Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমার আগমন, আমার বিদায়

রহমান মৃধা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৭

হঠাৎ আমি আমার মায়ের গর্ভে আসিনি, বাবা-মার সুন্দর এবং সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা ছিল। তাদের ভালোবাসার মিলনায়তনে আমি মায়ের গর্ভে আসন লাভ করি। তারপর দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী পার করেছেন বাবা-মা অনেক জল্পনা-কল্পনার মধ্য দিয়ে। আমি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে মাতৃগর্ভে বেড়ে উঠেছি। আমার আগমনে কী ঘটেছিল? আমার বিদায়ে এবং তারপর কী ঘটবে কখনও এর আগে ভাবিনি। আপনি কী ভেবেছেন বা আপনার প্রত্যাহার সম্পর্কে কল্পনা করেন? আমি কিন্তু করতে শুরু করেছি।

বিজ্ঞাপন

আমি আমার জন্মের আগ পর্যন্ত ঘুমিয়েছিলাম মায়ের পেটে। হঠাৎ আমার আগমনে সকলে খুশিতে হেসেছিল শুধু আমি কেঁদেছিলাম। সেই প্রথম আমার দেহে চেতনা এসেছিল। আমি আবার একদিন যেদিন আমার সময় শেষ হয়ে যাবে তখন ঘুমিয়ে যাবো, হয়ত কাঁদবে ভুবন, আমি জানব না। আমার ভাবনা আমি কি যেমনটি মায়ের গর্ভে ঘুমিয়েছিলাম ঠিক তেমনভাবে ঘুমিয়ে রইব, নাকি আমার চেতনা ফিরে পাবো, কবরে শাহিত হবার সাথে সাথে! তাই যদি হয় তাহলে পৃথিবীতে এখন কত পোকামাকড়, বিচ্ছু, সাপ সহ নাম না জানা জীবজন্তুর দেখা মিলছে, এর বেশির ভাগ জন্তুকে আমি ভয় করি, ঘৃণা করি। অথচ এরাই শেষে আমার শয্যায় মনের আনন্দে আনাগোনা করবে, যখন যেখানে ইচ্ছে মনের আনন্দে আমাকে তারা ছিড়েছুটে খাবে। আমি সব জানব, অনুভব করব অথচ কিছুই বলতে পারব না! কবরস্থান থেকে যখন সবাই এক এক করে চলে যাবে, আর পোকা-মাকড় থেকে শুরু করে চেনা-অচেনা মেহমান বিনা দাওয়াতে আমার চারপাশ ঘিরে পার্টি দিবে। আমাকে তারা খাবে, আমি সব জানবো যদি চেতনা ফিরে পাই, আর তা নাহলে আমি যেমন মায়ের পেটে ছিলাম ঠিক তেমনি থাকবো। মায়ের পেটে তো মাত্র ৯-১০ মাস ছিলাম, কিছুই জানতে পারিনি, কিভাবে কখন কী হয়েছিল। তবে মা বলেছেন মাঝে মধ্যে আমি নড়াচড়া করেছি। অথচ আমার আগমনে মায়ের অনেক কষ্ট হয়েছিল কিন্তু আমি তখন কিছুই টের পাইনি! পরে যখন মায়ের পেট থেকে বের হলাম তখন টের পেয়েছিলাম, কারণ তখন প্রথম চেতনা এসেছিল জীবনে।

বিজ্ঞাপন

যাই হোক আমার আগমনে আজান হলো, আমি ইসলাম ধর্মের রীতিনীতিতে বড় হতে শুরু করলাম। এখন ইচ্ছে করলেই সেই ধর্মকে উপেক্ষা করা যায় না। কারণ পৃথিবীতে আমার আগমনে সেই আজানের ধ্বনি শুনিয়ে আমাকে বরণ করা হয়েছিল। ঠিক আমার বিদায় বেলা সেই একই আজানের ধ্বনি দিয়ে আমাকে বিদায় দেওয়া হবে। আমি আযানের ধ্বনি শুনব না, জানব না। তবে যে রুহ বা চেতনা আমাকে জানতে সহায়তা করেছিল আমার আগমনে সেই রুহ যদি আমার মৃত্যুর পর সব জানতে পারে তবে কীভাবে আমার অন্ধকার জীবন মাটির নিচে কাটবে? এবং আমার কবরের জীবন তো সেই ৯-১০ মাসের জীবন নয়, এ জীবন তো হবে এক নেভার এন্ডিং সময়! কিভাবে কাটবে সে জীবন? পৃথিবীতে যারা থাকবে আমি চলে গেলে, তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে আমার বিদায় শেষে, কিন্তু আমার একাকিত্ব জীবন শুরু হবে—কত দিন, কত মাস, কত বছর, কত যুগ, আমি জানিনা তবে ভাবছি! আমি আমার ভাবনার জগৎ থেকে আমার মনের মাঝে যে চিন্তাটি কাজ ঢুকেছে সেটাকে শেয়ার করলাম। অনেকে হয়তো ভাবছেন আমি কেন হঠাৎ এসব ভাবনার জগতে! এত সুন্দর পৃথিবী অথচ তাকে ফেলে মাটির নিচের বাকি জীবনের চিন্তা এখন কেন? কারণ ডেস্টিনি এবং সেই সময় এত দীর্ঘ যে আমাকে বহু যুগ ধরে মাটির নিচে থাকতে হবে। যদি চেতনা না থাকে তাহলে তো কিছুই জানবো না, বুঝবো না, কিন্তু যদি চেতনা থাকে তবে কীভাবে আমি বসবাস করব সেখানে, এ প্রশ্ন উদয় হওয়া তো খুবই স্বাভাবিক! আমি আমার কৃষিক্ষেতে যখন কাজ করি মাটির সঙ্গে আমার অনেক মেলামেশার সুযোগ হয় সেই সুবাদে মাথায় অনেক প্রশ্ন আসে কিন্তু এখনও কোনো জবাব পাইনি। জানিনা আমার এই মুক্তচিন্তার একটি গ্রহণযোগ্য উত্তর পাব কিনা!

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই

আমার আগমন আমার বিদায়! মুক্তমত রহমান মৃধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর