Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

মো. রাকিব
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৩

আত্মহত্যা বা আত্মহনন হচ্ছে কোনো ব্যক্তির স্বেচ্ছায় নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়া বা প্রাকৃতিক নিয়মের বাহিরে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করা। আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে ইংরেজি Suicide শব্দ বা ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। তাই যখন কোন মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু না হয় সেটিকে আমরা আত্মহত্যা বলে থাকি। বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা যেন একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আত্মহত্যার পথে যারা হাঁটছেন এদের অধিকাংশই হচ্ছে তরুণ-তরুণী ও সাধারণ শিক্ষার্থী। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, “২০২৩ সালের মাত্র ৬ মাসে ২৩৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন”।

বিজ্ঞাপন

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, এই আত্মহত্যার পিছনে আসল রহস্য কি, কেনই বা তরুণ ও সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যাকে সমাধান হিসেবে বেছে নিচ্ছেন? চলুন কিছু সমীকরণ লক্ষ্য করা যাক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য ২০২২ অনুযায়ী, “বিশ্বজুড়ে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে এবং বছরে প্রায় ৮-১০লাখ মানুষ আত্মহত্যা করছে”। এবার আসুন বাংলাদেশের একটি সমীক্ষা লক্ষ্য করা যাক, “মার্চ ২০২০ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত বাংলাদেশে আত্মহত্যার সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৩৬ জন, প্রতিদিন গড়ে ৩৯ জন যা পূর্বের বছর গুলোর তুলনায় ৪৪.৩৫%বেশি। এগুলো কি আমাদের ভাবার বিষয় নয়? আবার বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, “দেশে গত বছর স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর”। ঐ সংস্থা থেকে আরো বলা হয়েছে, “গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ের ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ের আছে ১০৬ জন। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে শুধু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৪ জন”। সেখানে আত্মহত্যার তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি এর কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, “গত বছর আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটি অংশ ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ এই পথ বেছে নিয়েছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মান-অভিমানের কারণে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন অভিমানের সুরে। এ ছাড়া প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আবার আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪ জন, শিক্ষকের মাধ্যমে অপমানিত হয়ে ৬, গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় ৭, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন আত্মহত্যা করেছেন”।

বিজ্ঞাপন

তবে আমার মতে আত্মহত্যার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ গুলো হচ্ছে, পারিবারিক অশান্তি, অর্থনৈতিক সমস্যা। এগুলো ছাড়াও সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো সমান ভাবে দায়ী। ভাবার বিষয় বিশেষজ্ঞরা ৯০ ভাগ আত্মহত্যার পিছনে মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতাকে দায়ী করছেন। কারণ একজন শিক্ষার্থী যখন জীবনে অধিকহারে সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও ব্যাক্তিগত সমস্যায় ভুগেন তখনই সে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাছাড়া প্রেমে বিচ্ছেদ, বন্ধুদের উপহাস কিংবা সমাজের সমালোচনা ইত্যাদিকেও আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে আমি মনে করছি। তবে অনেকের বংশে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। চলুন লক্ষ্য করা যাক যে সকল শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকেন তাদের দিকে। এমন শিক্ষার্থীদের কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসবে যারা একাকী থাকে, যাদের সামাজিক মেলামেশা কম। আবার যে সকল শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত, যে সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিক হতাশা বিদ্যমান তারাও আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকে। এ সকল শিক্ষার্থী নিজেকে অন্য মানুষের সাথে তুলনা করে এবং নিজেকে ব্যর্থ মানুষ মনে করেন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, এরা খুব সহজে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সাজাতে না পেরে নিজেদের অযোগ্য ভেবেও এমন সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষার্থীরা মূলত মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন সম্যসায় পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আত্মহননের ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীদের আমরা কি স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে পারবো? বলা হয়ে থাকে, আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে ফিরে আসা এমন প্রতি চার জন মানুষের মধ্যে একজন একবছরের মধ্যে আবারও একই কাজ করতে পারে। আমরাই পারি তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। যারা নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন, কিংবা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আমাদের তাদের প্রতি নজর দিতে হবে। এ সকল শিক্ষার্থীদের সব সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাদের বেশি বেশি খোঁজা খবর নিতে হবে। তাদের বিভিন্ন সমস্যায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করতে হবে।

ভাবুন তো শিক্ষার্থীরা এ আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের কি বার্তা দিচ্ছে। তারা সমাজের কাছে এই বার্তা দিচ্ছে, তারা নিজের মনের সাথে পেরে না উঠেই আত্মহত্যা করছে। তাহলে আমাদের আত্মহত্যার প্রতিরোধে করণীয় কি? এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। আত্মহত্যার ভয়াবহতা নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বা হোক সেটা বিশ্ববিদ্যালয় সকল পর্যায়ে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক বিষয় পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার, যেখানে শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের কষ্টের কথাগুলো বলতে পারবেন। কারণ আত্মহত্যার আগে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন যদি একজন শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছে তার মন খারাপের গল্প বলার সুযোগ পান তবে আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে। তাছাড়া সন্তানের বিষয়ে বাবা মাকে অধিক সচেতন হতে হবে। সন্তান কে শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। পিতা-মাতা হিসেবে সন্তানকে সময় দেওয়া এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিও জোর দিতে হবে। তাছাড়া সন্তানকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনতে পারব।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ

সারাবাংলা/এসবিডিই

আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে মুক্তমত মো. রাকিব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর