মানবাধিকার সুরক্ষায় শেখ হাসিনার ভূমিকা
১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৪০
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, যেখানে প্রতিটি মানুষের মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এজন্য মহান স্বাধীনতা অর্জনের এক বছরের মধ্যেই তিনি জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার দলিল হিসেবে ‘সংবিধান’ প্রণয়ন করেন।
সেই সংবিধান সমুন্নত রেখে দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালি জাতির চিরায়ত শান্তি ও মর্যাদাময় জীবন নিশ্চিতের জন্য, আওয়ামী লীগ সবসময়ই গণমানুষের মানবাধিকার সুরক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সরকারে থাকলে তাই মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করাই হয় আওয়ামী লীগের প্রথম অগ্রাধিকার।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগই ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। এমনকি এই কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এমনকি শৈশব-কৈশোর থেকেই যেন একজন মানুষ মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সেজন্য অনলাইন ভিত্তিক ‘মানবাধিকার কোর্স’ চালু করা হয়েছে।
তাছাড়া, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কমিশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ইনকোয়ারি কমিটি চালু করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে ২০১৭ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমার সরকার প্রধান অং সান সূচি যখন রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক ১৩ লক্ষাধিক নাগরিককে বাস্তুচ্যুত করেছিল তখন মানবতার অধিকার নিয়ে আজকে যারা মানবাধিকার এর দোহাই দিচ্ছে তারাও কোন কথা বলেনি।
এমনকি, সাম্প্রতিক সময়েও ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর ইজরাইল বর্বরোচিত হামলা চালালেও মানবাধিকার নিয়ে কেউ কথা বলেনি। অথচ, বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়ায় সেদিন লাখ নির্যাতিত মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছিল।
প্রায় অর্ধযুগ ধরে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় দেশের সরকারি জনবল ব্যবহার হচ্ছে, সার্বিক পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠী তাদের সুযোগ-সুবিধা হারাচ্ছে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য মানবিক সাহায্যে খরচ করছে।
সরকার তার বাজেটের একটি অংশ রোহিঙ্গাদের মানবিক কল্যাণে খরচ করছে। রোহিঙ্গা শিবির ক্যাম্পে আশ্রয়প্রার্থী এতিম শিশুর সংখ্যা চল্লিশ হাজারের অধিক। এদের প্রায় নয় হাজার শিশুর মা-বাবা কেউ নেই। এসব এতিম শিশুদের তত্ত্বাবধান ও সুরক্ষার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে এতিম শিশুদের লালন-পালনকারী পরিবারকে নগদ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
শেখ হাসিনা সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এক লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে আবাসন ব্যবস্থা করে ভাসানচরে। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরইশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচরের এ প্রকল্পে রয়েছে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আবাসন, স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের পাশাপাশি থাকছে জীবিকা নির্বাহের সুবিধাসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
প্রায় তিন হাজার ৯৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার জীবন-জীবিকার জন্য তৈরি করা হয়েছে ভাসানচর আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্প।
অন্যদিকে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যার সফল নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের হাত ধরে ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়। যার ফলে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা দিনটিকে তাদের মুক্তির দিন হিসেবে পালন করে। ছয় বছর ধরে তারা পূর্ণ নাগরিক সুবিধা, উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছে। বিলুপ্ত ছিটমহল এখন দুই দেশের সমস্যা সমাধান ও সহযোগিতার প্রতীক।
জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতেও সরকার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে।
মুজিব শতবর্ষে শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।” সেই নির্দেশনার সফল বাস্তবায়নে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭ টি পরিবারকে জমিসহ বাড়ি স্থাপন করে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা শুধু যে মাথার উপরে ছাদ পেয়েছে তাই নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায় নিশ্চিতকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গ্রামেই শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, পরিবেশ উন্নয়ন ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শেখ হাসিনা সরকারের এই অন্তর্ভুক্তি মূলক কর্মকাণ্ড পিছিয়ে থাকা মানুষদের স্বাবলম্বী করে মানবাধিকারের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মানবাধিকার রক্ষায় অবিস্মরণীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই বাংলাদেশ ২০১৮ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশ ৫ বার এ সদস্য পদে বিজয়ী হয়। সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আগামী ২০২৩-২০২৫ মেয়াদকালের জন্য সদস্যপদ লাভ করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য সমর্থন দিয়েছে ১৬০টি দেশের প্রতিনিধিরা, যা দেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পঞ্চমবারের মতো জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের ৪৭ সদস্যের এই সংস্থায় এর আগে ২০০৬, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল।
বাংলাদেশ মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে শ্রমিক, শিশু, নারী, প্রতিবন্ধীর অধিকার কনভেনশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিল স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে। শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার পথ আরও সহজ করার লক্ষ্যে ‘শ্রম (সংশোধন) বিল-২০১৮’ পাস করা হয়।
সর্বোপরি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার সুরক্ষায় যত পদক্ষেপ নিয়েছে তার একভাগ অংশও পদক্ষেপ নেয়নি অন্য কোন সরকার। তথাপি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে একটি গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের সকল নাগরিক সচেতনতার সাথে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই সকল অপপ্রচার ও গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
লেখক: চেয়ারম্যান, জেনেটিক্স এন্ড এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/আইই