Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: শিক্ষার্থিরা চিন্তামুক্ত হবে কবে?

বিপ্লব বড়ুয়া
২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৪

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০৪১ সালে সোনারবাংলাকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ইতিমধ্যে দেশে অনেক সাফল্য দেখিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্ন সফলতার পরেও দেশের হাতেগোনা ৪/৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় অভীন্ন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপন করাকে শিক্ষার্থি ও অভিভাবকবৃন্দ কেউ ভালো চোখে দেখছে না। দীর্ঘ সময়ক্ষেপন করা অনেকে দুরভিসন্ধি-অবহেলা মনে করেছেন। পরীক্ষা পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার যে অপচয় হয়, এই অপচয় রোধে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে। আমরা প্রত্যেকে জানি, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সমগ্র বিশ্বব্যাপী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে সময়োপযুগী কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়। অন্যান্য দেশের শিক্ষাদান পদ্ধতির সাথে আমাদের দেশের শিক্ষা পদ্ধতিতে আছে বিস্তর ফারাক। পরিচালনা পদ্ধতিতে আছে বড় ধরনের গাফিলতি। আছে ভর্তি ফি, সেশন ফি, সেমিস্টার ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে হযবরলতা। সঠিক তদারকি না থাকার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খেয়ালখুশি মতো প্রতিবছর যথেচ্ছভাবে বিভিন্ন রকমের ফি আদায় করছে। সরকার মাধ্যমিক ও কলেজ শাখায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বেসরকারি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। বেসরকারি মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কর্র্তৃক সহনীয় পর্যায়ে সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্যতা দূর করতে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার মানসিকতার পরিবর্তে ব্যবসায়িক মনেবৃত্তি বাড়াতে দিলে অদূর ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। আজকের লেখাটি মুলত উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ প্রত্যাশি শিক্ষার্থি ও তাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তাকে কেন্দ্র করে। একজন শিক্ষার্থি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বিভিন্ন মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার আবেদন করতে গিয়েই অনেকটা ঝড়ে পড়ে। তার কারণ, সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে হারে ভর্তির আবেদন ফি ধার্য করা হয়, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বহু অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থিরা অংশ গ্রহণ করতে পারছেনা। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের সময় দেশের গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা কোনোভাবে সমীচীন নয়।

বিজ্ঞাপন

এইচএসসি শেষ করে শিক্ষার্থিদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় উচ্চশিক্ষা লাভে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ¯œাতক শ্রেণিতে ভর্তির। বাংলাদেশে এই ভর্তিযুদ্ধ একটি জটিল প্রকৃতির। তার ওপর আছে আসন সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে শিক্ষার্থির অভিভাবকরা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয় পড়ে আবেদন ফরমের ফি জমা দিতে দিতে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো আলাদা আলাদাভাবে বড় অংকের ফি নিয়ে থাকে। পরীক্ষার ফলাফল যাই হোক না কেন, আমি মনেকরি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা একজন শিক্ষার্থির নৈতিক অধিকার। অথচ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থিকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে দূরে থাকতে হয়। তাই সংগত কারণে ভর্তি পরীক্ষা ফি মুক্ত করা দরকার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একজন শিক্ষার্থি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে আসা-যাওয়া, থাকাতেই যেখানে হাজার হাজার টাকা অপচয় করতে হয় সেখানে উপরোন্তু অতিরিক্ত ভর্তি ফি একজন শিক্ষার্থি ও অভিভাবকের জন্য একটি বিশাল বোঝা নয় কি? মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং লেভেলে পড়ার ক্ষেত্রে যোগ্যত্য থাকা স্বত্তেও অসচ্ছল দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থিরা অতিরিক্ত ফি পরিশোধের কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি থেকে ছিটকে পড়ছে। এ বিষয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনা আশা করছি।

বিজ্ঞাপন

দেশের সুনামধন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেকের পড়ার ইচ্ছা থাকে কিন্তু অর্থনৈতিক দীনতায় তারা সে আশা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ জাতীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু সরকার নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সবক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গুচ্ছতে রুপান্তর করে সকল শিক্ষার্থিদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। সেই সাথে ভর্তির আবেদন ফি তুলে নেওয়া, নয়তো একটি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃপক্ষ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেশ ক’বছর ধরে একটি গুচ্ছতে একত্রিভূত করে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একগুয়েমী অবস্থার কারণে তা কার্যকর পারেনি। যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতির সহায়তায় অনেক কঠিন কাজকে সহজ করে দিচ্ছে সেখানে এ দুরাবস্থা থেকে শিক্ষার্থি ও অভিভাবকরা উত্তরণ চায়। দেশে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা একসাথে হতে পারলে এই গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে ভর্তি পরীক্ষা হতে বাঁধা কোথায়? এভাবে বছরের পর বছর কেন শিক্ষার্থি ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে।

বর্তমানে দেশে মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৪ টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত সংখ্যা ১১২ টি। এছাড়া ৩টি আছে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অভিন্ন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার ফলে অল্প খরচে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থিরা যোগ্যতার ভিত্তিতে যে যেখানে পড়ার সুবিধা পাচ্ছে। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেখানে একসাথে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করছেন সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বছরের পর বছর কালক্ষেপন কিসের আলামত। এ জাতিয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে একেক ইউনিটে ভর্তি ফরম পুরণ আবেদনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে এটি শুধু অযোক্তিক নয় অনৈতিকও বটে। এর একটা অবশ্যই বিহিত ব্যবস্থা করা জরুরি। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিঃশ্চয়ই অবগত আছেন শিক্ষার্থিদের যোগ্যতা যাচাই করে নিতে একজন শিক্ষার্থিকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়। পছন্দের বিষয় ও প্রতিষ্ঠান খুজে পেতে একজন শিক্ষার্থিকে কম করে হলেও ৮ থেকে ১০ টি প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। উদাহরণ স্বরুপ যদি বলি, কক্সবাজার-টেকনাফ কিংবা পঞ্চগড়-তেতুলিয়া থেকে একজন ছেলে বা মেয়ে শিক্ষার্থি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে কতটাকা রাস্তায় ফেলে দিতে হয়। এই শিক্ষার্থিদের সাথে যদি একজন করে অভিভাবক থাকে তাহলে কী পরিমান খরচ পরে। যদি একেকটি পরীক্ষায় আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হয় তাহলে আট/দশটি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে খরচ গুণতে হয় ৮০/৯০ হাজার টাকা। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষা ঘনিয়ে আসলে দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থি-অভিভাবক মন্ডলীগণ এক ঘোর অমানিশায় দিন কাটায়। ভর্তি পরীক্ষা সহজীকরণ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় শোরগোল পড়ে যায়। কোনোরকমে পরীক্ষাটা নিয়ে ফেলতে পারলে আলোচনাও শেষ, জোর তদবিরও শেষ হয়ে যায়। আলোচনার বিষয় থেকে আবার পুরো একটি বছর নিশ্চুপ হয়ে পড়ে। এভাবে বছরের পর বছর আর কতো শিক্ষার্থি তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে কেউ কী বলতে পারেন? বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ও শিক্ষকবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই শিক্ষার্থি/অভিভাবকদের এই অভিযোগটি আমলে নেওয়ার কী কোনোরকম সুযোগ নেই? আপনারা কী পারেন না, একটু সদয় হয়ে সকল শিক্ষার্থির জন্য এই সুযোগটি করে দিতে? এবছর আমার সন্তান উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আগামী বছর আপনার সন্তান কিংবা কাছের দূরের অনেক নিকট আত্মীয়ের সন্তানও অর্থনৈতিক কারণে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে। অতএব শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আশু এই বিষয়ে যদি একটি সমাধানে আসা যায়, তাহলে অনেক শিক্ষার্থি ঝড়ে পড়া থেকে ঘুরে দাঁড়াবে। আর দেরী না করে সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির উচিত এই বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণে কঠোর হওয়া। যেকোনো উপায়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শিথিল, সেমিষ্টার ফি, ভর্তি ফি’তে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে অনেকের ধারণা। এর ফলে দেশের শিক্ষাপদ্ধতিতে নতুন গতি ফিরে পাবে বলে দৃঢ় প্রত্যাশা।

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

বিপ্লব বড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর