Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধানমন্ত্রীর ম্যাজিক: শিক্ষায় তারুণ্যের জয়

বিপ্লব বড়ুয়া
১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৬

নতুন শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করার পরপরই শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আসার ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে যেন অভিভাবকদের মনের কথা, আগ্রহের কথা, আক্ষেপের কথা বুঝলেন। এই কথার মধ্যে দিয়ে অভিভাবকদের মনে নিঃসন্দেহে আনন্দের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশে-বিদেশে কতকিছুই না ঘটল। বিদেশীরা যা করতে পারেনি তার চেয়ে ঢের বেশি করেছে দেশের মানুষরা। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি একজন পুলিশকে উপুর্যপুরি মারধরের পর হত্যা, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ। ট্রেনের অগ্নিকান্ডে জ্বলন্ত পুড়ে ছাই হতে হয়েছে কিছু মানুষ নামের নরপশুর হাতে। কী বিভৎস চিত্র যে দেশবাসীকে দেখতে হলো। এছাড়া তো প্রতিদিন গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেশের সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। এই চিত্র দেশি-বিদেশি মানুষের মনে তীব্র ঝড় তুলেছে। যা এক ঘৃন্য মানসিকতার পরিচয়। এতকিছুর পরও বড় কোনও অঘটন ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে যে চক্রান্ত দেশের মানুষ সন্ধিহান ছিল, আদৌ নির্বাচন হতে পারবে কি-না। নির্বাচনের পর যে নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হলো সেখানেও চমক দেখিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

অনেক ঝানু মন্ত্রী এবার মন্ত্রীসভা থেকে বাদ গেলেন। ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হলো। এবারের মন্ত্রীসভাতে রাজনীতিতে একেবারে ‘অখ্যাত’ কিছু মুখ যুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন তা শুধু অবিশ্বাস্য নয়, বিস্ময়করও বটে। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ের মন্ত্রীসভায় কনিষ্ঠতম মন্ত্রী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর ছেলে চট্টগ্রাম সদর আসন (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) থেকে নির্বাচিত মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি এই আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। গতবারের মন্ত্রীসভায় তাকে দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা উপমন্ত্রীর পদ। আর এবার পেলেন শিক্ষামন্ত্রীর পদ। তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কতখানি আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে শিক্ষার নতুন যুগে পদার্পনের এই সময়ে এতবড় পদটি অর্পন করতে পারেন- তা অনেকের কল্পনার জগৎকে ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে বিগত মন্ত্রীসভা থেকে বাঘা বাঘা মন্ত্রীরা ঝরে পড়লেন সেখানে মন্ত্রীসভার সর্বকনিষ্ট সদস্যের হাতে তুলে দিলেন একটি বড় পদ- এতেই বোঝা যায় নওফেলের কর্মপরিধি কতখানি বিস্তৃত, কতো গভীর। এখন অনেকের মুখ থেকে একটি কথা বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে সেটি হচ্ছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর ম্যাজিক: মন্ত্রীসভায় তারুণ্যের জয়জয়াকার’।

বিজ্ঞাপন

যাই হোক মহিবুল হাসান চৌধুরীর এই অর্জনে পুরো চট্টগ্রামবাসী আনন্দিত ও গর্বিত। এমনিতেই নওফেল একজন ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব। সভা-সমাবেশে তার অনেক কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি বেশি কথা বলেন না। যিনি কম কথা বলেন, তার ভুলের মাত্রা থাকে কম। আমার মনে হয়, ব্যারিষ্টার নওফেল সে পদ্ধতিটা অবলম্বন করেন। তিনি বক্তৃতায় যা বলেন অত্যন্ত গুছিয়ে বলে শেষ করেন। তার এই অভাবনীয় গুণটি ইতোমধ্যে অনেকের চোখে ধরা পড়েছে। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী থাকাবস্থায়ও অনেক ভাল কাজ দেখিয়েছেন যেখানে যা বলার অত্যন্ত সাবলীলতার সাথে তিনি উপস্থাপন করতেন। আশা করি বর্তমানে তার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হলো সেটিতেও তিনি উতরে যাবেন।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে কটি বিষয় নিয়ে সাধারণ নাগরিকরা চিন্তিত, তার একটি হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমের নতুন শিক্ষাপদ্ধতি। বিগত বছর থেকে এই নতুন শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও তা পুরোদমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এই না পারার দরুণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। আমি যদি আমার কথা বলি আমার ছোট সন্তান এ বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেণিতে উঠল। ৬ষ্ঠ শ্রেণি ছিল নতুন কারিকুলামের। নতুন কারিকুলাম হওয়ায় শিক্ষকদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং না দিয়েই চালু করে দেওয়া হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকরা পূর্ণ ট্রেনিং ব্যাতিরেকে ক্লাস নেয়। এতে দেশজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সরকার বনাম শিক্ষার্থি ও অভিভাবকরা একরকম মুখোমুখি অবস্থান নেন। একদিকে শিক্ষকরা পড়ানোর নিয়মকানুন না বোঝার কারনে এই দুঃসংবাদ অভিভাবকদের গায়ে এসে ঠেকে। বলতে গেলে এক ভজঘট পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থিদের বছরটি কেটেছে। লেখাপড়ার তেমন কোনও চাপ ছিল না।

মোদ্দা কথা গত এক বছর অভিভাবকরা নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন। চলতি বছর যাতে এ অবস্থা না হয় সে ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া ভবিষৎ অন্ধকার। শিক্ষা দিয়ে অন্ধ কুসংস্কারকে জয় করতে হবে। কেউই সরকারের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধ নয়। তবে এই কারিকুলাম চালু করার আগে পূর্ণাঙ্গরুপে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল। যেখানে ক্লাসের শিক্ষকরা পড়ানোর নিয়মকানুন সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত নন সেখানে অভিভাবকরা কিভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাবে। আশা করবো, সে অবস্থা থেকে উন্নতি ঘটবে। যাই হোক, শিক্ষামন্ত্রণালয় এখন নতুন মন্ত্রী পেয়েছে তিনি দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে বসবেন এবং একই সাথে অভিভাবকার কি বলতে চায় সেদিকেও গুরুত্ব দেবেন।

বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকরা মনে করেন বয়সে নবীন হলেও একজন যোগ্য মানুষের হাতে শিক্ষার ভার তুলে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও কীভাবে যুগোপযোগী করে আধুনিকায়ন করা যায় সে ব্যাপারে আরও বেশি মনোযোগী হবেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নততর করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বাংলার আঠার কোটি জনগণের এই একমাত্র প্রত্যাশা।

লেখক: সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

প্রধানমন্ত্রীর ম্যাজিক: শিক্ষায় তারুণ্যের জয় বিপ্লব বড়ুয়া মুক্তমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর