Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শীত হোক শীতার্ত মানুষের জন্য সমান আনন্দদায়ক

মো. রাকিব
২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৯

পৃথিবীতে এমন হাতে গোনা কয়েকটি দেশ রয়েছে যেখানে ছয়টি ঋতু বিদ্যমান। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। যদিও আমরা বলি বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা দেখতে পাই গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীত এই তিনটি ঋতুকে।

মূলত আমরা নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যবর্তী সময়টুকু কে শীতকাল হিসেবে গণ্য করি। বাংলা মাসের হিসেবে পৌষ ও মাঘ এই দুই মাসেই সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে। শীতকাল শরতের শেষের দিকে শুরু হয় এবং পৌষ ও মাঘ দুই বাংলা মাসে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাভাবিক ভাবে বলতে গেলে আমার কাছে বাংলাদেশের শীতকালকেই সবচেয়ে উপভোগ্য ঋতু মনে হয়। যায় হোক আজকে আমার আলোচনার বিষয় হচ্ছে শীতকালে শীতার্ত মানুষদের কঠিন অবস্থা নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

শীতের কুয়াশামাখা সকালে ঘরের ব্যালকনি বা জানালা খুলে নকশি কাঁথা, চাদর কিংবা কোন গরমদায়ক কম্বল গায়ে জড়িয়ে সকালটাকে উপভোগ করার চেয়ে আনন্দের কিছু হতেই পারে না। তারপর যদি ঘুম থেকে উঠেই বাথরুমের হিটার দ্বারা গরম হাওয়া পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে খেজুর গাছের রস দিয়ে তৈরি করা ফিন্নি বা শীতের চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ইত্যাদি খাওয়া যায় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। এতক্ষণ যে সুন্দর খাওয়া, শীতকালকে উপভোগ আর ঘুমানোর বর্ণনা দিয়েছি এগুলো হচ্ছে আমাদের সমাজের বিত্তবানদের শীতকালকে উপভোগের চিত্র।

আসুন এবার আপনাদের বাস্তবতায় নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশে এমন অনেক শারীরিক ভাবে সুস্থ বা অসুস্থ অথবা মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ রয়েছেন যারা একটু থাকার যায়গার অভাবে শহরের অলিতে গলিতে রাস্তার পাশে নিজের জীবন কাটাচ্ছেন। যে যায়গায় তারা দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে বেড়ায় সে যায়গায় শীতের পোশাক কিংবা আরামদায়ক কোন কাঁথা, কম্বল কিনতে পারা তো তাদের জন্য এক ধরনের বিলাসীতাই। আপনি যদি একটু রাত করে শহরের মেইন রোড গুলোতে চোখ বুলিয়ে আসেন সেখানে দেখবেন কিছু শীতার্ত মানুষের করুণ অবস্থা। কেউ সম্ভ্রম রক্ষা করতে পরিধান করা লুঙ্গিটাকেই গায়ে জড়িয়ে শুয়ে আছে আবার কেউ বা ময়লা যুক্ত কোন কাঁথা- কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। তবে যারা ময়লা যুক্ত কাঁথা-কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকে তাদের আপনি শীতার্ত মানুষদের মধ্যে বিত্তবান শ্রেণী হিসেবেই গণনা করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

দুঃখের বিষয়, এই সমস্ত শীতার্ত মানুষগুলোর ঠিক পাশ দিয়েই আমাদের সমাজের বিত্তবানরা নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছেন কিংবা পরিবার নিয়ে শীত কালকে উপভোগ করতে কোথাও ভ্রমনে যাচ্ছেন। অথচ তাদের ঠিক পাশেই কিছু শীতার্ত মানুষ শীতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তখন বুঝা যায় ফুটপাতে থাকা মানুষগুলোর জন্য শীত আসলেই অভিশাপ রূপে আগমন করে। এই শীতে তারা ক্ষনে ক্ষনে গরম কাপড় বা কম্বলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। কিন্তু এগুলো দেখার মানুষ তো কেউ নাই। সবাই ভাবে আমি কষ্ট করে জীবনে সফলতা অর্জন করেছি, বিত্তবান হয়েছি তাই এসব শীতার্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ছোট করতে পারিনা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করতে পারিনা।

