প্রসঙ্গ আয়মান-মুনজেরিন: আমরা কি এভাবে ভেবেছি?
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০৯
সম্প্রতি আয়মান সাদিক ও মুনজেরিন শহীদের বিয়ের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের অতি উৎসাহী ও অতি আবেগী নেটিজেনরা এ নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন।
অনেকে ক্যাপশন দিয়ে লিখছেন “এতদিন যা ভাবছিলাম তাই হয়েছে”, “দীর্ঘদিনের গোপনীয় প্রেমলীলা”, “এবার বিদ্যাসাগরের জন্ম হবে”। কারও ব্যক্তিগতজীবন নিয়ে এমন ঘাঁটাঘাঁটির নজির শুধু বাংলাদেশেই দেখা সম্ভব!
আর বিবাহ একটা স্বাভাবিক ও ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে মাতামাতির কিছুই নেই। আর তাদের ঘর থেকে “বিদ্যাসাগর” হবে এমন ধারণাও অমূলক। আমাদের সমস্যা হলো, আমরা মানুষের ব্যক্তিগতজীবন নিয়ে বেশি মাতামাতি করি। অথচ নিজেকে নিয়ে সে মাতামাতি করি না—যে আমি নিজেকে কতটুকু গড়ে তুলতে পেরেছি! সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য আমি কী ভূমিকা রেখেছি?
তাদের প্রসঙ্গে অনেকে আবার ভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন। বিশেষ করে তাদের অবদানের প্রশ্নে। সেটাকেও অমূলক বলা যায় না। এই দুইজন নিঃসন্দেহে ভালো শিক্ষার্থী এবং সফল সংগঠক। বাংলাদেশের মানুষের “পালস” বুঝতে পেরেছেন বলে সফলকাম হয়েছেন। তাই অনেক ক্ষেত্রে “ওভাররেটেড” হয়েছেন। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড তারুণ্যের পরিবর্তনে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখেনি। কিন্তু আর্থিকভাবে তারা এবং তাদের প্রতিষ্ঠান অনেক লাভবান হয়েছে। অথচ তারা চাইলে অনেক কিছু করতে পারতেন, জাগরণ ঘটাতে পারতেন, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের তারুণ্যের যে ‘ইতিবাচক প্রত্যাশা’—সেটা পূরণ করতে পারতেন। তারুণ্যের জাগরণের গর্বিত অংশীদার হতে পারতেন।
এদেশের শিক্ষিত তারুণ্যের বিশাল একটা অংশ যে বেকার ও হতাশাগ্রস্ত —সে নিয়ে তারা ও তাদের প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারতো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বিভিন্ন অনিয়ম, অপব্যবস্থাপনা—যেগুলোর সার্বিক কর্মকাণ্ডের কারণে তারুণ্যের করুণ দশা—যেসব নিয়ে কাজ করতে পারতো। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে তাদের কথা বলতে বা কাজ করতে দেখা যায় না। একটা মেরুদন্ডসম্পন্ন দক্ষ প্রজন্ম তাদের হাত দিয়ে তৈরির সুযোগ ছিল।
সবকিছুর ঊর্ধ্বে যে দেশকে ভালোবাসতে হয়—সেটা থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে। ফলে বহুমাত্রিক সংকটে জর্জরিত আমরা। আমরা শুধু ব্যস্ত থাকি ব্যক্তিগত সুযোগ ও স্বার্থ সিদ্ধিতে। ভুলে যাই দেশের কথা, দশের কথা।
আমরা যার যার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে সচেতন থাকলে, দেশকে ভালোবাসলে, দেশের কল্যাণে কাজ করলে এদেশ প্রকৃতঅর্থে “সোনার বাংলাদেশ” হতে বেশিদিন লাগবে না।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এজেডএস