Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জঙ্গিবাদ দমনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা

খায়ের মাহমুদ
৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:১৮

বাংলাদেশের ইতিহাসে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সব থেকে কার্যকর ভূমিকা রাখা দলটির নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুগে যুগে তার অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরোধিতা করে আসছে। যার ফলস্বরূপ বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সব থেকে বড় জঙ্গি হামলার শিকারও আওয়ামী লীগ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দেশজুড়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। ওই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা আমাদের জাতীয় জীবনে এক মর্মন্তুদ ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

পুরো পৃথিবী সেদিন থমকে গিয়েছিল। দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধিদলীয় নেতার উপর সরাসরি জঙ্গি হামলা- এটাও সম্ভব! ১২ জন জঙ্গি সেদিন ১৫টি গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সময় প্রকাশ্য দিবালোকে যেভাবে গ্রেনেড হামলা হয়, তাতে নিরাপত্তা যে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয়, বরং নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের যোগসাজশ ও পৃষ্ঠপোষকতা এখানে স্পষ্ট। একটি সরকার যখন নিজেই সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে কিংবা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা হয়, তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এরই এক দৃষ্টান্ত ২০০৪ সালের এই গ্রেনেড হামলা।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার এই হামলার দীর্ঘ তদন্তের পর রায় হয় ২০১৮ সালে। হামলার শিকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষা করেছে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের’ সহায়তায় ওই হামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রের যোগসাজশ স্পষ্ট, সেখানে নিরাপত্তার বিষয়ে বলা বাহুল্য।

বিজ্ঞাপন

আমরা দেখেছি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এতে স্পষ্ট, সে সময় নিরাপত্তার ভার যাদের ওপর ছিল- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ কোনো প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন প্রধানরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি।

এমনকি এ ঘটনার পরও সে সরকার তদন্তের নামে ‘জজ মিয়া নাটকের’ অবতারণা করে, যা পরে একটি দুষ্টচক্রের ষড়যন্ত্র বলে প্রমাণিত হয়।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সর্ব প্রথম সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী আইন ২০০৯ পাস করেছে সংসদে। এই আইনটি সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন ও বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ করতে সহায়তা করেছে।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো, জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম জঙ্গি দমনে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আওয়ামী লীগ সরকারের জঙ্গিবাদ দমনের পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০১৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশে কোন বড় ধরনের জঙ্গি হামলা হয়নি।

আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপরও জোর দিয়েছিল ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই। সরকার বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করে চলছে। বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করে যে, আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জনগণকে ভয় দেখাচ্ছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার জঙ্গিবাদ দমনের নামে বিভিন্ন সময় যেসব অভিযান ও গ্রেফতার চালানো হয় তার অনেকটাই লোক দেখানো।

তবে সরকার সবসময়েই জঙ্গিবাদ দমনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আর তার প্রমাণ বিএনপি জামায়াতের সময় সৃষ্ট বাংলা ভাই, হরকতুল জিহাদের মতো সন্ত্রাসী জঙ্গি দলের বাংলার মাটিতে আর সংগঠিত হতে না পারা। সরকারের মতে, জঙ্গিবাদ দমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করাও জরুরি তাই জঙ্গি দমনে পুলিশের বিশেষায়িত শাখা করেছে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি সরকারের গত ১৫ বছরের অন্যতম অর্জন। আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের মান উন্নত করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের, জঙ্গিবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া, জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো।

তাছাড়া ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়ে আসছে। এসব ধারাবাহিক অভিযানের মধ্যে জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা, জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর নেতাদের গ্রেফতার করা ও বিচারের সম্মুখীন করা, জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করা অন্যতম।

জঙ্গিবাদ বন্ধে অর্থায়ন বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি ছিল। তাই ব্যাংকিং খাতে জঙ্গিবাদী অর্থায়ন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিবাদী প্রচারণা বন্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ ও আধুনিক সাইবার পুলিশিং ব্যাপক মনিটরিং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া, জনসাধারণের মধ্যে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো উল্লেখযোগ্য।

আওয়ামী লীগ সরকারের জঙ্গিবাদ দমনের পদক্ষেপগুলোর ফলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ নেই বললেই চলে। সুতরাং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে, একক কৃতিত্ব শুধু আওয়ামী লীগই দাবি করতে পারে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর