সাংবাদিক সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ নয়, প্রকৃত বন্ধু
১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪২
গণমাধ্যমকর্মীদের বলা হয় দেশের তৃতীয় নয়ন। সাধারণত গণমাধ্যম বলতে বোঝায় যার মাধ্যমে জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে জনগণের নিকট ও সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়। আর গনমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে যারা সহয়তা করে থাকে তাদেরকে গনমাধ্যমকর্মী বলা হয়।
দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমেই মুহূর্তেই জানা যায় দেশ-বিদেশে কখন কি ঘটছে, কিভাবে ঘটছে, কোথায় কি সমস্যা চলছে আবার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পন্থাও অনেক সময় গনমাধ্যমে তুলে ধরা হয়। একবার ভেবে দেখা যাক, একদিন যদি গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দিনটি কেমন ভাবে চলতে পারে? শুধুমাত্র জনগণই নয় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও এ মাধ্যমের মাধ্যমেই জানতে পারে দেশের কোনটা বড় সমস্যা, কোনটা করা জরুরী? বলতে গেলে এক কথায় গণমাধ্যমের মাধ্যমেই সব ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করা যায় এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। গণমাধ্যমে যারা কাজ করে তাদের বলা হয় গণমাধ্যকর্মী বা সাংবাদিক। সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মহান পেশা। পক্ষান্তরে বিপদজ্জনক পেশাও বটে। সাধারণত অন্যপেশায় কর্ম করলে কোনো ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু দেখবেন গণমাধ্যমে কোন সংবাদ কিংবা তথ্য প্রচার করলে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দুটোই কাজ করে।
দেশের সব ধরনের সংকটময় মুহূর্তে সরকার, প্রশাসন সহ গণমাধ্যমকর্মীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। যার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বছরখানেক পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেক মেধাবী সাংবাদিক অর্থাৎ গণমাধ্যম কর্মীর আকাল মৃত্যু হয়। সাধারণত শুধু রোগ-ব্যাধিতেই না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ মানুষ কর্তৃক সকল ধরনের সমস্যায় সাংবাদিকরাই থাকে সামনের লাইনে। এ ছাড়াও জনদুভোর্গের ক্ষেত্রেও সাংবাদিকদের কার্যক্রম অনস্বীকার্য।
দেশীয় বিচারিক কার্যালয় আদালত বলেন,যে সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। এই চতুর্থ স্তম্ভের অর্থাৎ সাংবাদিকরা যদি সজাগ থাকে, সাংবাদিকরা যদি সঠিকভাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে দেশের অন্য তিনটি স্তম্ভ এমনিতেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশাটি যেন কলঙ্কিত হয়ে হারাতে বসছে মানসম্মান। এর জন্য আবার দায়ীও কিন্তু কিছু অসাধু সাংবাদিক। সাধারনত সত্য খবর হুবহু ভাবে তুলে ধরতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে মতের অমিল বা বৈরিতা। সাংবাদিকেরই প্রতিপক্ষ হচ্ছে সাংবাদিক। কিন্তু মুলত সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ কি সাংবাদিক? আবার সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ কি সাংবাদিকদেরই হওয়া উচিত? মুরব্বিদের একটা কথা মনে পড়ে যায়, ঘরের ইদুর বান কেটে দিলে নাকি বান দিয়ে কুলানো যায়না। যার ফলশ্রুতিতে ঘরের শত্রুর কারণেই কিন্তু পরের শত্রুরা হচ্ছে আরো বেশি শক্তিশালী আর সাংবাদিকরা হচ্ছে হয়রানি সহ নানান ধরনের অপদস্ত। সাধারনত দেখুন যে সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতা বিশাল পক্ষান্তরে প্রাপ্তির জায়গাটাতে একদম নিম্ন মানে শুন্যের কোটায় ।
দেশের ক্ষমতাধর জনপ্রতিনিধি সহ সকল দপ্তরের কর্মকর্তারাই কিন্তু বলেন যে সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য পত্রিকার পাতায় তুলে ধরুন। অথচ দেখুন হটাৎ যদি তাদের কোন অপকর্ম, কুকর্ম তুলে ধরা হয় তখন তিনিই বলে বসেন যে সাংবাদিকরা আমার সম্মানে আঘাত করছে। আর হুমকি-ধামকিতো সাংবাদিকদের জন্য এখন ডালভাতে পরিণত হয়েছে। গুগলের সাহায্য নিয়ে যানা যায় (আসক) অর্থাৎ আইন সালিস কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ যাবতকাল পর্যন্ত অসংখ্য সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে সংকটের সম্মখীন হয়েছে। আর এরূপ কর্মকাণ্ড গণমাধ্যমের স্বাধীন ভাবে কলম চালানোর জন্য অশনিসংকেত। আর এমন অনেক উদাহরণ আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে।
দায়বদ্ধতার খাতিরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, হয়রানি সহ শারীরিক নির্যাতনের মত ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় এসব ঘটনা ঘটছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায়।
গণমাধ্যমের এই ক্রান্তিলগ্নে সকল সাংবাদিক একতাবদ্ধ না হয়ে নিজেদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ এর গতিবিধি তরান্বিত করা কি খুবই জরুরি?
যদি সেটা না হয়,তবে অন্তত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নিজেদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সকল সাংবাদিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল দুঃখে সুখে একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকা এখন সময়ের প্রয়োজন।
গ্রুপিং আর বিভিন্ন সংগঠন তৈরী হচ্ছে এখন বেঙ্গের ছাতার মত। কিন্তু এসব সংগঠন হওয়া উচিত সাংবাদিকদের দুঃখের হাতিয়ার,কোনো কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলন করতে দেখা গেলেও তা কেবল সংগঠনের সদস্যদের বিপদের সময় কিছুটা দিচ্ছে তোর ঝাপ, তবে সেটা শুধু সংগঠনের সদস্য নয় হওয়া উচিত সারা বাংলার সাংবাদিকদের বটবৃক্ষের মত।
সর্বশেষ কিছু দিন আগে তিন পার্বত্য জেলার সাংবাদিকদের নয়ন মনি সাংবাদিকদের আস্থার প্রতিক, এনটিভি ও বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর এর জেলা প্রতিনিধি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পত্রিকা ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর অনলাইন এর সম্পাদক ফজলে এলাহীকে বাসা থেকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, সে খবর মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা সহ অনলাইন মাধ্যমে সে সময়ে দেখা যায় এক ফজলে এলাহীর জন্য রাস্তায় দাঁড়ায় তিন পার্বত্য জেলা সহ বিভিন্ন অঞ্চলের নিবেদিত ফজলে এলাহীর হাজারো সহযোদ্ধা, সিনিয়র, জুনিয়র সহ তারই ভক্ত সাধারণ। বিপদে এটাই হওয়া উচিত সকল সাংবাদিকদের দুঃখ দুর্দশা আপদ বিপদের সময়, এটাই গনমাধ্যমের সৌন্দর্য, এটাই গণমাধ্যমের অস্তিত্ব রক্ষার হাতিয়ার, এটাই সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে কলম চালানোর সাহস। “ভাই ভাইয়ের পাশে দাঁড়াবে এটাই ধরার নিয়ম,বিপদে যে পাশে থাকে সে-ইতো আপন স্বজন!
আর সেজন্য ক্ষুদ্র একজন মফস্বল সংবাদকর্মী হিসেবে সকলের কাছে আমার একটাই আবেদন নিজেদের প্রতিপক্ষ নিজেরা না হয়ে, সকল সংবাদকর্মীর আপদে বিপদে পত্রিকার সম্পাদক কলা কৌশলী সহ সকল সাংবাদিক সংগঠন একতা বদ্ধ হয়ে একে অপরের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ুন। তাহলেই বেঁচে থাকবে সঠিক সাংবাদিকতা, অটুট থাকবে সাংবাদিক সংগঠন সহ সকলের বন্ধন। বৃদ্ধি পাবে একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
বিপ্লব ইসলাম মুক্তমত সাংবাদিক সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ নয়- প্রকৃত বন্ধু