Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আবু আফজাল সালেহ: প্রকৃতি ও প্রেমের কবি

অলোক আচার্য
১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৫৩

এই সময়ে যারা দুর্নিবার গতিতে লেখালেখি করছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হলো ‘আবু আফজাল সালেহ’। যদি ঠিক এই সময়ের কয়েকজন কবির নাম নিয়ে আলোচনা করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই উঠে আসে ভবিষ্যতের বিপুল সম্ভাবনাময় কবি আবু আফজাল সালেহ’র নাম । নামটি নিঃসন্দেহে সাহিত্যনুরাগীদের কাছে অতি পরিচিত এবং প্রিয়। সাহিত্য নিজেই একটি বিশাল নদী। সেই নদীর বহু শাখা রয়েছে। কবিতা, গল্প, অণুগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছড়া, নাটক ইত্যাদি সাহিত্যের এক একটি শাখা। কোনো কোনো লেখক একটি, দুটি শাখায় বিচরণ করেন। সমৃদ্ধ করেন সেই শাখা। আবার কেউ দুইয়েরও অধিক সাহিত্য শাখায় অবদান রাখেন। আবু আফজাল সালেহ সেই দৃষ্টিকোণ থেকে একজন কবি, ছড়াকার, প্রবন্ধকার এবং এর সাথে তার আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি একজন কলামিষ্ট। দেশের প্রথম সারির পত্র পত্রিকায় তার কলাম ছাপা হয়। লিখেন সমাজের নানাবিধ সমস্যা, সম্ভাবনা এবং বাস্তবতা নিয়ে। এটা এক ধরনের দায়বদ্ধতা। কবিদের দায়বদ্ধতা থাকে। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তারা লিখেন। এমনকি কবিতাও দায়বদ্ধতা প্রকাশের একটি জায়গা। যদি সে কবিতা রোমান্টিকও হয় তবুও। দায় থাকে। অন্য কারও কাছে না হলেও নিজের আতœার কাছে, মনের কাছে আর সময়ের কাছে সেই দায়বদ্ধতা থাকে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই কবি আবু আফজাল সালেহ কবিতা লিখেন। সুতরাং আমরা কবি আবু আফজাল সালেহকেই আলোচনায় প্রাধান্য দিতে চাই। তার কবিতার বিষয়বস্তু, গভীরতা, শব্দ প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার দাবী রাখে। কবিতা হয় আত্মার টানে। আর আত্মার সাথে আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক। কবি আবু আফজাল সালেহ কবিতার অর্ন্তবৃত্তে ভাবের সমষ্টি অন্তর্দৃষ্টির বীজ বুনে চাষ করেছেন তার চিন্তা আর চেতনার কবিতার ফসল। কবিতার প্রতিটি শব্দ পাঠককে মুগ্ধ করে এবং গভীরতায় ভাবিত করে। কবিতা এক ¯্রােতসীনি নদীর ন্যায়, একবার ভাসলে উঠতে ইচ্ছে হয় না। কবির কবিতার শব্দ যদি পাঠককে না ভাবায় তাহলে কবিতার স্বার্থকতা থাকে না। অর্থাৎ কবিতায় দুর্বোধ্যতা নয়, কবিতায় থাকতে হয় গভীরতা। আজকাল যেমন কবিতাগুলো দুর্বোধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে, কবি আবু আফজাল সালেহ সেই অভিযোগের বাইরে। অর্থাৎ তার কবিতাগুলো দুর্বোধ্য নয়। তার কবিতাগুলো সময়ের প্রায় বিপরীতে বেশ সহজ এবং প্রাণবন্ত।

বিজ্ঞাপন

কবি আবু আফজাল সালেহ ১৯৮১ সালের ১৫ অক্টোবর চুয়াডাঙা জেলার মদনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ রেজাউল করিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধ ছিলেন এবং মা শাহিদা বেগম একজন গৃহিণী। তিনি একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। নিজ গ্রামের স্কুল থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পড়ালেখা শেষ করেন। এরপর দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং দুই কন্যা সন্তানের জনক। লেখালেখি তিনি শখের বশেই করেন। চাকরি ও পরিবারকে সময় দিয়ে যেটুকু সময় অবশিষ্ট থাকে সেটুকু তিনি লেখালেখির পেছনে দেন। চাকুরিজীবি এবং একজন কবি এই দুই-ই তার পরিচয়, তার নিজস্বতা। কাজের ফাঁকে এবং এমনকি কাজের মধ্যেও তার মাথায় ঘোরে কবিতার শব্দ। এটাই তার ধ্যান-জ্ঞান। সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় বিচরণ থাকলেও কবিতাই তার সাহিত্যের মূল শক্তি। কখনো তিনি প্রেমিক, আবার কখনো একজন পূর্ণ মানুষ। নারী, প্রকৃতি ও প্রেম তার কবিতার আয়নায় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার কবিতার ভাষা সহজ। তবে ভাবার্থ বিবেচনায় সহজবোধ্যতা অতিক্রম করেছে। তবে তা দুর্বোধ্য নয়। কবিতার ভাব, শব্দের ব্যবহার, উপমার প্রয়োগ ব্যত্যয় ঘটেনি। শব্দগুলো কবিতার প্রয়োজনে একটু ভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। কবি গভীরভাবে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি দেশের দর্শনীয় বহু স্থানেই ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণ সাহিত্যেও তিনি শক্তিশালী। প্রকৃতির সেই রুপও কবির কবিতায় গাঁথা রয়েছে। প্রৃকতি ও প্রেম তার কবিতায় অনবদ্য। কবির ’মেঘ হয়ে উড়ে যেতে চাই’ কবিতায় লিখেছেন- ‘মেঘেরা ওড়ে, দেশ দেশান্তরে/চোখের জল নিয়ে, আনন্দাশ্রু নিয়েও/সবুজ মোড়া পাহাড় তাদের পছন্দ/সেখানেই জিরিয়ে নেয় একটু/গা ভিজিয়ে দেয়ও। এই যে প্রকৃতিকে তুলে আনার ক্ষমতা তা সকলের থাকে না। অনেকেই ঘুরে বেড়ান, প্রকৃতির কাছে যান কিন্তু সকলেই কবিতায় তুলে আনতে পারেন না। এটা কবির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। কবির কবিতায় প্রেম এসেছে, ব্যর্থতাও এসেছে। না পাওয়ার অনুতাপেও কবি জ্বলেছেন। কবিদেরও জ্বলতেও হয়। কবির ’নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছি তোমাকে না পেয়ে’ কবিতায় লিখেছেন- ‘তুমি ছিলে প্রিয়জন, আপন/ভরা চৈতিফসলের মাঠ, সোনারাঙা রোদ/বিকেলের নরম ঘাম উতলা মন… তাকিয়ে তাকিয়ে থেকে রক্তচক্ষু হয়ে/নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ/তোমাকে ডেকে না পেয়ে। প্রকৃতিও নারী হয় আবার নারীও যেন প্রকৃতি হয়ে ওঠে। তার ‘তোমার গালে বৃষ্টির ছাপ এঁকে দেবো’ কবিতায় লিখেছেন, ‘জানালার কাঁচে বৃষ্টিধোঁয়া/ বৃষ্টিফোঁটা, বৃষ্টির পরশ -রেশমি কাপড়ের/কৃষ্ণচূড়ার সবুজ ফাঁকে জোড়া টিয়ার বৃষ্টি-স্নান/ শান্ত নদীর বহমান অবিরাম। প্রকৃতিই কবিতা আবার প্রকৃতিই প্রেম। তার ভ্রমণকালীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো নান্দনিকভাবে কবিতায় উঠে এসেছে। কবির ‘সাতটি রং একটি কবিতা’ কবিতায় লিখেছেন’ নীলাচলে সবুজ পাহাড়চূড়ায় পারিজাত রক্তকরবী/এলিয়ে দেওয়া নীলাম্বরীর আঁচলে কালো মেঘ/বেগুনিচুড়ির রুনঝুন, কমলা ঠোঁট/ফুরফুরে হাওয়ায় দুরন্ত শৈশবের রঙিন ঘুড়ি/নীল নীল খুপড়ি, বান্দরবান -দূরের খাগড়াছড়ি। আবার তার ’কল্লোলে ভরাপূর্ণিমা’ কবিতায় লিখেছেন ’কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত/কল্লোলে ভরাপূর্ণিমা দোল খায়/সপ্তর্ষি নেমে আসে জলতরঙ্গে/জল থেকে হৃদয়ে হৃদয়ে/তার মুখমন্ডল যেন ন্যাড়া সোনালি তট। কখনো কখনো প্রেম ছাড়িয়ে যায় মানব স্তর। তার প্রেমের স্থান যে সৌন্দর্যের অনেক উঁচু স্তরে সেকথা কবিতার স্তবকে ফুঁটে ওঠে। কবির ’পরম্বপরা’ কবিতায় এক অন্য সৌন্দর্যের কথা বলে। তিনি লিখেছেন ’ তোমার আঙুল আমার আঙুলে মিশে আছে/আঙুলের কলাগুলো তাদের নিজস্ব সঙ্গীত/আমাদের হাড়ের চেয়েও পুরানো/প্রয়োজনই পথ তৈরি করবেই/তোমার তৃষ্ণা নিভিয়ে দিতে পারে ঈশ^রের আইন। কবি প্রকৃতির সাথে মিশেছে নিবিড়ভাবে। খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন পাহাড়ের সবুজাভ দৃশ্য, ঝরণার কলকল শব্দ, সাগরের গর্জন, বিপুল বৃক্ষরাশির শ্যামল আচ্ছাদন। এসব নিয়েই তিনি কবিতা লিখেছেন। একবার নয় বারবার। কবির ফিরে যাওয়ার আকুতিও রয়েছে সেসব কবিতায়। কবির ’প্রতিবার দেখি নতুনভাবে’ কবিতায় তিনি লিখেছেন ’সিলেটি –পাহাড় বেয়ে উদ্দাম ঝরণাধারায়/চা-বাগানের সবুজ ঢেউয়ে/রেমা-কালেঙ্গার বনফুলে, প্রজাপতির ছোট্ট ডানায়/তোমারই অনুভব। এভাবেই কবি লিখে চলেছেন নিয়মিতভাবে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা,লিটল ম্যাগ ও সাহিত্য পোর্টালে। কবি আবু আফজাল সালেহ’র প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিনটি। বারবার ফিরে আসি (২০১৮) ও বলেই ফেলি ভালোবাসি (২০২২) দু’টি কবিতার বই এবং তার ছড়া গ্রন্থের নাম ’ছড়ায় ছড়ায় উৎসব’ (২৯১৮)। অল্প সময়ের মধ্যেই কবি বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর থেকে চর্যাপদ একাডেমি প্রদত্ত দোনাগাজি পদক (২০২১), প্রিয় বাংলা লেখক সম্মাননা ২০২২, সাহিত্যরস সম্মাননা-২০১৮ এবং দৈনিক মানববার্তা সম্মাননা-২০১৮। এদেশের সাহিত্য ভান্ডার তিনি সমৃদ্ধ করতেই এসেছেন এটা তার কর্মস্পৃহা প্রমাণ করে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য আবু আফজাল সালেহ: প্রকৃতি ও প্রেমের কবি মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

অটোরিকশা সংকটের সমাধান কোথায়?
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৬

অভিনয় ছাড়তে চেয়েছিলেন অভিষেক
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৬

আরো

সম্পর্কিত খবর