Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাকিব-তামিম ইস্যু: মাঠের বাইরের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে

এস.এম. রাহমান জিকু
১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৫০

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন মাঠের খেলার সাথে মাঠের বাইরের রাজনীতির খেলা চলে হরহামেশাই। যার কারণে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় অনেক ভালো ক্রিকেটারের। সাকিব-তামিম একে অপরের সাথে কথা বলেন না, পুরোনো আলোচনা। নতুন হলো কোচও সাবেক ক্যাপ্টেন থেকে দূরে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন সচেতনভাবে। আচ্ছা চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কি তার সাথে যারা নিজ থেকে যোগাযোগ করেন না সেই ক্রিকেটারদের সাথে যোগাযোগ করেন না? এই যে বিশ্বকাপের আগে একটা অস্বস্তি, আড়ি আড়ি সিচুয়েশন, ধরলাম সেটা পুরোটাই তামিমের ফল্ট, কিংবা সাকিবের। কোচ ভালো লোক! পরিবেশটা ঠিক করবে কে?

বিজ্ঞাপন

তামিম কেন্দ্রিক ঘটনা প্রবাহ– ক্যাপ্টেন্সি ছাড়া, রিটায়ারমেন্টের ঘোষণা দেওয়া, কামব্যাক করা, বোর্ডের সাথে মিটিং, ইনজুরি এবং একই সাথে হচ্ছে তার ফিরে আসার প্রসেস এই সবকিছুর মাঝখানে কখনোই আসলে তিনি কারো সাথে কথা বলেননি।

তামিম ইস্যুতে কেউ তামিমকে তার বক্তব্যের জন্য দায়ী করছেন। কেউ বলছেন যে, এই সময় এমন ইন্টারভিউ দেওয়া ঠিক হয়নি, কথা বলা ঠিক হয়নি। কেউ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ইস্যু, আবার কেউবা সাকিব-তামিমের কেন এখনো কথা হচ্ছে না? এভাবে অগণিত ইস্যুতে আক্রান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট।

কিন্তু তামিমের সাথে কোচ এবং ক্যাপ্টেনের কোনো কথা হয়নি এবং এটাকে কেন্দ্র করে অনেকে অনেক আলোচনা করছেন। সেখান টা-ই ৩টা পক্ষ আলোচনায় ভাসছে– কেউ তামিমকে ভিলেন বানাচ্ছেন, কেউ সাকিবকে ভিলেন বানাচ্ছেন, আবার কেউ বলছেন কোচ।

তামিম ইকবাল ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েছেন। তামিম ইকবাল ওয়ানডেতে কামব্যাক করার জন্য লড়ছেন। তিনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের পার্ট নন। এগুলো পুরনো আলোচনা। একই সাথে আমরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছি না, সাকিব-তামিমের মধ্যে আগের ফ্রেন্ডশিপটা নেই। দোস্তির যে সম্পর্ক সেটা নেই এবং তারা, যখন তামিম ইকবালও ক্যাপ্টেন ছিলেন তখনও যে তাদের রেগুলার কথা হতো, টেক্সট হতো, ফোনে কথা হতো, মাঠে কথা হতো এমনটা কিন্তু না। অর্থাৎ আমরা যারা খেলাটা দেখি, দর্শকরা নিশ্চয় অনেক ভালোভাবে সেটা দেখেন। আমরা যারা লেখালেখি করি আমরাও দেখি। যারা সাকিব-তামিমের কাছের মানুষ তারা সেটা দেখেন এবং তারাও সেটাই জানেন। সাকিব-তামিম, দ্যায়ার ভেরি প্রফেশনাল অন দ্যা ফিল্ড। কিন্তু এর বাইরে, ওই মাঠের বাইরের সম্পর্কটা তাদের সবসময়ই শিথিল ছিলো। অর্থাৎ সাকিবের সাথে তামিমের কথা হয় না। প্রথমত এটার মধ্যে আমি কোন ফল্ট খুঁজে পাই না। এটা তো হচ্ছিল না। যখন তামিম ক্যাপ্টেন ছিলো, তখনও তো সাকিব-তামিমের খুব একটা কথা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সাকিব ক্যাপ্টেন হয়ে বাংলাদেশে আসার পরে দুতিন দিন মাত্র ছিলেন। নিজেই কোনো প্র্যাকটিস সেশনে তিনি ছিলেন না। এই মুহূর্তে এশিয়া কাপের পরিকল্পনায় যেহেতু তামিম নেই, তার সাথে কথা হলো না। আমি খুব ভালো ভাবে এটাকে মেনে নিই এবং যে সিচুয়েশনটা, ওই যে তাদের মধ্যে কথা হয় না। আগের বন্ধুত্বটা আর নেই। সেটাকে মাথায় নিলেই এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্নের জায়গাটা আসলে কোথায়?

কী কারণে আসলে আমি একটা জায়গায় গিয়ে বারবার হোঁচট খাই? আমরা যদি পুরো ইন্টারভিউ দেখি, সেখানে দারুণভাবে একটা ব্যাপার চলে আসে। দেখেন সাকিব আল হাসানকে ক্যাপ্টেন বানানো হয়েছে। কিংবা তামিম ইকবাল যখন ক্যাপ্টেন ছিলেন, তাদের কিন্তু মূল দায়িত্ব হচ্ছে পুরো দলকে রান করানো না। পুরো দলের পরিকল্পনা কিন্তু শুধুমাত্র ক্যাপ্টেন ঠিক করেন না। এটার জন্য ক্রিকেট বোর্ডের একটা বড় ধরণের ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে এবং এই ইনভেস্টমেন্টের একটা বড় অংশ, অর্থাৎ বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যে সেলারি পায়, যে ম্যাচ ফি পায় এগুলো যোগ করলেও তার থেকে অনেকগুণ বেশি হয়ে যায় যেটা, সেটা হচ্ছে কোচিং-স্টাফদের বেতন। ইন্টারেস্টিংলি বাংলাদেশে আসলে কোচিং-স্টাফ হিসেবে যারা কাজ করেন, তাদেরকে তো আমরা চিনি। চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে আমরা চিনি। আমরা এ্যালেন ডোনাল্ডকে চিনি। এর বাইরেও আমরা মাইন্ড কোচ হিসেবেও একজনকে আসতে দেখেছি। এই যে মাইন্ড কোচের সেশনে আমরা দেখেছিলাম যে, কোচের ছেলেও উপস্থিত ছিলেন। তার নাম হলো ফিল জোন্সি। এর আগেও তিনি এসেছিলেন। তার মানে দলের অবস্থাটা?

ফিল জোন্সিকে তো আনা হয়েছিলো হাথুরুসিংহের পরিকল্পনায়। ভালো করতে চায়। দলের মধ্যে যে বিভেদ, দলের মধ্যে যে ছোটখাটো সমস্যাগুলো রয়েছে, সব জায়গায় এটা থাকে। সেটাকে দূর করার জন্য একজন মাইন্ড কোচকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং হেডকোচ এটা পরিকল্পনা করেছে।

আমার প্রশ্ন– এই মিরপুরে যখন তামিম ইকবাল প্রতিদিন অনুশীলন করেন, সকাল ৮ টায় আসেন, ১০ টায় যান। ১১-১২টা পর্যন্ত তিনি বোর্ডে থাকেন। একই সময়ে বা একই সময়ের কাছাকাছি সময়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম তারাও কিন্তু আসলে এই ফ্রেমের মধ্যে অবস্থান করেছিলেন এশিয়া কাপে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।

তামিম ইকবাল কখনো হেড কোচের বিরুদ্ধে বা বিপক্ষে প্রকাশ্যে কোথাও কোনো মন্তব্য করেননি। তামিম ইকবাল দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। কোচকে আমিও কোনো টেক্সট বা কল দেইনি। তামিম ইকবাল দায় স্বীকার করা মানে, তিনি নিজেকে দায়ী মানছেন, তাই তো? তাহলে যে স্টাফগুলোকে এখানে রাখা হয়েছে পরিবেশ ঠিক করার জন্য, যাদের আসলে এই ক্রিকেটারদেরকে ম্যানেজ করা দরকার।

ওয়ার্ল্ড কাপ পরিকল্পনায় তামিম আসলেই থাকছেন কিনা? তামিমের ইনজুরির অবস্থা কি? তামিম কোথায়, কি ব্যথা ফিল করছেন? তামিম কিভাবে তার রিহেভ প্রসেসকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন? তামিমের জন্য ড্রেসিংরুম কিভাবে সহজ হবে? সেই কাজটা তো করবে কে? নিশ্চয়ই সাকিব আল হাসান করবে না। যখন তামিম ক্যাপ্টেন ছিলো, তখন সাকিবের জন্যও নিশ্চয় তামিম এটা করেননি। কারণ তাদের মধ্যে আসলে ওভাবে কথা হয় না।

করবেন তিনি, যিনি হচ্ছেন হেড কোচের দায়িত্বে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। খুব সিম্পল। বাট ওয়ান একচ্যুয়ালি হিট ইট, নাথিং। তামিম বলেছে, এটার দায় আমার। এক হাতে তালি বাজে না। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যিনি, তিনি হলেন পুরো দলের অভিভাবক।

সাকিব-তামিমের অভিমান তো হচ্ছে ড্রেসিংরুমে বা প্ল্যানিংয়ের জায়গায় তো নিশ্চয়ই হেড কোচ। একজন ক্রিকেটার, তাকে নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় তিনি আছেন। আমরা যতটুকু জানি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি কামব্যাক করবেন। তার সাথে হেড কোচ কোনো কথা বলে না। তামিম ইকবালের দোষ, তিনি যোগাযোগ করেনি। আচ্ছা যে ক্রিকেটাররা কোচের সাথে টেক্সট দেন না, ফোনে কথা বলেন না। অনেক ক্রিকেটারই তো আছে। ১৭ জনের দলের মধ্যে তো আসলে সবাই তার সাথে যোগাযোগ করেন এমন তো না। তাদের সাথে কি তিনি যোগাযোগ করেন না, কথা বলেন না?

সৌম্য সরকার তো কোন হিসেবের মধ্যে না থেকেও কোচের সাথে এসে কথা বলেন। বা কোচ তারে খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসে। যে আসলে সৌম্য সরকারকে কোনোভাবে খেলানো যায় কিনা?

তামিম ইকবালের সমস্যাটা কোথায়? অর্থাৎ ইকবাল আসলে কি করেছে? যে তার কারণে একজন হেড কোচ, যে তার সাথে কোনো আলোচনার মধ্যে নেই। তার সাথে প্ল্যানিংয়ের ডিসকাস করেন না। তিনি কবে কামব্যাক করবেন? কিভাবে কামব্যাক করবেন? কয়টা ম্যাচ তিনি খেলার প্ল্যান করছেন? অন্তত ৫টা ম্যাচ তামিম ইকবাল পাবেন। এরমধ্যে ২টা প্রস্তুতি ম্যাচ, বাকি ৩টা হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ। সেখানটা-ই তামিমের প্ল্যান কি? কোচ সেটা নিয়ে প্ল্যান করেন না, কথা বলেন না। নট ইভেন অ্যা টেক্সট।

তামিম ইকবাল কিন্তু এই হেড কোচ সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দেননি। অনেকের পক্ষে-বিপক্ষে হয়তো তিনি কথা বলেছেন। মেডিকেল টিমকে নিয়েও কথা বলেছেন। কিন্তু হেড কোচের বিরুদ্ধে টোটালি কিছুই বলেননি।

তাহলে কোচের কাজটা কি? বাংলাদেশ দল তো ভাই বিশ্বকাপে ভালো করতে চায়। আমি তামিম ইকবালের পক্ষে যাবো না। সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে যাব না। কোচের পক্ষে-বিপক্ষে যাবো না। কিন্তু এই বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য বাংলাদেশ দলের এই মুহূর্তে দরকার কি?

হাতগুলো প্রসারিত করে রাখা। দূরে দূরে চলে যাওয়া। নাকি ১০টা আঙ্গুল এক হতে পারা? সেই চেষ্টাটা করা। মূলত সেই চেষ্টা করবে কে? ক্রিকেট বোর্ড কাদেরকে পে করছে? মাইন্ড কোচ তাহলে কাকে নিয়ে কাজ করার জন্য এইখানটাতে এসেছে? তিনিও তো পেমেন্ট নেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে তামিম ইকবালের কথা হয়েছে। একদম ইন্টারভিউর শেষ পর্যায়ে যদি আপনারা খেয়াল করেন, এবং অবশ্যই রাজনীতির বাইরে গিয়ে যদি আমরা দেখি। প্রধানমন্ত্রী আসলেই খুব ইতিবাচক রুল প্লে করেছেন, বাংলাদেশ দলের ওই সময়ের সংকট মোচনের জন্য। এটা আসলে ডিভাইডেবল ইস্যু না। কিন্তু কোচের সাথে কথা হয় না। বি এম ওয়ান দ্যা তামিম শুড প্লে ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড কাপ এন্ড দ্যা আপ কামিং সিরিজ। কিন্তু হেড কোচ কী চান? সেটা তিনি পার্টিকুলার ক্রিকেটারদের সাথে শেয়ার করেন না।

আমরা কোন প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সাকিব-তামিম কথা বলবেন না, টেক্সট করবে না, এক রেস্টুরেন্টে যাবে না, দাওয়াতে দেখা হবে না এই মুহূর্তের পরিস্থিতিতে খুব স্বাভাবিক। তামিম ইকবাল ক্যাপ্টেন যখন ছিলেন, আমি নিয়ে বলতে পারি– আমার উপর কেউ রাগও করতে পারেন, নিউজটা দেখলে তামিম ইকবালও মন খারাপ করতে পারেন। তখনও খুব বেশি তাদের মধ্যে কথা হতো না। সাকিব ক্যাপ্টেন হয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু হবে না ভাই। বাট হোয়াট ইজ দ্যা রুল অব কোচ? উনি কি তাহলে? উনার কাজটা কি? উনি কি তামিম ইকবালের শত্রু? ন্যাশনাল টিমের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলবেন, এখানে সমস্যাটা কোথায়?

শেষে আসি, তামিম ইকবাল বলেছেন– প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আপনারা দেখেছেন অনেকেই হো ইজ দ্যা বেটার অপশন? যখন আপনি ছিলেন না, অবশ্যই বলেছেন। দ্যা বেস্ট অপশন ইজ ওয়ান অব দ্যা সাকিব আল হাসান। শেষমেষ তাকেই ক্যাপ্টেন বানানো হয়েছে। সাকিব আল হাসান তামিমের চোখে বেস্ট অপশন, যেমনটা আমাদের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে এবং তামিম ইকবাল এটাও বলেছেন– হয়তো আমি ক্যাপ্টেন না। কিন্তু আমার স্বপ্ন পরিবর্তিত হয়নি।

সর্বোপরি– এই বিশ্বকাপে আমরা ভালো করতে চাই। তার মানে কি সাকিবের নেতৃত্বে তামিম ইকবাল ভালো করতে চাই? সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্বগুলোকে আসলে নানাভাবে উসকে দেওয়া হয়। সম্পর্ক কিছুটা খারাপ হতেই পারে। কিন্তু এগুলোকে যেভাবে উসকে দেওয়া হয়, এটা ঠিক না। তবে এর থেকেও বাজে কাজ হচ্ছে– হেড কোচকে যে পেইড করা হয়। ক্রিকেটারদের দেখবাল করার জন্য, ক্রিকেট বোর্ড যে পে করে। অথচ তিনি একটা পক্ষ নিয়ে আছেন। যা খুবই দুঃখজনক।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

সারাবাংলা/এজেডএস

এস এম রাহমান জিকু সাকিব-তামিম ইস্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর