Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঔষধের দাম বৃদ্ধিতে ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের

মো. রাকিব
১ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৯

দিনে-দিনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের ব্যাক্তিগত আয় বৃদ্ধি না পেলেও ক্রমান্বয়ে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সমূহের। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষরা আছেন চরম অসুবিধায়। কিন্তু দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে-দিতে আরেকটি বিষয় আমাদের নজরের বাহিরেই থেকে যাচ্ছে। যে বিষয়টি ভেবে আমি রীতিমতো আঁতকে উঠছি। আর সেটি হলো ঔষধের অনিয়ন্ত্রিত হারে দাম বৃদ্ধি। একটা বিষয় কি জানেন,আমরা যখন নিত্য প্রয়োজনীয় কোন দ্রব্য ক্রয় করতে যাই তখন সেখানে মোটামোটি দাম কষাকষির সুযোগ থাকে। যেমন ধরুন দোকানদার এক কেজি আলুর দাম ৫০ টাকা চাইলো আমি ৪৫ টাকা বললাম।কিন্তু আমরা যখন প্রয়োজনীয় কোন ঔষধ ক্রয় করতে যাই সেখানে দাম কষাকষির কোন সুযোগ থাকে না বা ঔষধ নিয়ে দরকষাকষির কোন রীতিনীতিও আমাদের দেশে প্রচলিত নেই। আমরা মনে করি ঔষধের দাম নিয়ে আবার কিসের আলাপ। অথচ দোকানদার ঔষধের মূল্য ঠিকঠাক রাখছেন নাকি বেশি রাখছেন সেটা বুঝারও কোন রাস্তা নেই।

বিজ্ঞাপন

আমরা প্রতিদিন নানান ধরনের অসুস্থতা অনুভব করি। আর এই সকল অসুস্থতার মধ্যে যেগুলো কে আমরা স্বাভাবিক অসুস্থতা হিসেবে নেই সেগুলো হলো জ্বর, শর্দি কাঁশি,মাথা ব্যথা,পাতলা পায়খানা, শরীর ব্যাথা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং কাটাছেঁড়া জাতীয় সমস্যা গুলো ইত্যাদি। এই অসুখ গুলো হলে আমরা সাধারণত পাড়ার ফার্মেসী গুলো থেকে ঔষধ আনিয়ে খাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সকল স্বাভাবিক রোগের ঔষধ গুলোর দাম বর্তমানে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলছে। কয়েকবছর আগেও এক পাতা জ্বরের নাপা ঔষধ কিনতাম ১০ টাকায় বর্তমানে দাম বেড়ে ১৫ টাকা। ২৫ টাকার নাপা সিরাপ এখন ৩৫ টাকা। ১ টাকার পাতলা পায়খানার মেট্রিল ঔষধ এখন দাম বেড়ে ২ টাকা হয়েছে। ৫ টাকা দামের গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের দাম বেড়ে বর্তমানে ৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আমরা স্বাভাবিক কাটাছেঁড়ায় এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাই সাধারণত বড় কোন ইনফেকশন হতে বাঁচার জন্য। কিন্তু পূর্বে ৫০০ এমজি এর একটি এন্টিবায়োটিক যেখানে গড়ে ৩৫ টাকা ছিল বর্তমানে তার দাম বৃদ্ধি পেয়ে গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে। ৫ টাকা দামের পানি শূন্যতা পূরণ করা স্যালাইনের দাম বেড়েও ৬ টাকা হয়েছে। তবে আয় বাড়েনি দেশের সাধারণ মানুষের। এছাড়াও দাম বেড়েছে সকল জটিল রোগের ঔষধেরও। প্রেসারের সেকরিন ২ ঔষধের প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম আগে ছিল ৯ টাকা আর বর্তমানে ১০ সেটি টাকা হয়ে গেছে। এভাবে ৬০ টাকার ফিক্সকার্ড ৮০ টাকা, ১২৬ টাকার সিলডিপ-১০ হয়েছে ১৪০ টাকা এবং এক পাতা বিসলল ৫ এর দাম ১৩০ থেকে ১৬০টা হয়েছে। একই ভাবে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের দাম। ক্যালসিয়ামের ২১০ টাকার ক্যালবোডি বর্তমানে ২৪০ টাকা, ২৪০ টাকার বোস্ট ২৭০ টাকা, কৌটা নিউরো-বি ট্যাবলেটের দাম ২৭০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩০০টাকা। এগুলো তো আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে বলেছি। একবার চিন্তা করুন যেসব ঔষধ গুলোর পূর্বেই অনেক দাম বর্তমানে যদি আরো বাড়ে তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ওষুধের দাম বাড়ার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি , কাঁচামাল আনায়নে যাতায়াত খরচ বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। একটি চরম সত্য হলো আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে একচেটিয়া প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। যদি ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতির কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় তাহলে রোগী এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উভয়ের স্বার্থই রক্ষা হতো। একটি সমীকরণে দেখা যাচ্ছে দেশের সকল নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধের দাম শতকরা ১০% থেকে ৭০ % পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য খুবই হতাশ হওয়ার বিষয়।

কিন্তু না এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার মানুষ কোথায় সবাই আছে যার যার চিন্তা নিয়ে। একটা ঘটনা শেয়ার করি, আমি ঔষধ আনতে গেলে সব সময় মোটামোটি সব ঔষধের দাম কিরকম বাড়ছে এই আপডেট জানার চেষ্টা করি। ঔষধের দাম সমন্ধে আমার ভালো ধারণা আছে। কারণ এইচএসসিতে থাকাকালীন মেজো ভাইয়ার সাথে ফার্মেসীতে প্রায় দু’বছর থেকেছি। যে বিষয়টি বলতে নিয়েছিলাম, আমি ঔষধ আনতে গেলাম সেখানে দেখি ৬-৭ বছরের একটা বাচ্চা এসেছে ওরস্যালাইন নেওয়ার জন্য। তো সে স্যালাইন নিয়ে দোকানদারকে ৫ টাকা দিলো। দোকানদার তখন এক টাকার জন্য স্যালাইন দেইনি। এভাবে কতো মানুষ যে প্রতিদিন এমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা আর নাই বললাম। আপাতদৃষ্টিতে ১-২ টাকা ঔষধের দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে কিছু মনে না হলেও আপনি যখন এটি সামষ্টিকভাবে হিসাব করবেন তখন আপনিও আঁতকে উঠবেন। পরিশেষে বলতে চাই, ঔষধ মূল্যের লাগাম ধরতে সরকারের সুদৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে এভাবেই যদি ঔষধের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে সেটি সাধারণ মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঔষধের দাম বৃদ্ধিতে ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের মুক্তমত মো. রাকিব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর