‘গুম’ হয়ে গেছে বিএনপির নির্বাচন বন্ধের দিবাস্বপ্ন
১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৭
নির্বাচনবিমুখ বিএনপি রাজনীতিতে এমিনতে কোণোঠাসা। তার ওপর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাম্প্রতিক ভারত সফরের পর বিএনপি যেন আরও ভেঙ্গে পড়েছে, চুপসে গেছে। শুরু থেকেই দেশের জনগণের প্রতি আস্থা না রাখা বিদেশ নির্ভর বিএনপি, নির্বাচন ঠেকানোর সব রাস্তা হারিয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছে।
পিটার হাস গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই গিয়েছিলেন নয়া দিল্লী। তখন থেকেই বিএনপি আশায় বুক বেঁধেছিল, এবার বোধ হয় নির্বাচনের ট্রেনটা থামবে। বিএনপির নেতাদের কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে না। এমনকী হাসের এই সফর নিয়ে দিল্লী্ও কিছু জানে না। শুক্রবার তাদের কূটনৈতিক মিশন জানিয়েছে, হাসের এই সফর নেহায়েত ব্যক্তিগত।
শুক্রবার নয়াদিল্লীতে ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে হাসের দিল্লী সফরের বিষয়টি আরও খোলাসা করেন, মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি। অরিন্দমের কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো, সম্প্রতি বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ভারত সফর প্রসঙ্গে আপনার কাছে কোন বার্তা আছে? জবাবে অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমে কিছু রিপোর্ট দেখেছি তিনি দিল্লী সফর করছেন। ‘এটি তার ব্যক্তিগত সফরও হতে পারে। এনিয়ে এই মুহূর্তে শেয়ার করার মতো কিছু নেই।’
অরিন্দম বাগচির এমন বক্তব্যের পর এটা পরিস্কার হয়ে গেছে পিটার হাসের ভারত সফর নিয়ে বিএনপির উচ্চ্বাস করার মত কিছু হয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবর বিদেশ নির্ভর বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করলেও কখনই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার মত কিংবা সরকারকে হঠানোর মত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি। ২০১৩ সালের নির্বাচন নিয়ে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে চরম উগ্র অবস্থান নেয়। সহিংসতায় ছেয়ে দেয় গোটা দেশ। ২০১৮ সালে দলের নিবন্ধন বাঁচাতে বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো নির্বাচনে নামমাত্র অংশ নিয়েছিল। কিন্তু ভোটারের কাছে যায়নি। প্রচার করেনি। যে কারণে নির্বাচনের স্বাভাবিক ফলটাও পায়নি।
গত বছর বিএনপি দেশ জুড়ে দল সংগঠিত করতে সভা-সমাবেশ করতে থাকে। এসব সভা-সমাবেশ থেকে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো নিরপেক্ষ,নির্দলয়ী ও তত্ত্ববাধায়ক সরকারের অধীনে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানায়। গত বছরে এসব সভা-সমাবেশের এক পর্যায়ে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয়। সরকারকে আল্টিমেটাম দেয় ক্ষমতা ছাড়ার। প্রথমে ১০ অক্টোবর, পরবর্তিতে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের পতন হবেই হবে বলে তর্জন-গর্জন করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের এই তর্জন-গর্জন অসাড় প্রমাণিত হয়।
আমেরিকার উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরেই তাকিয়ে আছে মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর। যুক্তরাষ্ট্র্ও শেখ হাসিনার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে, বিভিন্নভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার উদ্যোগ নেয়। এসময় বিএনপির হয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিভিন্নভাবে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন। নানামুখি তৎপরতা চালিয়েছিলেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার। পশ্চিমা দেশগুলোকে জোটবদ্ধ করার চেষ্টাও করেন। ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করে পিটার হাস সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কখনও গোপনে কখনও প্রকাশ্যে সভা করেন। যা দেশি-বিদেশে বেশ সমালোচিত হয়েছিল।
গত ২৮ অক্টেবর বিএনপি রাজধানীর নয়পল্টনে যে সমাবেশ ডেকেছিল, সেই সমাবেশ ঘিরেও ছিলো নানান জল্পনাকল্পনা। এখানেও পিটার হাস ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পুলিশ, সাংবাদিকদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর হাসও ছিলেন তৎপর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।
এই অবস্থায় পিটার হাস গত সপ্তাহে নয়াদিল্লী গিয়েছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, তিনি ক্রিসমাস উদযাপন করতে দিল্লী গিয়েছেন। আবার বিএনপির তরফ থেকে নানাভাবে ইনিয়েবিনিয়ে বলা হয়েছে এবার নির্বাচন বন্ধ হবেই। কিন্তু পিটার হাস ব্যর্থ মনরথে ঢাকায় ফিরে আসার পর বিএনপি একেবারে চুপসে যায়। আর ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার নয়া দিল্লীতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচির সংবাদ সম্মেলনের পর, নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ার যে দিবাস্বপ্ন দেখছিল বিএনপি, সেটিও গুম হয়ে গেছে।
অরিন্দম বাগচি পিটার হাস বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি পরিস্কার করে বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান আগের মতোই আছে। বাংলাদেশের ঘরোয়া বিষয়। ভারত বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। ‘বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার হিসাবে, ভারত সেখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়’।
লেখক: সাংবাদিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
‘গুম’ হয়ে গেছে বিএনপির নির্বাচন বন্ধের দিবাস্বপ্ন নিজামুল হক বিপুল মুক্তমত