Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জীবাশ্ম জ্বালানিতে আর কতো পুড়বে পৃথিবী?

এস.এম. রাহমান জিকু
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১০

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। এই শহরে আপনি যখন পথচারী। তখন ধরেন– আপনি একটু ক্লান্ত হয়ে রাস্তার ধারে কোথাও একটু ধরেন শীতল হওয়ার জন্য, একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য কোথাও দাঁড়ালেন। আদৌ কি আপনি কোনো ছায়া খুঁজে পান?

নাহ্। পুরোটা সময় আমাদের মাথার উপরে গনগনে সূর্য। প্রচন্ড রোদ। আবার হয়তোবা প্রচন্ড বৃষ্টির পর আপনি রাস্তায় বের হলেন, তখন কি দেখবেন? রাস্তার, পুরো রাস্তা জুড়ে অথৈ পানি। এই ধরণের চিত্র আমরা এখনই দেখা শুরু করেছি। তাহলে চিন্তা করেন তো, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর পর কী হতে পারে?

বিজ্ঞাপন

কতোটা ভয়ংকর হতে পারে আমাদের ভবিষ্যত? আমাদের প্রজন্মের ভবিষ্যত? কেন এই কথা বলছি? মনে হতে পারে যে, কথাগুলো শুনে এগুলো তো আমরা প্রতিদিনই ফেস করছি। আমরা তো প্রতিদিনই এটার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। নতুন করে এটা বলার আসলে প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু?

নতুন করে বলার প্রয়োজনীয়তা এজন্যই, এই দুর্ভোগটা প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে। আপনি দেখেন, এইবার এপ্রিলে আমরা সবাই বলছিলাম। রোজার মাসে বিশেষ করে, যে বৃষ্টি নাই। প্রচন্ড শুষ্ক এক ধরণের আবহাওয়া। রোজায় কখনো এতো কষ্ট হয় নাই। এবার রোজায় যে কষ্টটা হয়েছে। এইরকম একটা অবস্থা কিন্তু আমরা এইবার পার করেছি। আবার জুলাই মাসে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম একটা মাস ছিল, এইবারের জুলাই মাস। তার মানে কি? তার মানে হচ্ছে– একটু একটু করে জলবায়ুর যে নেতিবাচক পরিবর্তন সেটা কিন্তু আমরা অনুভব করতে পারছি।

হিমালয়ের বরফ গলছে। অনেক এলাকায় বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। অনেক এলাকা মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। এইরকম বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন, আবহাওয়ার পরিবর্তন আমরা কিন্তু প্রতিনিয়তই দেখতে পাচ্ছি। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে অন্যতম প্রধান কারণ যেটা, সেটা হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি। সোজা কথায় বলা যায় যে, জ্বালানি তেলের ব্যবহার।

বিজ্ঞাপন

আপনি আরো দেখেন– কলকারখানা, অফিস-আদালত। এছাড়াও আপনি সব কাজ শেষ করে যখন আপনার বাসায় আসেন, তখন আপনি এসিটা ছেড়ে টিভি দেখা শুরু করেন। এইযে সারাদিনের কার্যক্রমে পুরোটাই কিন্তু জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে নির্ভরশীল।

আমরা কিন্তু কখনো চিন্তা করি না যে, এক্ষেত্রে এই জ্বালানি তেলের ব্যবহারটাকে আমরা কমিয়ে আনতে পারি কিনা? বরঞ্চ আমরা দিনকে দিন আগ্রহী হচ্ছি, আরো কিভাবে এই জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়িয়ে দেশকে উন্নত করা যায়? কারণ আমরা চিন্তা করি, একটা দেশের উন্নতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি।

একই সাথে আমরা এটাও চিন্তা করি যে– যেই দেশ যতবেশি উন্নত, সেই দেশের জ্বালানি তেলের ব্যবহার ততবেশি। অর্থাৎ, যেই দেশ যতবেশি উন্নত, সেই দেশ গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এ ততবেশি অবদান রাখে।

কেউ কি ভেবে দেখেছে– যেই সামান্য উন্নতির জন্য আমরা যে পরিবেশের এতো বড় ক্ষতি করছি। সেই পরিবেশ একটা সময় আমাদেরকে কি ভয়ঙ্কর ভাবে গ্রাস করবে? তাহলে সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হচ্ছে যে, এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে উন্নত দেশের অর্থায়ন সবচেয়ে বেশি। উন্নত দেশ এখানে প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট দেয়। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় বড় ব্যাংকগুলো তারা প্রচুর অর্থায়ন করে এবং তারা চাই যে, এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দিন দিন বাড়ুক।

আমাদের দেশের সরকারকেও কিন্তু চিন্তা করতে হবে যে– বাংলাদেশের বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় অর্থাৎ এমন একটা জায়গায়, যেখানে এরই মধ্যে জলবায়ুর খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ১০,২০ বা ৩০ বছর পর দেশে জলবায়ুর পরিবর্তন কোন অবস্থায় যেতে পারে? তা এখন থেকেই আসলে চিন্তা করতে হবে। এখন থেকেই যদি আমরা সেই বিষয়টা চিন্তা না করি, তাহলে ২০ বছর পর গিয়ে সেটা সেটা চিন্তা করার মতো আর সময় থাকবে না।

এখন থেকে আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে এবং সে বিষয়টাকে এক্সিকিউট করতে হবে। বিভিন্ন ধরণের পলিসি তৈরি করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। যতোটা পারা যায়, আমাদের জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।

সর্বোপরি– এভাবেই যদি আমরা একটু পরিকল্পনা করে সামনের দিকে আগাতে পারি, তাহলে আমার কাছে মনে হয় যে– জলবায়ুর খুব নেতিবাচক প্রভাব থেকে হয়তো-বা আমরা, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনেকটা সুন্দর একটা পৃথিবী উপহার দিতে পারবো। তাই আসুন সবাই মিলে একসাথে আওয়াজ তুলি– জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প ব্যবহার খুঁজি এবং সচেতনতা গড়ে তুলি।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

সারাবাংলা/এজেডএস

এস এম রাহমান জিকু জীবাশ্ম জ্বালানিতে আর কতো পুড়বে পৃথিবী?

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর