Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইস্টিশনের রেল গাড়ীটা

আনোয়ার হাকিম
১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:০৭

ছেলেবেলায় রেল ছিল আমাদের কাছে স্বপ্নের মত। স্টেশনের বারোয়ারি কায়কারবার ছিল চলমান চলচ্চিত্রের মত যুগপৎ চিত্তাকর্ষক ও হতাশাব্যাঞ্জক। স্টেশন মানেই প্রয়োজনীয়- অপ্রয়োজনীয় একগাদা লোকের সমাগম। পাগল, ভবঘুরে, বখাটে ও সারমেয়দের দৌরাত্ম আর কুলিদের আগ্রাসী পদচারণা। স্টেশনের কর্ম চাঞ্চল্য চব্বিশ ঘন্টার, কোন বিরতি নেই।

তখন এখনকার মত পণ্য পরিবহনের এত ব্যবস্থা ছিলো না। রেলই ছিলো ভরসা। প্রতিটি ট্রেনের সাথে আলাদা করে মালবাহী বগি যুক্ত করে দেওয়া হত। বুকিং অফিসগুলো ছিলো রমরমা। স্টেশনে সাধারণ বিশ্রামাগার হিসেবে যা ছিলো তার বেশির ভাগই থাকত তালা মারা। বিশেষ কেউ এলে বা গেলে, এলাকার কেউকেটা হলে সেগুলো খোলা হত। সেখানে আসবাব হিসেবে বসার ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু থাকত না। ধুলো, ময়লা আর আবর্জনার কারণে সেখানে বসে থাকা যেত না বেশিক্ষণ। এর সাথে একটা প্রক্ষালনাগার সংযুক্ত থাকত। ভুলেও কেউ তাতে উঁকি দিত না। দিলে কয়েক দিনের মত খাওয়া হারাম হয়ে যেত। মধ্যম শ্রেণীর স্টেশনে দ্বিতীয় শ্রেণীর বিশ্রামাগার নামে বসার ব্যবস্থা থাকত। সেটা মানে অতি সাধারণ। বহুল ব্যবহার ও অপরিষ্কার থাকার কারণে বাধ্য হয়ে বসা ছাড়া উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম বা স্থায়ী চা স্টলই ভালো। জেলা শহরের স্টেশনে প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগার ছিলো। সেটা মোটামুটি মানের।

বিজ্ঞাপন

স্টেশন মাস্টারের রুম প্রায়শই ফাঁকা পরে থাকত। সহকারী স্টেশন মাস্টারের রুমে রেলের নানা প্রকার লোকের ভীড় থাকত। সেখানে কে কর্মকর্তা, কে কর্মচারী আর কে পাবলিক বুঝার উপায় থাকত না। রেলের কর্মচারী মানে ইউনিয়নের লোক। তারা অতিশয় ক্ষমতাবান। ট্রেনের যখন খবর হত তখন ঝুলন্ত লোহার দন্ডে হাতুড়ি পিটিয়ে ট্রেনের আগমনী বা প্রস্থানের শব্দ-সংকেত দেওয়া হত। বড় স্টেশন গুলোতে রেলের আগমনী বা নির্গমনের খবর মাইকে ঘোষণা করা হত। যার বেশিরভাগই বুঝা যেত না। ট্রেন যখন স্টেশনের প্ল্যাাটফর্মে ঢুকত তখন রেলের একজন নিম্ন পদস্থ কর্মচারী লোহার তারের একটা বিশাল রিং প্ল্যাাটফর্মে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। ইঞ্জিন থেকে ড্রাইভার তা গ্রহণ করত আর অনুরুপ আরেকটা রিং স্টেশনে ফেরত দিত। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এগুলোই দেখতাম আর কৌতুহল মিটাতাম। স্টেশনেই বগি জোড়া লাগানো আর বিচ্ছিন্ন করার কাজ হত। সেগুলোও বিস্ফারিত চোখে দেখতাম। তখন ট্রেনের লেট যেন ছিলো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। যারা স্টেশনের আশেপাশে বাড়ীঘর করে থাকত তাদেরকে বড়ই সৌভাগ্যবান মনে হত। আহা! আমাদের বাসাও যদি এমন সংলগ্ন হত। তাহলে স্টেশনে এত অপেক্ষা করতে হত না । প্রায় সময়েই অপেক্ষা দীর্ঘতর হত। তখন চা স্টল আর বুক স্টল ছিলো কালক্ষেপনের প্রকৃষ্ট জায়গা। চা স্টলে বাজত পুরোনো দিনের জনপ্রিয় গান আর চলতি সময়ের সিনেমার হিট গান। বড় বড় স্টেশনে একাধিক প্ল্যাটফর্ম থাকে। মূল প্ল্যাটফর্ম বাদে অন্য প্ল্যাটফর্ম গুলোতে মূলতঃ মালামাল গচ্ছিত থাকত। সেখানে থাকত পাগল আর দেহপসারিনীর দল। তাদের ঘিরে থাকত একদল কৌতুকপ্রিয় লোক আর নাগর-খদ্দের।

বিজ্ঞাপন

রেলের দৈত্যকার ইঞ্জিনের ফোঁস ফোঁস শব্দ যুগপৎ ভীতি ও বিস্ময় জাগাতো। ইঞ্জিন চালককে মনে হত সবচেয়ে ক্ষমতাবান। কিন্তু তার বেশভূষা আর ক্রমাগত বিড়ি ফুঁকা দেখে তাকে হতদরিদ্র মনে হত। ভাবতাম এত বড় দৈত্যাকার রেল যিনি চালান তিনি এত গরীব কেন? শিশু মন বাস্তবের ধারাপাত জানত না বলে তার জন্য বড় মায়া হত। বিবর্ণ, ক্ষত-বিক্ষত রেলের বগি গুলোকে মনে হত স্বপ্ন যাত্রার বাহন। বসার বেশির ভাগ সীট ছিলো কাঠের। কিছু ছিলো কুশনের। তার বেশির বাগই থাকত ছিড়া, ফাটা, কাটা। তা থেকে ছোবড়া দৃশ্যমান হত। সেই সাথে ছাড়পোকার উপস্থিতিও হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যেত। গাদাগাদি মানুষ বাক্সপেটরা সমেত আন্ডা-কাচ্চা-বাচ্চা সহ সহযাত্রী হয়ে চলেছে যে যার গন্তব্যে। কেউ বিড়ি ফুঁকছে, কেউ গপসপ মারছে, কেউ উচ্চস্বরে গান গাইছে, কেউ কেউ ঘেউ ঘেউ ঢংয়ে কাইজ্যা-ফ্যাসাদও করছে। তখন সীটে কোন নম্বর ছিলনা। সরেজমিনে দখলই ছিলো স্বীকৃত। সীটে যারা বসতে সফল হত তারা নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করত। তাদের ঠাট-বাটই ছিলো আলাদা। এদের মধ্য থেকে মাঝ পথে কেউ নেমে যেতে উদ্যত হলে সেই শূন্যস্থান পূরণে রীতিমত যুদ্ধ লেগে যেত। তখন মহিলা, বৃদ্ধ আর অসুস্থদের প্রাধান্য দেওয়া হত। তখন সম্মান বলে একটা বিষয় অগ্রজদের প্রাপ্য হক বলে মনে করা হত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শূন্যস্থান পূরণের উদ্দেশ্যে যুদ্ধরতরা আপোষে সেই সীট তাদের অনুকূলেই সমর্পণ করত।

বগীতে লাইট, ফ্যানের ব্যবস্থা ছিলো। কোনটা জ্বলত, চলত। কোনটাকে থাপ্পড় মেরে বা খোঁচা দিয়ে সচল করতে হত। বেশির ভাগ লাইট, ফ্যানই মুখ কালো করে অচল থাকত। তখন, বিশেষত, মহিলারা বাচ্চাদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সাথে করে হাতপাখা বহন করত। কেউ একটা কিছু যোগাড় করে হাত পাখা বানিয়েও ব্যবহার করত। প্রচন্ড ভীড়ের মাঝে বিনোদনের কমতি ছিলো না। হকাররা বিরিক্তি উৎপাদন করলেও কমবেশি সবাই তাদের সেবা ক্রয় করত। বিনোদনের আরেক উপকরণের নাম ক্যানভাসার। তাদের পোষাক, মালামালের সজ্জা ও গুণাগুণ বর্ণনা, কন্ঠ প্রক্ষেপনের অদ্ভুত ক্যারিশমা এবং বেশি কিনলে বেশি বেশি ছাড়ের বিশাল অফার ছিলো দেখার মত। কিনবো না কিনবো না করেও কেন জানি হাত উঁচিয়ে কন্ঠে আওয়াজ চলে আসত। আর পকেট হাল্কা হত। একজনের দেখাদেখি অন্যদের কেনার হিড়িক লেগে যেত।

হকারদের মধ্যে পুস্তক বিক্রেতাদেরও দেখা মিলত। দু’হাতে বিশাল বইয়ের বহর নিয়ে তারা কামড়াময় ঘুরে বেড়াত। বই পড়ুয়াদের অধিকাংশই এদের কাছ থেকে বাংলাসাহিত্যের নামকরা গল্প, উপন্যাস কম মূল্যে সুলভ সংস্করণ হিসেবে ক্রয় করত। মূলতঃ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎ, বিভুঁতি, শংকর, নিমাই, আশুতোষ, সমরেশ , সুনীল, মীর মোশাররফ হোসেনের বই তাদের স্টকে শোভা পেত। সে আমলের শিক্ষিত এমন কাউকেই পাওয়া যাবেনা যে কখনোই একবারের জন্য হলেও এদের দ্বারস্থ হয়নি। তাদের কাছে থাকত বিচিত্র সব গ্রন্থের সমাহার। কি করিলে কি হয়, ধনী হওয়ার সহজ উপায়, খাবনামা, ডাঃ লুৎফর রহমানের মানব জীবন, উন্নত জীবন থেকে শুরু করে ডেল কার্নেগী, মুকছেদুল মু’মেনিন, আমলে নাযাত, বেহেশতি জেওর প্রমুুখ বইও। সদ্য পানি পাওয়া কিশোর ও টগবগে তরুনদের জন্য কামসূত্র টাইপের চটি কাহিনীর বই ও ম্যাগাজিনও থাকত। মলম আর সর্বরোগ বিনাশী ওষুধের ক্যানভাসাররা ছিলো এদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন। কি তাদের গলা, কি তাদের প্রক্ষেপণ স্টাইল, কি তাদের আকর্ষণ ক্ষমতা কেউ আজ তা অতটা কল্পনাও করতে পারবে না।

এত ঠাসাঠাসির মধ্যেই আসত পান-বিড়ি-সিগারেট, বাদাম-চানাচুর-ঝালমুড়ি, সেদ্ধ ডিম, শষা, কলা আর ফল বিক্রেতারা। ধুমপানের গন্ধ ও ধোঁয়ায় আর বদহজমীদের দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস নির্গমনে কখনো কখনো কামড়ার বাতাসে শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ত, যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠত। নানা কিছিমের ভিক্ষুকের দলও ছিলো। উপচে পড়া ভীড়ের মধ্যে আরেক দল সক্রিয় থাকত যাত্রী সাধারণের পকেট ফাঁকা করতে। তখন ট্রেনের টাইম টেবিল বিশাল পুস্তকাকারে বের হত। স্বচ্ছল, বনেদী ও শিক্ষিত প্রায় পরিবারেই তা শোভা পেত। সেই পুস্তিকাও ছিলো অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। ট্রেনের সময় সূচীর বাইরেও তাতে থাকত রকমারি বিজ্ঞাপন। মনীষীদের উক্তি, প্রবাদ- প্রবচন। বিভিন্ন রংয়ের পাতায় মুদ্রিত সেই টাইম টেবিল পড়ার জন্যও ছিলো সুখকর। এখন নেই।

তখন মূলত ছিলো লোকাল ট্রেন। এতে সেকেন্ড ক্লাস ও থার্ড ক্লাসের টিকেট দেওয়া হত। যারা টিকেট কিনত তারা বুক ফুলিয়ে চড়ত। আর যারা বিনা টিকেটে চড়ত তারা টি টিই’র কদর পেত। উভয়ের ভ্যালু এড হত। অর্থনীতিতে ভ্যালু এড হওয়া খুবই পজিটিভ দিক। সেই ট্রেনের টিকেটও ছিলো অদ্ভুত। শক্ত কাগজের ছোট আয়তকার সেই টিকেট লোহার মেশিনে পাঞ্চ করে বিক্রী করা হত। যারা বিনা টিকেটে ভ্রমণের কারণে কর্তৃপক্ষের রোষাণলে পড়ত তাদের দেওয়া হত উচ্চমূল্যের কাগজের টিকেট। তার আবার কার্বন কপি করা হত। টিটিইদের মধ্যেও রকমফের আছে। সাধারণত তারা সাদা এপ্রোন গায়ে চাপিয়ে পান চিবিয়ে চিবিয়ে টিকেট তালাশের নামে বিনা টিকেটে ভ্রমণকারীদের খুঁজে বেড়াত। কখনো কখনো এরা নিজেরাও সতর্ক থাকত, বিনা টিকেটে ভ্রমণ কারীদেরকেও সতর্ক করে দিত। নীল এপ্রোন গায়ে আরেক দল এদের সুপারভাইজ করতে আসত। কখনো বসতো সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংক্ষিপ্ত মোবাইল কোর্ট। টিটিইদের পান, বিড়ি, সিগারেটের যোগানের বেশিরভাগই আসত হকারদের কাছ থেকে ‘নজরানা’ হিসেবে। ছিলো রেল নিরাপত্তা বাহিনীর লোক। তারা বন্দুক আর লাঠি হাতে ঘুড়ে বেড়াত। এক্সপ্রেস ট্রেন গুলোতে প্রথম শ্রেণীর বগি থাকত। সেগুলো ব্যয়বহুল হলেও আয়াসী ছিলো। বিশেষ কিছু ট্রেনে থাকত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগী।

সাদা পোষাক আর কালো ক্যাপ পরিহিত লাল, সবুজ ফ্ল্যাগ হাতে গার্ড মশাইকে মনে হত যথার্থই ক্যাপ্টেন। স্টেশন মাস্টারকে মনে হত বিগ বস। আর সিগন্যাল ঘরের কর্মচারীদেরকে মনে হত লাল সবুজ হলুদ বাতির ট্রাফিক পুলিশ।

এলাকা ও গুরুত্ব ভেদে স্টেশনের আকার ও সুযোগ-সুবিধার হেরফের হয়ে থাকে। জংশন স্টেশন গুলো আকারে, ব্যস্ততায় ও রকমারি কাজে সদা কলরব মুখর থাকে। এখানে যাত্রীরা ট্রেন পরিবর্তন করে তাদের গন্তব্যমুখী ট্রেন ধরে। কখনো কখনো এখানে ট্রেনের ইনজিন তার মাথা পরিবর্তন করে। সবচেয়ে ভালো লাগত ক্রসিংয়ের জন্য কোন ছোট্ট গ্রামীন স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার কাল। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রড গেজ আর বাকী অঞ্চলে মিটার গেজ বা ন্যারো গেজ লাইন আছে।

তখন মালবাহী বা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে কয়লা চালিত ইঞ্জিন ছিলো। সেগুলো সাপের মত ফোঁস ফোঁস করে উর্ধাকাশে ধুয়া উদগীরণ করতে করতে ছুটত। কয়লা চালিত আর ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের শব্দে তারতম্য থাকলেও দু’টোই হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যেত। এখন আর কয়লা চালিত সে ইঞ্জিন নেই। ঢাকা ও চিটাগাংয়ে রেল ভবনের সামনে তা এন্টিক হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আজো দৃশ্যমান আছে। ছেলেবেলায় এই রেলকে ঘিরে বেশ কিছু স্মৃতি ও অযৌক্তিক ভাবনা জড়িয়ে ছিলো। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা ট্রেনের শব্দ আর তার সাথে তাল মিলিয়ে আমরা ছড়া কাটতামঃ ঝিকির ঝিকির ময়মনসিংহ, আইতে যাইতে কতদিন? এরকম আরো। রাতে জানালার পাশে বসে অপলক নয়নে বাইরের ঘুটঘুটে অন্ধকারে দেখতাম পূর্ণ চাঁদ আমাদের সাথে সাথে চলছে। চাঁদের বুড়ীকেও যেন স্পষ্ট দেখতাম চড়কিতে সূতো কাটছে। পাশাপাশি দুই ট্রেনের ছুটে চলার প্রচন্ড শব্দ উপভোগ করতাম। ব্রীজের উপর দিয়ে চলার সময় ট্রেনের ভিন্ন শব্দও ভালো লাগত। ছুটে চলা ট্রেনের সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো প্রচুর নির্মল হাওয়া খাওয়া। ট্রেনের বুফে কারের খাবার মনে হত সবচেয়ে সেরা, সুস্বাদু। প্রায় প্রতিটি স্টেশন চৌহদ্দিতে বয়সী বট বৃক্ষ শোভা পেত। সেখানে বাঁদুর, কাক, বক সহ রকমারি পাখীরা বাস করত। এখনো তা আছে কালের সাক্ষী হয়ে। মোট কথা দূরপাল্লার যাতায়াতে রেল ছিলো সবচেয়ে নিরাপদ, আনন্দদায়ক চলাচল মাধ্যম।

কালে কালে রেলের চমকে-ঠমকে অনেক কিছু যোগ হয়েছে। আজকের ট্রেনের রঙ চিত্তাকর্ষক হয়েছে। লোকোমটিভ, বগী, ইক্যুইপমেনন্ট ও ট্রেনের সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকবল নিয়োগ হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুযোগ-সুবিধা। রেলের বাজেটও বেড়েছে অনেক গুণ। এতকিছুর পরেও যাত্রী সেবায় ঘাটতি আপামর জনগনকে আশাহত করে। ডিজিটাল যুগে টিকেট ব্যবস্থাপনাটাও আমরা নিষ্কন্টক করতে পারিনি। প্ল্যাটফর্মের অবস্থা সুন্দর হয়েছে। স্টেশন আকারে- প্রকারে ব্যাপক হয়েছে। হয়েছে সৌন্দর্যমন্ডিত। অবকাঠামোগত উন্নতিও হয়েছে। সম্প্রসারণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। ঢাকা- কক্সবাজার রেল ভ্রমন এখন অতি বাস্তব। দেশের অন্য জেলা-উপজেলার সাথে রেল যোগাযোগের সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে স্বপ্নের ট্রেন এখন দক্ষিণের যাত্রাকে করেছে আয়াস সাধ্য। মেট্রো রেল দিয়েছে ভিন্ন ফ্লেভার। এত কিছুর পরেও রেলকে ঘিরে জন সন্তোষে ঘাটতি থেকেই গেছে। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সেকেলে মানসিকতার কারণে রেল তার পূর্ণ যৌবন মেলে ধরতে পারছে না। দক্ষ জনবলের অভাব, যথাযথ পদায়ন না হওয়া, নিম্নপদস্থদের সুযোগ-সুবিধার প্রতি যথাযথ মনোযোগ না দেওয়াও এর পেছনে কাজ করছে। প্রায়ই রেলের কালো বিড়াল জনসম্মুখে থলে থেকে বেড়িয়ে পড়ে। মনে হয় রেল বিড়াল উৎপাদনের উর্বর জায়গা।

সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর প্রিয় মাধ্যম এই রেলের পরিসরকে আরো বিস্তৃত করতে হবে। এর অবকাঠামো আরো মজবুত ও টেকসই করতে হবে। দেশে পর্যটনের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। রেল হতে পারে এর অন্যতম বৃহৎ অংশীজন। জনশ্রুতিতে আছে বাসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রেলকে ভেবে নিয়ে রেলের ভেতরের ও বাইরের সিন্ডিকেট সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনার ফাঁদ পেতে বসে আছে। এই জনশ্রুতি বাজারী গুজবের মত অসার হোক। রেলকে নিয়ে রুনা লায়লার একটা বিখ্যাত গান আছেঃ “ইস্টিশনের রেলগাড়ীটা, মাইপা চলে ঘড়ির কাটা, প্ল্যাটফর্মে বইসা ভাবি কখন বাজে বারোটা, কখন বাজে বারোটা”। রেল চলুক ঘড়ির কাটা মেপে। যাত্রীসেবা প্রদানের উন্নত মানসিকতা নিয়ে। বারোটা বাজার অশনি সংকেত না বাজিয়ে। রেল হোক জনগনের আনন্দ, প্রয়োজন আর আস্থার প্রতীক। হোক যাত্রী সাধারণের প্রিয় নিত্য সঙ্গী।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/এসবিডিই

আনোয়ার হাকিম ইস্টিশনের রেল গাড়ীটা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর