Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশ ত্যাগ আর আমাদের দায়বদ্ধতা!

তৌহিদ-উল বারী
১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১৫

মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের পথে ছুটে নিরবধি। এ স্বপ্ন কারো দ্বারা পূর্ণতা পায়। আবার কারো কাছে অপূর্ণতায় রয়ে যায়। স্বপ্ন পূরণ করতে মানুষ কতই না ঝুঁকি নেয়। কতই না পথ পাড়ি দেয়। দু-চোখে কেবল দেখতে পায় স্বপ্নের সেই রাস্তাটা। তবে সেই রাস্তাটা কিংবা পথটা পাড়ি দেয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না, সম্ভব হয়ে উঠে না নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অটুট থেকে বাস্তবতার সাথে পেরে উঠতে। অনেকে এ স্বপ্ন পূরণ কেবল টাকার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আবার অনেকের কাছে সঙ্গী হয় নানা প্রতিকূলতা আর বাধা-বিপত্তি।

বিজ্ঞাপন

অনেক তরুণকে দেখেছি বিদেশগামী হতে। যা পরিমাণে এতই বেশি যে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য সেখানে পাড়ি দিচ্ছে কেউ বা আবার নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারের স্বপ্ন পূরণে সংসারের হাল ধরতে। হ্যাঁ, আমি প্রকৃতপক্ষে এই স্বপ্নগুলোরই কথা বলছি। যে স্বপ্ন এখন শিখাই কেবল বিদেশে পাড়ি দেওয়ার। হোক তা আয়ের জন্য নতুবা উচ্চ শিক্ষার জন্য।

একটা সময়ে যেখানে তরুণরা বসে গল্প করতো নানা সামাজিক, রাজনৈতিক আর দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে। সেখানে এখন সব চাপিয়ে উঠে আসে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার বিষয়টা। কেন তাদের মধ্যে এসব বিষয় ঘুর পাক খাচ্ছে? কেনই বা শিক্ষার্থীর এত বড় একটা অংশ বিদেশগামী হওয়ার প্রবণতায় ঝুঁকছে? কোন বিষয়গুলোই এর পেছনে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে? একটু খোলাসা করা যাক-

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যেন পছন্দের তালিকায় শীর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিগত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন মুল্লুকে পাড়ি দিয়েছে মোট ৮ হাজার ৫২৪ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া ২০২২ সালে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ৮ হাজার ৬৬৫ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। যা বিদেশে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর “গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি-লেভেল স্টুডেন্টস” শীর্ষক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের তথ্যতেও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও তাদের উচ্চশিক্ষার পছন্দের দেশের তালিকায় আছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালেশিয়া এবং জার্মানির মতো দেশগুলোকে। যথাক্রমে এসব দেশে পাড়ি জমিয়েছে মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৬ হাজার ৫৮৬ কানাডায় ৫ হাজার ৮৩৫, মালয়েশিয়ায় ৫ হাজার ৭১৪ এবং জার্মানিতে ৫ হাজার ৪৬ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছেড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

অনেকে আবার পড়াশোনার জন্য নয় বরং পরিবারের অভাবের তাড়নায়ও পাড়ি দিচ্ছেন। সংসারের হাল ধরার তাগিদে ছুটছে নানা দেশে। হিসাব কষলে দেখা যায় এদের অধিকাংশই মেধাবী আর পরিশ্রমী। এর পিছনে থাকতে পারে যে সমস্ত কারণগুলো তা হলো-

উচ্চ শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্য _

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, দেশে কি শিক্ষার মান খারাপ নাকি যে ভিন্ন দেশে পাড়ি দিতে হবে শিক্ষালাভের জন্য। তবে তাদের উদ্দেশ্যে দুটি কথা; একটা মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা প্রয়োজন। যেখানের একটি হচ্ছে শিক্ষা। এই শিক্ষা অর্জন করতে হয়তো যেখানে সবধরবের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে হয় তার সবটুকু হয়তো ভোগ করা কিংবা পাওয়ার না হলে এমন সিদ্ধান্তই নিতে তারা স্বাচ্ছন্দবোধ করে। তবে এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীর কথাই বা কি বলবো, যেখানে দেশের বড় বড় মন্ত্রী, আমলা আর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছেলে পোলাদের পড়াশোনা করানোর জন্যই বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। তখন আপনি তাদের কাছে সেই প্রশ্নের উত্তর কেমন পাবেন বলে আশা করেন?

দারিদ্র্যতাও এ বিদেশগামী হওয়ার অন্যকারণ _

যেখানে প্রচন্ড মেধা শক্তি থাকার পরও দুমুঠো ভাত পেটে জুটে না সেখানে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা যেন বিলাসিতা বৈকি আর কিছুই নয়। তখন সেই সমস্ত শিক্ষার্থীরা কি করেন! তখন তাদের কেবল মাথায় এটাই কাজ করতে থাকে যে কোনোমতে দেশটা ছাড়তে পারলেই বুঝি তারা বাঁচবে। অন্তত স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। আর এভাবে কোনো মতে বিদেশ যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাটা ধারদেনায় জোগাড় করে পাড়ি দেয় বিদেশে। পরে যখন সেখানে গিয়ে কাজ কর্ম করে তখন সেই টাকা শোধ করে। আর ভাবে এভাবেও বেঁচে থাকা যায়।

বেকারত্বের দীর্ঘ সমীকরণ _

দেশে পড়াশোনা শেষ হলেও সেই অনুসারে তারা চাকরি পাচ্ছেন না কিংবা তাতে তাদের টিকে থাকতে পারাটা দুঃসহ হয়ে উঠছে। ফলে তারা ঝুঁকছে দেশের বাইরে।চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) এ তিন মাসে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এসব সমীকরণ যখন একজন শিক্ষার্থীর কানে বাজে কিংবা চোখে পড়ে তখন তারা নিমিষেই দুঃচিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। আর কেবলই দেশ ছেড়ে যাওয়ার চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে।

তাদের এই যে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া যেন আমাদের কাছেই দায়বদ্ধতার একটি বিরাট অংশ। এমনটা কেন হবে প্রশ্নে নিশ্চয়ই বলতে চাই, যারা মেধাবী তারা যদি এভাবে দেশ ছাড়তে থাকেন, তাহলে দেশটাকে কারা এগিয়ে নেবে? ভবিষ্যতে কারা নেতৃত্ব দেবে? মেধাবী শিক্ষার্থীর এত বড় অংশ যদি ভিন্ন দেশে পাড়ি দেয় তাহলে একটি দেশ কীভাবে সামনের দিনগুলোতে কঠিন, কঠোর প্রতিযোগিতায় নাম লেখাবে? আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে কিন্তু অভাব কাটেনি, গড় আয়ু বেড়েছে কিন্তু দুশ্চিন্তা দূর হয়নি। মেধাবী তরুণদের বিদেশগামী মনোভাব আটকানোর জন্য কিছুই করা হয়নি। পড়াশোনা করলেও যে ঠিকভাবে একটি কাজ জুটবে তার নিশ্চয়তা নেই বলে যে চিন্তা তাদের মাথায় ঢুকেছে তার কোনো স্থায়ী সমাধান তাদের কাছে জানা নেই বললে চলে। ফলে দেশের বিরাট অংশ বিদেশগামী হয়ে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখাটা দূরের কথা দেশের শিক্ষাখাতের অবদান থেকেও যেন বিচ্যূত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যেন দেশ মেধাশূন্য হবে। এতে দায়বদ্ধ থাকবো কেবল আমরাই!

লেখক: শিক্ষার্থী; বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

তৌহিদ-উল বারী মুক্তমত মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশ ত্যাগ আর আমাদের দায়বদ্ধতা!

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর