বাজারে সিন্ডিকেট চক্র নিষ্ক্রিয় হবে কবে?
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১০
সিন্ডিকেট নামক অদৃশ্য শক্তির হাতে বন্দি দেশের জনসাধারণ। যারা সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসেছে জনসাধারণের কাঁধে। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি চাই বাজারের এই সিন্ডিকেট অস্বস্তি থেকে। চাই স্বাভাবিক বাজার ব্যবস্থার গ্যারান্টি। এখন দেশের জনসাধারণের মনে একটাই প্রশ্ন, সরকার আদৌ স্বাভাবিক বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবে কিনা?
বাজারে নিত্যপণ্যের যোগান পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও যেন প্রতিনিয়তই চলছে রমরমা সিন্ডিকেট কারসাজি। দেশের সাধারণ মানুষের ভাষ্যে উঠে আসে, আমাদের দেশে থাকার সংকট, দুর্নীতির উল্লম্ফন, পদে পদে চুরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেট চক্র তৎপর। তারা আরো বলছে, দেশের বিভিন্ন কোম্পানিরা ছোটখাটো খামার গুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। এরা খামারে বাচ্চা দেয়, এরাই সবকিছু দেয় খামারে। আর মুরগি এদের কাছেই বিক্রি করতে হয়। এ কারণেই মূলত মুরগির দাম বাজারে অস্বাভাবিক হয়ে যায়। যা অনেক সময় দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যায়।
নিম্নআয়ের মানুষ যারা, তাদের আসলে নিজের ক্রয় ক্ষমতা থাকতে পারে বা না থাকতে পারে, নিতে পারে বা কিনতে পারে এই বিষয়গুলো অবশ্যই সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দেখা উচিত। বস্তুতপক্ষে বাজার ব্যবস্থায় এই সিন্ডিকেট বিষয়টা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় এতো বড় বিজ্ঞ লোক। উনি তো অবশ্যই এই বাজার চিত্রে নজর দিতে পারেন। উনি যদি বাজার ব্যবস্থায় তদারকি করতেন– তবেই কেবল তিনি বুঝতে পারতেন আসলে জিনিসপত্রের যে দাম, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এদিকে সাধারণ মানুষ বলছে– জনাব বাণিজ্যমন্ত্রী, উনি তো বাজারে আসে কম।
বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় অন্যতম একটা লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে– যাদের পকেটে প্রচুর পরিমাণে অর্থ থাকে এবং যাদের প্রচুর পরিমাণে টাকা রোজগার করার শক্তি থাকে, তারা সম্পূর্ণভাবেই মজুদজাত, গোডাউন জাত এবং গুদামজাত করে সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে যায়। যখন গুদামজাতকৃত ওই পণ্য বাজারে সম্পূর্ণ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তখন তারা এতো বেশি পরিমাণ মুনাফায় ছাড়ে যে- তাদের ওই লাভের টাকায় তারা বাইরের দেশে ঘুরতে চলে যায়।
মূলত আমরা যা বেতন পায়, আমরা যা ইনকাম করি, তার বেশিরভাগই চলে যায় বাসা ভাড়া এবং অন্যান্য এসব বাজার করতে করতে। আসলে আমাদের নিত্যদিনে এসব টানাপোড়নের পেছনে সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্রই দায়ী। যথাসম্ভব দ্রুতই এই সিন্ডিকেট চক্র ভেঙে দিয়ে দেশের জনসাধারণকে মুক্তি দিন।
সিন্ডিকেট চক্র বর্তমানে দেশের সবক’টি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যেকে কেন্দ্র করে তৎপরতা চালাচ্ছে। কিছুদিন পরপর একেকটা নিত্যপণ্যেকে টার্গেট করে বাজারকে অস্বাভাবিক করে তোলে তারা। কিছুদিন চাল, তেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মরিচ ইত্যাদির দামকে অস্বাভাবিক করে তোলে। আবার কিছুদিন দেখা যায়– ডিম, আলু, ডাল এসবের দামকে অস্বাভাবিক করছে। এভাবে প্রতিনিয়তই বাজার ব্যবস্থায় চলছে তাদের এই অপ-তৎপরতা।
সিন্ডিকেট চক্রের এই তৎপরতা থেকে চিনি, দুধও রেহাই পায়নি। একটা দুধ কিনতে বর্তমানে ১০০ টাকার উপরে গুনতে হচ্ছে। সরকার যদি এসব সিন্ডিকেট চক্রকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারে এবং বাজার ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে পারে, তাহলেই আমরা জনসাধারণরা মুক্তি পাবো।
সিন্ডিকেট চক্র যতই তৎপর হোক না কেন, এই বিষয়ে সরকারের কার্যকরী তদন্তে মনোনিবেশ করা উচিত এবং নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাকে খুবই নজরদারিতে রাখা উচিত। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই সিন্ডিকেট চক্রে সক্রিয় হতে না পারে। আসলে ব্যাপারটা এমন ভাবে দমন করা উচিত, যাতে আরো দশ জন দমন ব্যবস্থার বিষয়টা বুঝতে পারে। শাস্তির পরিমাণটা এভাবেই হওয়া উচিত– যাতে করে তারা বুঝতে পারে, দেশে আসলেই সরকার বলতে কিছু আছে।
আপনি আজকে ধরছেন, আজকে দাম কমিয়ে দিছেন। কালকেও ধরেন এরপর এরাই কমিয়ে দিবে। এই সিন্ডিকেট চক্র মূলত দেশের স্বার্থে কিছুই করছে না। এরা মূলত দেশ নষ্ট করার স্বার্থে কাজ করছে এবং সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে নানাভাবেই।
আমার কথা হচ্ছে– এই সিন্ডিকেট চক্রের যাদেরকে শনাক্ত করতে পারবেন, তাদের এমন ভাবে শাস্তি দিতে হবে যাতে তাদের কম করে হলেও এই শাস্তির কথা অন্তত ২০ বছর পরেও মনে থাকে। এই সিন্ডিকেট চক্রের শনাক্তকৃত অপরাধীদের এমনভাবে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে তারা শাস্তি জীবনের পরবর্তী সময়েও এই ব্যথা না ভুলে।
বর্তমানে বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে– যতোক্ষণ অভিযান, ততোক্ষণ সমাধান। অকপটেই আবারো এই সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। সর্বোপরি– এই সিন্ডিকেট চক্রকে প্রতিহত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একটা স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
সারাবাংলা/এসবিডিই
এস এম রাহমান জিকু বাজারে সিন্ডিকেট চক্র নিষ্ক্রিয় হবে কবে? মুক্তমত