Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শ্রমবাজারে নারীর অগ্রগতি

মো. হাসানুর রাহমান (হাসান)
২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৩১

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি বেড়েছে কয়েক ধাপ। মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জিত মান ১ এর মধ্যে ০.৬৫ যা মধ্যম মান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উন্নয়নের এ ধারায় অবদান রাখতে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের নারীরা।

নারীদের শ্রম, দক্ষতা, এবং সেবার মানসিকতা মানবসম্পদ উন্নয়নে যেমন ভূমিকা রাখছে একইসাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রেখে চলেছে। আর এই লক্ষ্য অর্জনে নারী-পুরুষ সকলে সমভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থনীতিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।

বিজ্ঞাপন

গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে উৎপাদন শিল্পে নারীর ব্যয়িত মেধা ও শ্রম অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে তা প্রশংসনীয়। তাছাড়া নারীরা শিক্ষক, নির্মাণ কর্মী, বিজ্ঞানী, ব্যাংকার, উদ্যোক্তা, শিল্পী, গণমাধ্যম কর্মী ইত্যাদি পেশাকে বেছে নিচ্ছেন তাদের পছন্দ অনুযায়ী। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, উন্নয়নের ভালো সুফল পেতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর পূর্ণাঙ্গ অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্যমতে, দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসাথে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ এর ২য় কোয়ার্টার অনুযায়ী, মোট শ্রমশক্তি ৭৩.২১ মিলিয়ন, এর মধ্যে পুরুষ ৪৮.১৯ মিলিয়ন, এবং নারী ২৫.০২ মিলিয়ন এবং ২০২৩ এর ৩য় কোয়ার্টার অনুযায়ী, মোট শ্রমশক্তি ৭৩.৪৪ মিলিয়ন, এর মধ্যে পুরুষ ৪৭.৯৯ মিলিয়ন, এবং নারী ২৫.৪৫ মিলিয়ন। এখানে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত নারী শ্রমশক্তি ০.৪৩ মিলিয়ন। অন্যদিকে, কর্মে নিয়জিত জনগোষ্ঠী ২০২৩ এর ২য় কোয়ার্টার অনুযায়ী, কর্মে নিয়জিত মোট শ্রমশক্তি ৭০.৭১ মিলিয়ন, এর মধ্যে পুরুষ ৪৬.৫২ মিলিয়ন, এবং নারী ২৪.১৯ মিলিয়ন এবং ২০২৩ এর ৩য় কোয়ার্টার অনুযায়ী, কর্মে নিয়োজিত।

বিজ্ঞাপন

মোট শ্রমশক্তি বেড়ে হয় ৭১.০১ মিলিয়ন, এর মধ্যে পুরুষ ৪৬.৩৯ মিলিয়ন, এবং নারী ২৪.৬২ মিলিয়ন। এখানে কর্মে নিয়জিত নারী শ্রমশক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৪৩ মিলিয়ন যা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত নারী শ্রমশক্তির সবাই কর্মে নিয়জিত বলে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধুমাত্র তৈরি পোশাক শিল্প থেকে রপ্তানির পরিমাণ ৪২.৬১৩ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮১.৮১ ভাগ।

বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ২য় এবং চীন শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এদিকে, এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) সর্বশেষ জরিপ বলছে যে, দেশের মোট ৪২ লাখ ২০ হাজার পোশাক শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২৪ লাখ ৯৮ হাজার। এই খাতে নিয়োজিত নারী কর্মী দেশের শিল্পখাতে নিয়োজিত মোট নারীর প্রায় ৭০ ভাগ।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১,৭৬,৫২০ জন নারী প্রবাসে কাজ করতে গেছেন। বর্তমানে (নভেম্বর-২০২৩) প্রবাসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৭০ হাজার ৫৯৮ জন, যা ২০২০ এর তুলনায় ৪৮ হাজার ৬৬৪ জন বেশি।

প্রবাসী আয়ে নারীর অবদান অনন্য। তারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। আমরা যদি কৃষি শিল্প ও সেবাখাতে নারীদের অবদান দেখি তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের তথ্যমতে, কৃষি খাতে কাজ করেন ১৮.৪৩ মিলিয়ন, শিল্প খাতে কাজ করেন ২.১৬ মিলিয়ন এবং সেবাখাতে কাজ করেন ৪.২৭ মিলিয়ন নারী যা আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথকে সহজ করে দিচ্ছে।

কর্মক্ষম জনশক্তির অর্ধেক নারী হলেও শ্রমবাজারে সক্রিয় আছেন মোট নারী শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেকেরও কম। কর্মবাজারের বাইরে থাকা এই বিশাল নারী শ্রমশক্তি শ্রমবাজারে যুক্ত হলে দেশের মোট জিডিপিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবে। এরই লক্ষে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার নানামুখী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।

নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।

লেখক: প্রভাষক, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইউনিভার্সিটি, জামালপুর

সারাবাংলা/এসবিডিই

দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শ্রমবাজারে নারীর অগ্রগতি মুক্তমত মো. হাসানুর রাহমান (হাসান)

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর