বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র: কৃষি ও খাদ্য
১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৫৮
কৃষি, খাদ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, আবাসন, সড়ক ও যোগাযোগ, সামাজিক নিরাপত্তা, স্থাপনা, ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রমাগত উন্নয়ন করেই চলছে। অনেক বিষয় আছে যা আগে মোটেই বাংলাদেশে ছিল না, এখন তা আছে। আবার অনেক বিষয় আগে কম ছিল, এখন উন্নত বাংলাদেশে অনেক। কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র নিম্নে উপস্থাপন করা হলো—
কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের রোল মডেল: কৃষিপণ্য উৎপাদনে ২০১১ সালে, বাংলাদেশের ১১টি ফসলের উৎপাদন বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ছিল। বর্তমানে ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে পাট উৎপাদনে ২য়; ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়; চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ এখন কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের রোল মডেল।
কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন: বাংলাদেশে ২০০৬ সালে দানাদার শস্যের উৎপাদন ছিল ২ কোটি ৭৭ লক্ষ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬৮ হাজার মেট্রিক টনে। বিগত ১৫ বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ভুট্টায় ৯ গুণ, আলুতে ২ গুণ, ডাল ফসলে ৪ গুণ ও সবজিতে ৮ গুণ।
২০০৯ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, বর্তমানে ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন; মৎস্য উৎপাদন ছিল ২১.৩০ লক্ষ মেট্রিক টন, বর্তমানে ৫৩.১৪ লক্ষ মেট্রিক টন; এবং পোল্ট্রি সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৬ লক্ষ ২২ হাজার, বর্তমানে ৫২ কোটি ৭৯ লক্ষ ১৯ হাজার।
কৃষি ও খাদ্যে সরকারের সহায়তা: কৃষিবান্ধব সরকার প্রতি কেজি টিএসপি সারের মূল্য ৮০ টাকা থেকে কমিয়ে ২৭ টাকা, ডিএমপি সারের মূল্য ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ২১ টাকা, ও এমওপি সারের মূল্য ৭০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০ টাকা করেছে। স্বল্পমূল্যে তেল, চিনি, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করছে ১ কোটি পরিবারের ৫ কোটি মানুষকে। ২০০৯ সালে কৃষকের উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) বাবদ ব্যয় ছিল ৫১৭৮ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯৯৮ কোটি টাকা।
সরকার কৃষি উপকরণ সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে উপকরণ কার্ড প্রদান করেছে মোট ২ কোটি ৫ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮৬৯ জন কৃষককে। ফসল উৎপাদনের ঋণ ও কষি উপকরণ সহায়তা পেতে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সুবিধার আওতায় এসেছে মোট প্রায় ১ কোটি কৃষক। ২০১০ সালে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি কৃষি ঋণ পেয়েছেন ৪৭৬৫ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে পেয়েছেন ২২৪০২ কোটি টাকা।
কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা: স্বাধীনতার পূর্বে কৃষিতে উচ্চ শিক্ষার জন্য মাত্র ২টি প্রতিষ্ঠান ছিল
১) ইস্ট বেঙ্গল কৃষি ইন্সটিটিউট, ঢাকা ২) ইস্ট পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ। স্বাধীনতার পর ইস্ট পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয় এবং ১৯৭৩ সনের ১৩ ফেব্রুয়ারি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উপস্থিত হয়ে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দেন। তখন থেকেই বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষা ও উন্নয়নের সূচনা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ইস্ট বেঙ্গল কৃষি ইন্সটিটিউট এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ কৃষি ইন্সটিটিউট এবং ২০০১ সালে শ্রদ্ধেয় কৃষিবিদ নেতা আ ফ ম নাছিম এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বাংলাদেশ সরকার গাজীপুরের ইপসাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, দিনাজপুরের হাজি মোহাম্মাদ দানেশ কৃষি কলেজকে হাজি মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করেন। এসমস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে কৃষি বিষয়ক উচ্চ শিক্ষা দেয়া হয়। বর্তমান সরকার আরও বেশ কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। সর্বশেষ অনুমোদনকৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শরিয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বর্তমানে ২৭টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের মেয়াদে সৃষ্ট বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ বাংলাদেশের ১৪টি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বৈরি পরিবেশ সহনশীল জাতসহ মোট ৬৯৯ টি উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন এবং ৭০৮ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বর্তমান মেয়াদে সরকার গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা স্বরূপ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৭০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫৮ কোটি টাকা জাতীয় বিজ্ঞান ও ফেলোশিপ দিয়েছে ।
কৃষিতে ডিজিটাল সেবা: বর্তমান সরকার ২৭০০০টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে ৭০ লক্ষ মানুষকে ডিজিটাল সেবা দিয়েছে। মানুষ mygov.bd ভিজিট করে বা myGov অ্যাপ ব্যবহার করে ১০০০ এর বেশি নাগরিক সেবা পাচ্ছে। কৃষি সেবাও এ কার্যক্রম সমূহের আওতাভুক্ত। ১৬১২২ নম্বরে কল করে অথবা land.gov.bd ভিজিট করে মানুষ ঘরে বসেই ভূমিসেবা পাচ্ছে এবং ১৬৪৩০ নম্বরে কল করে বিনামূল্যে আইনি সেবা নিচ্ছে। ১৬১২৩ নম্বরে কল করে কৃষকরা সরাসরি কৃষি পরামর্শ পাচ্ছেন। টেলিভিশন ও রেডিওতে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে বহুগুণে। বরগুনার আমতলীতে স্থাপিত হয়েছে কৃষি রেডিও যার মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকরা কৃষি সেবা পাচ্ছেন। বাংলাদেশের কৃষির এসমস্ত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অপরিহার্য।
লেখক: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সারাবাংলা/আইই