচ্চশিক্ষিত। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যিনি ঐই এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করছেন। যাকে মানুষ একজন সৎ মানুষ হিসেবে গণ্য করে।
বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ। যে কোন সরকারকে বলিষ্ট করতে তার নিজস্ব কিছু শিক্ষিত লোক প্রয়োজন। যারা জ্ঞানে গুণে সমৃদ্ধ, পাশাপাশি সততায়ও পরীক্ষিত। যারা বাইরের দেশের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে কথা বলতে পারবেন, নায্য দাবি আদায় করতে পারবেন। সেই বিবেচনায় মোহাম্মদ এ আরাফাতের মতো মানুষদের রাজনীতিতে বেশি প্রয়োজন।
অনেক সময় দেখা যায় অনেক শিক্ষিত মানুষও দূর্নীতিবাজ হয় তারা অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়। তার বড় একটি কারণ প্রকৃত শিক্ষার অভাব এবং পরিবারের অশিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষা না থাকার কারণে হয়তো ব্যক্তি বড় পদে যায় কিন্তু তার মধ্যে নৈতিকতা তৈরি হয় না। তখন সে যে কোন কিছুই করতে পারে শুধু অর্থের বিবেচনায়। আবার পরিবার মানুষের শিক্ষার বড় একটি জায়গা। মূলত পরিবার থেকেই মানুষ যতোটা শিখে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও তাকে ততোটা শেখাতে পারে না। ফলে দেখা যায় একজন সচিব হলো কি চেয়ারম্যান তা বিবেচ্য নয় যদি না ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তিনি বড় হোন তার মধ্যে নৈতিকতার বোধ গড়ে না উঠে। আবার মানুষের সঙ্গও গুরুত্বপূর্ণ। যে যেমন তার তেমন মানুষকেই ভালো লাগবে। কথায় আছে সঙ্গী দেখে যায় চেনা। রুচি চিন্তা যদি না মেলে তা হলে একে অপরের কাছের হতে পারেন না। ফলে একজন সজ্জন মানুষের সঙ্গ অন্য ভালো মানুষদের সঙ্গে হবে এটাই স্বাভাবিক।
অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাতের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। যিনি দীর্ঘদিন সরকারী চাকরি করেছেন। বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক ছিলেন। একজন সৎ মানুষ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে সুধী মহলে। তিনি সারা জীবনই খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। সততার সঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে জানার সুযোগ রয়েছে বলেই এই কথা গুলো বলতে চাইলাম। তিনি সবসময়ই চেয়েছেন তার সন্তানরা তার মতো হোক। পরিশ্রমী এবং সৎ মানুষ হোক। তিনি নিজেও রাজনীতি সচেতন লোক। তিনি তার সন্তানকে বড় করেছেন তারই আদর্শে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়।
আগেই বলেছি পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার পিতামহ আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ। তার একটা প্রভাব আমাদের পুরো পরিবার জুড়ে রয়েছে। আমাদের পরিবারের রাজনৈতিক ভাবাদর্শ সর্বজনবিদিত। কথাগুলো বলবার কারণ মানুষ তার পরিবারের চিন্তা ও কর্ম দ্বারা প্রভাবিত। আমি নিজেও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু সবার আগে আমি নৈতিকতা আর আদর্শকে মাথায় রেখেছি। আমার পরিবারের সুনাম এবং সম্মানের কথাও ভেবেছি। অধ্যাপক আরাফাতের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হবে না আশা রাখি।
লেখক: প্রধান উপদেষ্টা, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, সাবেক কমোডর বাংলাদেশ নৌবাহিনী
সারাবাংলা/এজেডএস