Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনৈতিক স্বার্থে পোশাকশিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র

অজামিল দেব বর্মন
১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৯

নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই তৈরি পোশাক দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত হিসেবে উঠে আসে। তখন পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৬২৭ টাকা। ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমবারের মতো মজুরি বোর্ড গঠন করে। সেই বোর্ড ন্যূনতম মজুরি ৯৩০ টাকা নির্ধারণ করে। তারপর ১২ বছর ন্যূনতম মজুরি আর পরিবর্তন হয়নি। ২০০৬ সালে মজুরি বৃদ্ধি করে ১৬৬২.৫০ টাকা; ২০১০ সালে ৩০০০ টাকা করা হয়। জিডিপিতে পোশাক শিল্পের অবদান ১১%। রফতানি আয়ের ৮১ শতাংশ আছে এই খাত থেকে। পোশাক খাতে তিন দশকে রপ্তানি বেড়েছে ২৪ গুণ, মজুরি বেড়েছে ১৩ গুণ। ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে– এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে আন্দোলন শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। পরে তা আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চলমান শ্রমিক বিক্ষোভে গত রবিবার পর্যন্ত আশুলিয়া, গাজীপুর ও উত্তরায় ১৩৭ পোশাক কারখানায় ‘বন্ধের’ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শুধু গাজীপুরেই ১২৩ কারখানা ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৮ জনকে। নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার পরও নিরীহ শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে ৩য় পক্ষ বিশেষ করে বিএনপির নাম বার বার করে উঠে আসছে সামনে।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করতে রপ্তানিতে সবচেয়ে অবদান রাখা এই খাতকে বেছে নিয়েছে বিএনপি এবং তার দোসররা। ৭ নভেম্বর মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করছে শ্রমিকদের একটি অংশ। এই প্রেক্ষাপটে মালিকরা কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের এপ্রিলে পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। ৬ মাসের মধ্যে মজুরি নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নির্ধারণ করতে নভেম্বর পর্যন্ত সময় লেগেছে। এর কারণ আমাদের দেশে ট্রেড ইউনিয়ন নেই, তাই এত সময় লেগেছে। এই সময়ের মধ্যে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধি এবং সরকারের মধ্যে অন্তত ছয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকার গত ৭ নভেম্বর মূল মজুরি ৫৬.২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করেছে। শ্রমিকদের দাবি ছিল বছরে ১০% মজুরি বৃদ্ধির যেটা সরকার ৫% বৃদ্ধি করেছে। যা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সরকার ৫ বছরের জন্য পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করে সরকার। যা এই বছরের ৭ নভেম্বর আবার বৃদ্ধি করা হল।

১৯৮৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬ বার মজুরি নির্ধারণের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে । শ্রমিকরা প্রতিবার ন্যূনতম মজুরি দাবি করেছে। কখনও বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি কত হবে তা দাবি করেনি। এবারই প্রথম বিএনপি ২৩ হাজার টাকা মজুরি দাবি করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই বিএনপির অ্যাক্টিভিস্ট। কুষ্টিয়ার এক বিএনপি নেতা গাজীপুরের কোণাবাড়িতে এসে শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছিলেন সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও দেখে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে । এছাড়া মিরপুর, গাজীপুর ও আশুলিয়া এলাকায় স্থানীয় বিএনপির নেতাদের শ্রমিকদের উস্কানি দিতে দেখা যাচ্ছে। তাদের কর্মী সমর্থকরা এসব হামলায় অংশ নিচ্ছে।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোনাবাড়ীর তুসুকা কারখানা। অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করে। কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এমতাবস্থায় কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তুসুকা কারখানার পরিচালক মো. তারেক সমকালকে বলেন, কারখানায় ভাঙচুর করে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। এসব কাজে আমাদের শ্রমিকরা জড়িত ছিল না। অনেক বহিরাগত ছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে প্রশাসন।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, গত ৬ দিনে ক্ষতি ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বড় ক্ষতি; সরকার যেখানে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে এই অবরোধ আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। ২৮ অক্টোবর বিএনপি পুলিশ হত্যা করে এবং জানমালের যে ক্ষতি সাধন করেছে তাতে তাদের পক্ষে সরকার পতন ঘটানো অসম্ভব তাই তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এই পথ বেছে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় কমায় সরকার একটু হলেও মুদ্রাস্ফীতির চাপে থাকার সুযোগে সরকারকে চাপে রাখতে তৈরি পোশাক খাতকে টার্গেট করে এইসব করাচ্ছে বিএনপি।

বিএনপির সাথে সুর মিলিয়ে বামদলগুলোও দেশ বিরোধী এসব কাজে সঙ্গ দিচ্ছে। বিএনপি গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে পুলিশ এবং কারখানায় আক্রমণ করাচ্ছে তাদের ইচ্ছা যদি কোন নিরীহ শ্রমিক মারা যায় তাহলে এটাকে তারা ইস্যু করে সরকার পতনের বৃহত্তর ডাক দিতে চাচ্ছে। কারণ রাজপথে আন্দোলন করার অধিকার কিংবা সাহস কোনটিই বিএনপির নেই এখন। পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা আমেরিকা, তারা আবার স্যাংশন দেয়ার জন্য বসে আছে। বিএনপি এই খাতে অস্থিরতা তৈরি করে তাদের আমেরিকান এজেন্টদের দিয়ে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার যেন আমেরিকা ও বিদেশিদের চাপে বিএনপির অযৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর