বাঁশখালীর প্রধান সড়কে প্রাণহানি: কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কবে?
১৮ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২২
দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম ও বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী একটি উপজেলা বাঁশখালী। যার দূরত্ব চট্টগ্রাম শহর থেকে যথাক্রমে বাঁশখালী উপজেলা (৪৪ কি.মি) এবং শেষ সীমান্ত বাঁশখালী টইটং (৫৮ কি.মি)।
এই সড়কপথে প্রতিদিনই হাজারখানেক মানুষ চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা-যাওয়া করে। কেউ আসছে চিকিৎসার কাজে, কেউ ব্যবসায়িক কাজে আবার কেউবা পড়াশোনার কাজে কিংবা কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে। বাঁশখালীবাসীর চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতের একমাত্র সড়কপথ আজ অনিয়মের যাতাকলে। এই অনিয়মের স্রোতে বাঁশখালীর যাত্রী সাধারণের জীবন যেন ভাসমাস। কোনো না কোনো ভাবেই যেন ধারাবাহিক সিরিয়ালের ন্যায় প্রাণ ঝরছে এই সড়কে।
বাঁশখালীর এই প্রধান সড়কপথে গণপরিবহনের তালিকায় আছে– এস.আলম পরিবহন সার্ভিস, বাঁশখালী সুপার ও স্পেশাল সার্ভিস। এছাড়াও আছে সিএনজি (গ্যাস চালিত)। এদিকে বাঁশখালীর প্রধান সড়কের প্রশস্ততা নেই বললেই চলে। যেখানে সড়কের দু’পাশের ফুটপাতগুলো-ও অসাধু দোকানীদের দখলে। যার বিরূপ প্রভাব প্রতিনিয়তই বাঁশখালীর এই প্রধান সড়কপথকে কলঙ্কিত করে আসছে। এছাড়াও এই সড়কপথের গণপরিবহন সেবা সিন্ডিকেটের দখলে। তাই বাঁশখালীর গণপরিবহনগুলো সড়কে দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের কাছে বাঁশখালী বাসীর জীবনের মূল্য যেন খুবই নগন্য।
বাঁশখালী সড়কের শৃঙ্খলাজনিত কারণে প্রতিনিয়তই অকালে প্রাণ ঝরছে। এভাবেই যেন বাঁশখালীর হাজারো মায়ের কোল খালি হচ্ছে। বাঁশখালী সড়কের এই অনিয়ম ও শৃঙ্খলাজনিত কারণগুলো বেশ কয়েকবার জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হলেও, কোনো প্রতিকার হয়নি।
সম্প্রতি (১৪ আগস্ট) এই সড়কের রামদাশ মুন্সির হাট সংলগ্ন নুরজাহান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বাস (সুপার সার্ভিস), মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে একটি হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি রচিত হয়েছে। এই দূর্ঘটনায় ২ জন ঘটনাস্থলে নিহত হয় এবং আরেকজন গুরুতর আহত হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) গুরুতর আহত ব্যক্তিও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেঁচে থাকার যুদ্ধে হেরে যায়।
এছাড়াও চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি, বাঁশখালী নাপোড়া বাজার সংলগ্ন সড়কে বেপরোয়া এস.আলম বাসের চাপায় অগ্ররাজ সিকদার নামের এক স্কুল ছাত্র পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।
বাঁশখালীর প্রধান সড়কে শৃঙ্খলাজনিত কারণে প্রতিনিয়তই প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। আর কতো মায়ের বুক খালি হলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাঁশখালীবাসী আজ দিশেহারা।
এমতাবস্থায় বাঁশখালী সড়কপথের এই শৃঙ্খলাজনিত অনিয়ম বন্ধ হওয়া জরুরি। নয়তো এই সড়কে প্রাণহানির মিছিল থামবে না। এখন বাঁশখালীর যাত্রী সাধারণের মনে একটাই প্রশ্ন– এই শৃঙ্খলাজনিত অনিয়মের সিন্ডিকেট চক্র নির্মূল করতে, কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কবে?
সর্বোপরি, বাঁশখালীর প্রধান সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাঁশখালীর প্রধান সড়কে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কেবল বাঁশখালীর প্রধান সড়কে নিরাপদ যাত্রার দ্বার উন্মোচিত হবে এবং বাঁশখালী বাসীর সড়কপথে অকাল প্রাণহানির শঙ্কা দূর হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
সারাবাংলা/এজেডএস