পরিসংখ্যান বলছে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় ভাসমান মানুষের সংখ্যাই হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার। একই ভাবে যদি সারা দেশের ভাসমান মানুষের সংখ্যা বিবেচনা করা হয় তাহলে ঠিক কত সংখ্যক ভাসমান মানুষ রয়েছেন। মূলত যারাই ফুটপাতে ভাসমান থাকেন তারাই সবচেয়ে বেশি শীতের কষ্ট সহ্য করেন। একবার এই মানুষগুলোর কথা চিন্তা করুন। জী বিত্তবান আপনাকেই বলছি আপনি যখন কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমান তখন কি আপনার এইসব শীতার্ত মানুষের কথা একবারও মনে পড়ে না? আপনার কি মাথায় এই চিন্তা আসে না যে আমি কতো আরামে ঘুমাচ্ছি অথচ কতো মানুষ দেশে শীতার্ত অবস্থায় আছে। যদি এগুলো আপনার মাথায় না আসে তাহলে আপনি শুধুমাত্র একজন অর্থ থাকা বিত্তবান যে মনের দিক থেকে খুবই গরীব। ১৯৮৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪০তম অধিবেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছরের অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস পালন করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি আমরা আধো এসব ভাসমান মানুষদের একটু সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছি?

তবে এতো এতো ভাসমান মানুষের ফুটপাতে বসবাসের মূল কারণ কী? আমার কাছে মনে হয় অন্যতম কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন, পরিবারে ঠাঁয় না হওয়া, মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়া কিংবা থাকার মতো কোন যায়গা না থাকা ইত্যাদি। আপনি লক্ষ্য করবেন যারাই ফুটপাতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তাদের বেশিরভাগই হচ্ছেন ছোট বাচ্চা এবং বয়স্ক মানুষ। যে সময়ে এসকল বৃদ্ধ কিংবা পথশিশুদের শীতকালকে উপভোগ করার কথা সেখানে তারা শীতে কঠিন পরিস্থিতিতে দিন পার করছে। এসব মানুষ গুলোর শহরে মাথার উপর একটু ছাদ নাই। অথচ বেশিরভাগ মানুষই বন্যা, নদী ভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে শহরের ফুটপাতে থাকছেন। এই মানুষগুলোর কষ্টে টনক নড়ার কোন মানুষ নেই অথচ দেশে বিত্তবানদেরও সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে।

আমাদের বিত্তবান সমাজের কাছে অনুরোধ থাকবে আপনারা এসব শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। এটা আপনাদের একটি মানবিক দায়িত্ব। আল্লাহ আপনাকে বিত্তবান বানিয়েছেন তাই বিত্তবান হওয়ার হক আদায় করুন এসব শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। আমাদের উচিত এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য শীত বস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসা। আশার বাণী হচ্ছে , ইতিমধ্যেই আমাদের সরকারের এসব ভাসমান মানুষের দিকে সুদৃষ্টি পড়েছে। ইতিমধ্যেই সরকার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে ভাসমান মানুষের থাকার ব্যবস্থা করছেন। যদিও আমি লিখেছি শীতার্ত মানুষদের শীতকালীন কষ্ট নিয়ে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যদি তাদের কষ্ট লাঘব করতে হয় তবে অবশ্যই তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। যখন দেশে ভাসমান মানুষই থাকবেনা তখন আর শীতার্ত মানুষও না থাকার কথা।তাই আমাদের সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের দিকে আরো বেশি দৃষ্টি দিতে হবে এবং প্রকৃত ভাসমান মানুষ গুলোর জন্য এই সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যেদিন দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে সেদিনই শীতার্ত মানুষ মুক্তি পাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

মুক্তমত মো. রাকিব শীত হোক শীতার্ত মানুষের জন্য সমান আনন্দদায়ক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর