ক্যান্সার প্রতিরোধ সচেতন হোন
১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩০
এক যুগ আগেও দেশে ক্যান্সারের রোগী ছিলো খুবই অল্প। গ্রামীণ জনপদের লোকেরা ক্যান্সার রোগের নাম ও অনেকে জানত না। কয়েকজন নাম জানলেও ক্যান্সারের ভয়াবহতা কিংবা পরিণাম সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা কারোরই ছিলোনা বললেই চলে। এর কারণ হলো আশে-পাশে কয়েক গ্রাম মিলে কয়েক বছরেও কোন ক্যান্সার রোগীর খবর পাওয়া যেত না। গ্রামের মানুষের ধারণা ছিলো এটি শহরের একটি রোগ এবং এটি শুধু বিত্তশালী লোকদের হয়ে থাকে। তবে, সময়ের সাথে বদলেছে দৃশ্য এখন আর ক্যান্সার বিত্তশালীদের রোগ নয়, গ্রামীণ জনপদের দরিদ্র মানুষদেরও ছাড়ছেনা মরণ ব্যাধি রোগ ক্যান্সার। গ্রাম কিংবা শহর সবখানে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার রোগী।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিউট ও হাসপাতালের তথ্য মতে, ২০১২ সালেও হাসপাতালটি বহির্বিভাগে রোগী ছিল বছরে ৫৯ হাজার। তবে দেশে বর্তমানে ১৫ লাখেরও বেশি সংখ্যক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বয়েছে বলছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্যান্সার সোসাইটি। এর মধ্যে করোনা কালীন সময়ে অর্থাৎ ২০২০ সালে সনাক্ত হয়েছিলো ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন্ একই সময়ে মৃত্যু হয়েছিলো লাখ ৯ হাজারেরও বেশি ক্যান্সার রোগী।
পরিবেশ দূষণ, খাদ্যে ভেজাল এং অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনেরের কারণে বাড়ছে নানা রোগ। নানা রোগের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা রকম ক্যান্সার ও। এসব ক্যান্সার বৃদ্ধির মূলত কারণগুলো হলো, পরোক্ষ ধুমপান ও প্রত্যক্ষ ধুমপান, তামাক সেবন, পরিবেশ দূষণ,খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি, শাকসবজি ও ফলমূলে কীটনাশক প্রয়োগ, প্রিজার্বড ফুড খাওয়া ইত্যাদি। ক্যান্সার সহ নানা রকম রোগ সৃষ্টির উপাদান গুলো বন্ধের না আছে সরকারি কোন জোরালো ভূমিকা, না আছে নাগরিক সচেতনতা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশক পর ক্যান্সার কি মহামারি আকার ধারন করবেনা? এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসার সামর্থ্য ক’জনেরই আছে দেশে?
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন ১৫ লাখের মতো ক্যান্সার রোগী। প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে আরো প্রায় তিন লাখ। তাদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার আওতায় আসে অল্প সংখ্যক রোগী । বাকিরা চিকিৎসার বাইরে থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
দেশে ক্যান্সার রোগীদের সব চেয়ে বড় যে কয়টি সমস্যায়পড়েন তার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো রোগ নির্ণয় করা। বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগ নির্ণয় করতেই কয়েক বছর লেগে যায়। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, কয়েক বছর সঠিক রোগের কোন ঔষধ-ই পান না। এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতাল দৌড় আর হাজার রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষায় কয়েক লক্ষ টাকা চলে যায় । অধিকাংশ রোগী ক্যান্সার হয়েছে এটি জানতে পারে রোগের শেষ ধাপে, এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করা গেলেও বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে।
তবে সব থেকে পিছিয়ে আছে নারীরা এবং গ্রামীণ জনপদের দরিদ্র মানুষেরা। নারীরা রোগের প্রভাব তীব্র নাহলে লজ্জায় কাউকে প্রথমে বলতে চান না। পরে বললেও পরিবারের কর্তা অনেক সময় গুরুত্ব দেন না। অনেক নারী চিকিৎসার ব্যয় বেশি হওয়াতে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে মাঝ পথেই চিকিৎসা ছেড়ে দেন। আর গ্রামের লোকেরা অনেকে রোগের শুরু থেকে পল্লি চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে নিতে রোগের শেষ ধাপে নিয়ে যান। রাষ্ট্রের এই জায়গায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মেডিকেল সায়েন্সে যেখানে প্রযুক্তির এত উন্নতি , সেখানে এখনও আমরা পিছিয়ে। ডায়াগনোসিস করতে পারছি না। এ ব্যপারে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে, দরিদ্র নারীদের জন্য চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে অন্তত উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
ক্যান্সারের দ্রুত প্রসার রুখতে হলে প্রয়োজন প্রতিরোধ। খাদ্যে ভেজাল রোধে সরকার নিতে হতে কঠোর পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতে হবে আন্তরিক। ভেজালকারীদের বিচার দ্রুততর করা এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। কৃষকরা শাকসবজি ও ফলমূলে যাতে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক বা ফরমালিন মেশাতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। বাজারগুলোতে নিয়মিত এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাছ, মাংস, দুধেও ক্ষতিকর রাসায়নিক বা বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পশু পাখির ও মাছের খাদ্যেও যেন কোন ক্ষতিকারক পদার্থ না মিশে, সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। তাই এগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। পরিবেশদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা এখন সারা পৃথিবীতেই একটি নিকৃষ্ট শহর। এটিও ফুসফুসের ক্যান্সার বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ। সেই সঙ্গে আছে পানিদূষণ, মাটিদূষণ। এগুলো কমাতে হবে। এছাড়াও মানুষকে খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ক্যান্সার বৃদ্ধির এই গতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে মহামারী আকার নিতে খুব বেশি দেরী নেই। তাই নিজে হোন এবং অন্যকে সচেতন করুন।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই