উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফল বিপর্যয় ও উচ্চশিক্ষায় ভর্তি
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪১
গত বছরের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪। গতবার এই হার ছিল ৮৪ দশমিক ৯৫। সেই হিসাবে এবার পাসের হার ৭.৩১ শতাংশ কমেছে। ফলে, ছেলেদের থেকে ৩.৮১ পয়েন্ট বেশি এগিয়ে আছে মেয়েরা। করোনাকালীন পিছিয়ে পড়া লেখাপড়ার সমন্বয় করতে সিলেবাস কমিয়ে ছোট করা হয়। সেই স্বল্প সিলেবাসের এটিই শেষ পরীক্ষা। তবে ফল বিশেষত: গত তিন বছরের তুলনায় পাসের হারের দিক থেকে নিম্নমুখী যা একটি শুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন শিক্ষা গবেষকগণ । কারণ পরীক্ষা দিলেই এ প্লাস; এ কৃষ্টি থেকে বেড়িয়ে আসার এটাই প্রকৃষ্ঠ সময় যা একটি গুনগত পরিবর্তনও বটে।
পরীক্ষার ফলাফলে বিশ্লেষণে দেখা যায় যে এবারে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন। সার্বিক পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০২২ সালে এই পরীক্ষার্থীয় অংশ নিয়েছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন। সেই হিসাবে এবার এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে। এদিকে, চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৯২ হাজার ৩৬৫ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ২০২২ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। গতবারের তুলনায় এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কমেছে। গতবারের তুলনায় ৮৩ হাজার ৯১৭ জন কম পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা। চলতি বছর উত্তীর্ণ ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ হাজার পরীক্ষার্থীরা মধ্যে ছাত্রী ৫ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি ও ছাত্র ৫ লাখ ২৮ হাজারের বেশি জন। পাসের হারেও এগিয়ে ছাত্রীরা। ছাত্রীদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষার্থী। আর পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন ১৩ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী। করোনা মহামারীর পর প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হওয়ায় গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে বলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা মনে করছেন। দেশে করোনা মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। ২০২১ সালে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন, ২০২০ সালে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। এ বছর বিদেশের আটটি কেন্দ্রে মোট ৩২১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, এরমধ্যে পাস করেছে ৩০৩ জন। পাসের হার শতকরা ৯৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। টানা তিন বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার পর একটি বিষয় বাদে সব বিষয়ে ২০২৩ সালে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসে ছাত্রছাত্রীরা। চলতি বছর শুধু তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে পরীক্ষা হয়। বোর্ডওয়ারি ফলাফলে এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, কুমিল্লায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায় যে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ইংরেজি বিষয়কে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। অথচ ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, এ বিষয়েই সর্বাধিক ছাত্রছাত্রী ফেল করছে। এবারের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলাফলেও সে চিত্র ফুটে উঠেছে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক পাসের হার সবচেয়ে বেশি বাংলায়, ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ইংরেজিতে, ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আইসিটি ও পদার্থবিজ্ঞানে ৯২ দশমিক ৪৬, রসায়নে ৯২ দশমিক শূন্য ৭, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৮৪ দশমিক ৯৬ ও পৌরনীতিতে গড় পাসের হার ৯৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। চলতি বছরে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ইংরেজিতে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড, পাসের হার ৭৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে ঢাকায় ৮৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৩ দশমিক ১৮, কুমিল্লায় ৮১ দশমিক ৯৮, যশোরে ৭৭ দশমিক ৩৬, চট্টগ্রামে ৮৮ দশমিক ৯১, বরিশালে ৮৬ দশমিক শূন্য ১, সিলেটে ৮২ দশমিক ১৯ ও দিনাজপুরে ইংরেজিতে পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বিগত কয়েক বছরের ফলাফল তুলনা করে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রতি বছরই অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ইংরেজিতে খারাপ ফলাফল করেছে। তবে গত দুই বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া পরীক্ষায় পাসের হার কিছুটা বেড়েছিল। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ইংরেজিতে পূর্ণ নম্বরেই পরীক্ষা দেয় শিক্ষার্থীরা। ওই বছর সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বিষয়টিতে গড় পাসের হার ছিল প্রায় ৯১ শতাংশ, যা এবারের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ইংরেজি-ভীতি, শিখন পদ্ধতির জটিলতা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব এবং করোনাকালীন শিখন ঘাটতিই শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে খারাপ ফলাফলের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইং থেকে করা সমীক্ষায় বা জরিপেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তাতে দেখা যায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে ভীষণ দুর্বলতা নিয়ে মাধ্যমিকের গন্ডি পার হচ্ছে। আবার এ বিষয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে করা জরিপে দেখা যায়, তাদের অবস্থাও করুণ। ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের ৮০ শতাংশেরই নেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
ফলাফল অস্বস্তি দিলেও মূল প্রতিযোগিতা শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী এবার ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। এই বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থী দেশের ৫৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬০ হাজার আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য লড়বেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীন ৮৮১টি কলেজে স্নাতকে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫টি আসন রয়েছে, আবার দেশের সরকারী নূতন পোরাতন মিলে ৩০ টিরও বেশী মেডিকেল কলেজ রয়েছে যেগুলোতে ভর্তির আসন সংখ্যা ৫ হাজারের কাছাকাছি রয়েছে যে খানে ভর্তি যুদ্ধ খুবি প্রতিযোগীতামূলক বিশেষত: সেরা ছাত্রদের মধ্যে । যারা সরকারী কাঠামোতে ভর্তির স্থান করে নিতে পারবে না তারারাই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে ১০৮টি) ও বেসরকারী কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য আসবে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেনীর ছাত্রদের জন্য কষ্ঠত বটেই । এখন আসা যাক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির পদ্বতিগত বিষয়াদি নিয়ে যা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ভর্তি যোগ্যতা ও নিয়মের বলয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয় যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে একক কোনো নিয়ম না থাকায় । ফলে কাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে হলে নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রের কাঠামো ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে হয়। তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ এসব ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরে মাত্র ০.১ পার্থক্য থাকলেই কেউ সুযোগ পাচ্ছেন আবার কেউ অকৃতকার্য হচ্ছেন। আবার দেখা যায়, এসব ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যাওয়া শিক্ষার্থীরা মূল পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর চেয়ে কম নম্বর পেয়েও মেধাক্রম স্কোরকে এগিয়ে নেন। দেখা যায় যে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষার স্কোরে যোগ হচ্ছে। ফলে কম জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থী মূল ভর্তি পরীক্ষায় অনেক সময় বেশি নম্বর পেয়েও মেধা স্কোরে টিকতে পারছেন না। কিন্তু কেন এই নিয়ম, তার সুনির্দিষ্ট সন্তেষজনক ব্যাখ্যা নেউ দেয় নি। বরং এসব জিপিএ স্কোর থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নির্দিষ্ট গ্রুপকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে। বিশ বছর আগেও যেখানে জিপিএ-৫ পাচ হাজারের ঘরে থাকত, সেটি প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ঘরে ঘরে জিপিএ-৫ এ ঠেকছে, যা দেশের শিক্ষার মানকে সংকুচিতই করছে না, বরং রাষ্ট্রকে ভুল পথে পরিচালিত করার প্রয়াস জোগাচ্ছে। জিপিএ-৫ কে যে বা যাহারা মেধার মানদন্ড মনে করছেন, তাঁরা হয়তো জানেন না, এই জিপিএ-৫ পাওয়া মানেই মেধাবী নয়, এটি কেবল একটি নির্দেশক হতে পারে, সেটি কিছুতেই একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের মাধ্যম হতে পারে না। সৃজনশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী শিক্ষার্থী গড়ায় নজর না দিয়ে কেবল নিয়মতান্ত্রিক প্রশ্ন আয়ত্ত করে পরীক্ষার খাতায় উগরে দিয়ে জিপিএ-৫ বাগিয়ে নেওয়া গেলেও আমাদের শিক্ষার্থীরা কতটা কম জানেন, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থাকছে, তেমনি দেশের বাইরে যখন উচ্চশিক্ষায় আসছেন তখন তারা ঠিকই টের পাচ্ছেন। প্রতিবেশী দেশ যেমন ভারত ,নেপালশ তারা তাদের উচ্চ শিক্ষার ভর্তিও বিষয়টি খুবি মানসম্মত ভাবে নিয়ন্ত্রন করে থাকে যেখানে মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হয় । তা হলে আমাদের যে সকল বিষয়ের উপর নজর দেয়া উচিত তা হলো:
১. বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাপ্ত জিপিএ মূল ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোরে বিবেচনায় নেয় না অতছ বাংলাদেশে এই নিয়ম চালু রখেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেউ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি। এর মধ্য দিয়ে দেশে এক শ্রেণি শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছে কম জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অথচ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রতিযোগিতা করার অধিকার সব শিক্ষার্থীদের হওয়া উচিত, প্রকৃত মেধাবীদের বের করে আনার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিক। তারা যে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে, সেই প্রতিযোগিতার আরও একটু আধুনিকায়নের সুযোগ নিক।
২. করোনা মহামারীর পরিবর্তিত পরিস্থিতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শ্রেণীকক্ষের মূল্যায়ন, অবিরত মূল্যায়ন বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। দেশের শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি পুরো ব্যবস্থা অবিরত মূল্যায়ন পদ্ধতির জন্য প্রস্তুুত করতে হবে, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে যাতে বাস্তবধর্মী পরীক্ষা নেওয়া হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারন শিক্ষার্থীরা বহুদিন যাবৎ প্রকৃত লেখপড়ার সঙ্গে সেভাবে সংযুক্ত নেই। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল অর্জন করার মধ্যে যে আনন্দ উচ্ছশিক্ষার ক্ষেত্রে সেটি যাতে বহাল থাকে সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে;
৩. পাসের হারে এক বোর্ড থেকে আরেক বোর্ডের এগিয়ে থাকা কিংবা পিছিয়ে যাওয়ার কারণ কোন বছরেই খতিয়ে দেখা হয় না যা সঠিক নয়। এ ব্যাপারে প্রতিটি বোর্ডেই এজন্য একটি গবেষণা সেল থাকা উচিত;
৪.দেশে বর্তমানে নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজমান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই হরতাল অবরোধ থাকছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পুরো প্রক্রিয়াকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের আসন প্রদান করে থাকে। সেসব পরীক্ষা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সময় মতো অনুষ্ঠিত না হয়ে পেছাতে থাকলে সৃষ্টি হবে সেশন জোট। যার দরুন সময় মতো লেখাপড়া শেষ করতে না পারলে কর্মক্ষেত্রে যোগদানেও হবে বিলম্ব। যেখানে দেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর, সেখানে লেখাপড়া সময়ের মধ্যে শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া হবে দুঃসাধ্য;
৫.বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থীকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন দেওয়া সম্ভব হয় না। বরাদ্দ আসনের প্রতিটির জন্য একাধিক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলক বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীরা পছন্দের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও বাকিদের জাতীয় অথবা বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া যথেষ্ট ব্যয়বহুল। সবার পক্ষে তা চালানো সম্ভব হয় না। অবশ্য দেশে কারিগরি খাতে শিক্ষাগ্রহণের অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে কারিগরি শিক্ষা পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থী বা অভিভাবক কেউই এই শিক্ষায় খুব আগ্রহী নয়। খানিকটা মান উন্নয়নের মাধ্যমে এই খাতকে সমৃদ্ধ করতে পারলে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা এখানে লেখাপড়ার মাধ্যমে শিক্ষা ও কর্ম জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে। উচ্চমাধ্যমিক পরবর্তী এই সময়ে শিক্ষার্থীদের নিজেদের এবং অভিভাবকদের উচিত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। পাশাপাশি সরকারি পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য হরতাল-অবরোধ প্রতিরোধসহ সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। সর্বশেষে বলা যায় উচ্চশিক্ষা উন্মুক্ত রাখা উচিত কেবলমাত্র মেধাবিদের জন্য এবং অন্যান্য দের জন্য কারিগরী/উদ্যোগক্তা উন্নয়নে ক্ষিাার প্রতি জোর দেয়া উচিত ।
লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ
সারাবাংলা/এজেডএস
উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফল বিপর্যয় ও উচ্চশিক্ষায় ভর্তি ড. মিহির কুমার রায়