Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কৃষিশুমারি: প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীই অর্থনীতির প্রাণ

ড. মিহির কুমার রায়
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:০০

কৃষি বাংলাদেশের গ্রামীন অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত বিশেষত খাদ্য উৎপাদনে তথা গ্রামীণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হওয়ার কারণে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩. ৪৭ শতাংশ, ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, শ্রমশক্তির ৪০. ৬২ শতাংশ এখনো কৃষিতে নিয়োজিত বিধায় কৃষি এখনো নিয়োগের বড় ক্ষেত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষত: বৈষ্যিক মন্দার কারনে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুকি এড়াতে । সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক রুপান্তর হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ইফপ্রি), বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেশের চরম দারিদ্র্য ২০১৯-২০ সালে ১০ শতাংশ নিরসনে কৃষি উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইফপ্রির বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ধান, পাট, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, আলু, সবজি ও মাছ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বার্ষিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি প্রতিবেদন ২০১৯ অনুযায়ী, স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫১ বছরে দেশের প্রধান প্রধান শস্য উৎপাদন তিন থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ইতোমধ্যে দানাদার ফসলের উৎপাদন সাড়ে ৪ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টন প্রায়। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ধান, গম ও ভুট্টাসহ দানাদার ফসলের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৫৫ লাখ টন। এছাড়া কন্দাল ফসলের (আলু, শাকসবজি, পাট ইত্যাদি) উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৯৭ লাখ টনের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে জানা যায়, মাথাপিছু বার্ষিক চালের (দানাদার) চাহিদা ১৫২ কেজি। এতে করে ১৬ কোটি ৬৪ লাখ জনসংখ্যার জন্য বার্ষিক চাহিদা ২ কোটি ৫৩ লাখ টন। যদি জনসংখ্যা ১৭ কোটি হয়, তাহলে বার্ষিক চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি টন। অর্থাৎ বর্তমানে চাহিদার চেয়ে খাদ্যের উৎপাদন বেশি । এই সকল সাফল্যের দাবিদার দেশের অগনিত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা যা সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে উঠে এসেছে । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে ৯১.৭ শতাংশই ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার। অর্থ্যাৎ কৃষিশুমারি ২০১৯-এর প্রতিবেদনে ৫ শতাংশের বেশি ভূমির মালিক কৃষক পরিবারগুলোকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে যেমন ৫ থেকে ২৪৯ শতক জমি রয়েছে এমন পরিবারগুলোকে ক্ষুদ্র, ২৫০ থেকে ৭৪৯ শতক জমি রয়েছে এমন পরিবারগুলোকে মাঝারি এবং ৭৫০ শতকের বেশি জমি রয়েছে এমন পরিবারকে বড় শ্রেণী ধরা হয়েছে। ২০০৮ সালে ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ, যা মোট কৃষক পরিবারের ৮৪ . ৩৯ শতাংশ, ২০১৯ সালে ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫৫ লাখে অর্থাৎ্ পরের ১১ বছরে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১.৭ শতাংশে। ২০০৮ সালে মাঝারি পর্যায়ের কৃষক পরিবার ছিল প্রায় সাড়ে ২১ লাখ ৩৬ হাজার বা ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, পরের ১১ বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৩ লাখ বা ৭ দশমিক ৭ শতাংশে, আর ২০০৮ সালে বড় কৃষক পরিবারের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার বা ১. ৫৪ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার বা ০.৬০ শতাংশে। দেশে মোট পরিবার রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫২ হাজার ২৯৬টি, এর মধ্যে কৃষক পরিবার রয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৯টি, আর বাকি ১ কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার ৭৫৭টি পরিবার কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। গত ১১ বছরে পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে কৃষক পরিবারের সংখ্যাও। ২০০৮ সালে মোট পরিবার ছিল ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৩টি। এর মধ্যে কৃষক পরিবার ছিল ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি। এতে দেখা যায় বৃহত্ পরিবারগুলো দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ফলে পারিবার ভেদে কৃষিজমির পরিমাণও কমছে। এতে মাঝারি ও বৃহত্ শ্রেণীর কৃষক পরিবারের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছোট কৃষক পরিবারের হাতেই এখন দেশের কৃষি। পরিবারগুলো যত ভাঙছে, জমি ততই ক্ষুদ্রাকৃতির হচ্ছে। এটাই বাস্তবতা, বড় ও মাঝারি কৃষক পরিবার ছোট হচ্ছে, ছোটরা আরো ছোট হচ্ছে। দেশে দিন দিন বাণিজ্যিক কৃষি খামার গড়ে উঠছে, ছোট কৃষক ছোট হতে হতে যখন একেবারেই ভূমিহীন হয়ে যাচ্ছে তখন তারা বাণিজ্যিক কৃষির আওতায় চলে আসছে। দেশের কৃষি খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে কৃষিতে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারি পর্যায়ে অর্থাৎ্ সরকারকে সার ও বীজে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে, এজন্য ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, কৃষকরা এখন টাকার জন্য মহাজনের দ্বারস্থ হচ্ছেন, এতে দরিদ্র কৃষক আরো বেশি দরিদ্র হচ্ছে। কৃষকদের যদি কৃষিকাজে ধরে রাখতে না পারা যায়, তাহলে কিন্তু সামনে কৃষি উৎ্পাদন আরো ব্যাহত হবে।’

বিজ্ঞাপন

শুমারিতে দেখা যায়, গত ১১ বছরে কমেছে নিট আবাদি জমির পরিমাণঅর্থ্যাৎ ২০০৮ সালে নিট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৯ একর, ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৪ একরে। তবে এ সময়ে ফসলের নিবিড়তা প্রায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে, ২০০৮ সালে ফসলের নিবিড়তা ১৭২ শতাংশ থাকলেও ২০১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২১৪ শতাংশে অর্থাৎ্ কৃষি জমিতে গড়ে বছরে দুটির বেশি ফসল আবাদ করছেন কৃষক। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে আউশ মৌসুমে ধানের চাষ কিছুটা কমলেও উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে আমনের আবাদি জমি। ২০০৮ সালে ৯৩ লাখ ৬১ হাজার একরে আমনের আবাদ হলেও ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার একরে, আর বোরোর উৎ্পাদন ১১ বছরে ১ কোটি ১ লাখ থেকে বেড়ে ১ কোটি ১১ লাখ একরে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আলু, গম, ভুট্টা, পাট ইত্যাদি ফসলের আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে।এদিকে কমেছে কৃষি মজুর পরিবারের হার। ২০০৮ সালে কৃষি মজুর পরিবারের হার ছিল মোট পরিবারের ৩০ . ৮২ শতাংশ, ২০১৯ সালে তা কমে ২৫.৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে সংখ্যায় কৃষি মজুর পরিবার এ ১১ বছরে ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪০২ থেকে বেড়ে ৯২ লাখ ৮৯৫টিতে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সেচনির্ভর জমি এ সময়ে ১ কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৩২৯ থেকে বেড়ে ১ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার ৩২১ একরে দাঁড়িয়েছে।

কৃষিশুমারিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎ্পাদিত গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির উৎ্পাদন বাদ দেয়া হলেও গরু উত্পাদনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যের সঙ্গে বড় ধরনের গরমিল দেখা দিয়েছে। কৃষিশুমারিতে ২০১৯ সালে বাণিজ্যিক খামারের গরু ছাড়াই গরু সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পারিবারিক ও বাণিজ্যিক খামার মিলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে গরু ছিল ২ কোটি ৪৩ লাখ ৯১ হাজার।

কৃষিশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে গরুর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮ হাজার, এছাড়া ছাগলের সংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার, মহিষের সংখ্যা ৫ লাখ ৪১ হাজার ১৮৪ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৬টি, মুরগির সংখ্যা ৯ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার থেকে ১৯ কোটি ৯৪ লাখ ৩ হাজার এবং হাঁসের সংখ্যা ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৩৩ হাজার থেকে বেড়ে ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৯৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের হার বাড়বে এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ বাবার যদি বেশি সন্তান থাকে, তাহলে সে জমি তাদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, এতে যিনি মাঝারি ছিলেন তিনি ক্ষুদ্র হয়ে যাচ্ছেন আবার যিনি বৃহৎ্ ছিলেন তিনি মাঝারি পর্যায়ে চলে আসছেন। এতে পরিবারের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের হারও বাড়ছে। সরকার উৎ্পাদনশীলতার দিকে জোর দিচ্ছি যেখানে বছরে এক ফসল ছিল সেখানে দুই ফসল এবং যেখানে দুই ফসল ছিল সেখানে তিন ফসল চাষের ব্রবস্থা হয়েছে, অনেক কৃষক তার জমিতে বছরে পাঁচটি ফসলও করছেন। কারণ খাদ্য উৎ্পাদন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। এতে মাটিতে এক ধরনের প্রভাব পড়বে এটা স্বাভাবিক। বিশেষ করে জৈব উপাদানগুলো কমে যাবে। সরকার প্রত্যেক উপজেলায় সার ব্যবহারের নির্দেশিকা দিয়েছেও মাটির গুণাগুণ কীভাবে ঠিক রাখতে হয় সে বিষয়েও পরিকল্পনা রয়েছে।’

প্রাচীনকাল থেকেই দেশের কৃষি খাত টিকিয়ে রেখেছেন প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা। বড় পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়ায় বড় ও মাঝারি শ্রেণীর কৃষক পরিবারগুলো দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। এখানে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই কৃষকের পরিপূর্ণ তথ্য নেই। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাছে কৃষকের তথ্য থাকলেও সেটি পূর্ণাঙ্গ নয়। খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছেই প্রান্তিক কৃষকের সঠিক ডাটাবেজ নেই। সঠিক ডাটাবেজ না থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রান্তিক কৃষকের কৃষিঋণের সুবিধা প্রদান কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে কৃষকের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সম্পন্ন হয়নি এখনো। ফলে উচ্চমূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক দুর্দিনেও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইতিবাচক বিষয় হলো, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাšিন্তক কৃষকের ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দ্রতই এ কাজ সম্পন্ন করা দরকার, একই সঙ্গে কৃষকের তথ্যের নির্ভরযোগ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে।

করোনা সংকটকালে সবচেয়ে বেশি ভরসা জুগিয়ে গেছে কৃষক, মহামারী, অর্থনৈতিক মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষককে আহত করলেও কাবু করতে পারেনি। ২০২০-২১ সালে দুই দফার বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আম্পান সামলে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন অনাদিকালের সেই কৃষক। লকডাউনের মধ্যেও যে মানুষ কষ্টে হলেও খেতে পেয়েছে, সেটা তাদেরই কৃতিত্ব। বাংলাদেশে করোনাকালে খাদ্য উৎপাদন বহাল অবস্থায় ছিল, তার কৃতিত্ব বৃহত্তর কৃষক সমাজের। সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন ফসলের ওপর ঋণদান কার্যক্রম হাতে নেয়। তবে বিশেষ করে কিছু ঋণ আছে আবার ভর্তুকি পর্যায়ের। কিছু ঋণ আছে আবার বাণিজ্যিক। ফসলের ঋণ কৃষক ফসল ঘরে তুললেই পরিশোধ করতে হয়। আর বাণিজ্যিক ঋণ প্রথাগত নিয়মেই বিতরণ করে থাকে ব্যাংকগুলো। তবে ভর্তুকি ঋণের হিসাবটা অবশ্যই আলাদা। দেশের স্বার্থে সরকার প্রতি বছর বিশেষ কিছু ফসলের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ করে থাকে, তার মধ্যে মসলা, ডাল এবং দুগ্ধজাত গাভীর জন্য এ ঋণের পদক্ষেপ নেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্র্রান্তিক কৃষকের সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকায় কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। এখন কৃষক শুধু খাওয়ার জন্যই পণ্য উৎপাদন করে না, তার অনেক বাজারসংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন। কৃষকের শুধু উৎপাদন উপকরণেরই প্রয়োজন হয় না, তার জীবন ধারণের জন্য অর্থের প্রয়োজন। এর জন্যও পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত খুবই জরুরি। দেশের কৃষকসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতের বাইরে পড়ে আছে এবং এ শ্রেণীর মানুষের জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। বিশেষ ভর্তুকি ও প্রণোদনার যেসব কর্মসূচি নেয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করবে, ওই ডাটাবেজ অনুযায়ী বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃত কৃষক চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দেবে, ব্যাংকিং সেবাকে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে, এজন্য ঋণের আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করাসহ হাটবাজারে প্রকাশ্যে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে নানা সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সেখানে কৃষকের প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন জরুরিযা দ্রতই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। প্রান্তিক কৃষকের তালিকা প্রণয়নের সময় কোনো ধনী কৃষক অন্তর্ভুক্ত না হন সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তা হলেই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা সাবলম্বী হবে এবং দেশ স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাবে।

লেখক: কৃষি অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

সারাবাংলা/এসবিডিই

কৃষিশুমারি: প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীই অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্র ড. মিহির কুমার রায় মুক্তমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর