আলোময় হতে অন্ধকার
৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৮
২৮ শে অক্টোবর বাংলাদেশের জন্য আলোময় একটি ঐতিহাসিক দিন। সেদিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা’র অসম সাহসিকতায়, অকুণ্ঠ নিষ্ঠায় এবং অপ্রতিরোধ্য অপরাজেয় উন্নয়ন মানসিকতার ফলস্বরূপ জাতি পেল বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম ও দীর্ঘতম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সর্বাধুনিক টানেল। পুরো জাতিরই হেসে ওঠার দিন ২৮ শে অক্টোবর। বঙ্গবন্ধু টানেল হলো সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সম্ভাবনার নতুন প্রতীক।
ঠিক যেই সময়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্ভোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ইতিহাসে গর্ব করে মাথা উঁচু করে দাড়াচ্ছে একই সময়ে বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কেবল স্বাধীনতা অর্জনই শেষ কথা নয়, বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আরও কঠিন। কারণ স্বাধীনতার শত্রুরা কখনােই অর্জিত স্বাধীনতার স্বাদ নির্বিঘ্নে ভােগ করতে দেয় না। স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীনতার বিপক্ষের শত্রুরা স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করার জন্যে তৎপর হয়ে ওঠে। এ ধরনের শত্রু দেশের ভেতর ও বাইরে বিরাজমান থাকে।
২৮ শে অক্টোবর দেশবাসী যখন বিশ্বে নিজেদের জানান দিচ্ছে একই সময়ে দেশ-বিদেশের শত্রুরা একত্রিত হয়ে রাজধানীজুড়ে তান্ডব চালায়। পূর্বপরিকল্পিত কর্মূচির অংশ হিসেবে ২৮ শে অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করছিল বিএনপি। কিন্তু সমাবেশের নামে বিভিন্ন পয়েন্টে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে দিনভর সহিংস আন্দোলন বাস্তবায়ন করেছে বিএনপি। কাকরাইল মোড়ে বৈশাখী পরিবহন ভাঙ্গচুর, পুলিশের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে গাড়ি ভাংচুর, ককটেল বিষ্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ, কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ, নাইটিঙ্গেল মোড়ে বাসে আগুন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচে অগ্নিসংযোগ, কমলাপুরে কয়েকটি বসে অগ্নিসংযোগ, একাধিক পয়েন্টে গাড়ি ভাংচুরসহ একজন পুলিশ সদস্য এবং একজন আনসার সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করায় ৩০ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা করে ২৮ তারিখে। ২০১৩-১৪-১৫ সালের পর আবারও বিএনপি প্রমাণ করেছে সেদিন সময় বদলালেও চরিত্র বদলায়নি বিএনপি।
রাজধানীজুড়ে তান্ডব চালিয়ে থেমে থাকেনি তারা, তাদের ক্ষুধা রাজধানী দিয়ে ভরেনি লাগবে সারা দেশ তাই ২৯ শে অক্টোবর ডাক দেই সারাদেশে হরতালের। ২৯ অক্টোবর ‘সারাদেশে’ নৈরাজ্য চালিয়েছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ হরতালের নামে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, ফরিদপুর, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ ও লক্ষীপুর জেলায় সহিংসতা করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে সারাদেশে অন্তত ৩ জন নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক। যানবাহন ভাংচুর করা হয়েছে ২০টি। এরমধ্যে রয়েছে পুলিশের বাইক, সাধারণ চালকের অটোরিক্সা, মোটর বাইকসহ এক ইউএনওর সরকারি গাড়ি। সারাদেশে ককেটল বিস্ফোরণের ঘটনাসহ রাজধানীর ডেমরায় বাসে দেওয়া আগুনে ঘুমন্ত অবস্থায় নাঈম নামে চালকের এক সহকারী নিহত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাব নেতা সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়াকেও বিএনপির সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে।
সারাদেশে তান্ডব চালিয়ে যখন দেশের সকল জনগণ এদের ঘৃণা করছে, তখন তাদের সকল পরিকল্পনা মরে যায়। তখন পরিকল্পনা নেই দেশ এবং দেশের জনগণকে একেবারে অন্ধকারে দিকে নিয়ে যাওয়া। ডাক দেয় তিনদিনের সারাদেশে অবরোধ।
৩০শে অক্টোবর হাজার হাজার ইমামের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে ‘জাতীয় ইমাম সম্মেলন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল বুয়াইজান। সেদিন ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনসহ তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৫৬৪ মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম একজন স্মরণীয় শাসক হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আর সেই সময়ে সারাদেশে অবরোধের নামে তান্ডব চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত।
বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধ চলাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ৩৫টি যানবাহনে আগুন দিয়েছে। এর মধ্যে বাস রয়েছে ২০টি। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিনেবিএনপি সন্ত্রাসীদের দুইজন নিহত হয়। ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে যানবাহনে আগুন এবং দুইজন পুলিশকে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় দিনে সারাদেশে কয়েকটি বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপি। একই ভাবে পার করেছে বিএনপির ৩য় দিনের অবরোধও।
লিখতে গিয়ে কত হালকাভাবে লিখে ফেললাম বাসে আগুন দিয়েছে, কিন্তু যে বাসে আগুন দিয়েছে সেই বাসের মালিক এবং চালক জানবে কত কষ্ট হচ্ছে তাদের। যেই যানবাহনটি চালিয়ে পরিবার চালাতো, সেই যানবাহনটিকে নিজের চোখের সামনে পুড়তে দেখছে- এর চেয়ে ভয়ংকর স্মৃতি জীবনে আর কিছু হতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন চালকের আর্তনাদের ভিডিও দেখে তা একটু হলেও অনুধাবন করতে পারছি। বিএনপির এই হরতাল-তিন দিনের অবরোধ দেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন অর্জন নাই এদের। আবারও দুই দিনের অবরোধের ডাক দিয়েছে এরা।
তবে কি এইবার সত্যি সত্যি এরা যতক্ষণ দেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাবে? নাকি এইভাবে তান্ডব চালাবে! দেশ কি একাই তাদের?
১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদদের বিনিময়ে নয় মাস যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে অন্ধকারে ফিরে যাবার জন্য নয়, আলোময় থাকার জন্য এই দেশ স্বাধীন করা হয়েছে। দেশ আমাদের সকলের সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই