‘অ্যারন বুশনাল’ বিশ্ব বাসীর নিকট যে বার্তা দিলেন
৯ মার্চ ২০২৪ ২০:১৫
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন বিমানবাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্যদের আত্মহননের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গাজায় ঔপনিবেশিক শক্তি ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে নতুন ভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়,অ্যারন বুশনাল নামের ২৫ বছর বয়সী ইউনিফর্ম পরিহিত এক সৈন্য নিজের গায়ে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তাকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আর গণহত্যার সঙ্গে নেই’। তিনি আরো বলেন, ‘আমি চরম প্রতিবাদ করতে যাচ্ছি; তবে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের যন্ত্রণার তুলনায় আমার এই ত্যাগ সামান্যই’। গাজায় দীর্ঘদিন থেকে ইসরাইল যে গণহত্যা চালাচ্ছে তার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত গাজার নিরীহ মানুষের মুক্তির দাবিতে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মাহুতি দেয় এই মার্কিন সৈন্য। পুড়ে মরার সময় তার শেষ বাক্য ছিল, ‘ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করো’।
১৯৪৭ সালে দখলদার ইসরাইল স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলে ও নিজ দেশেই এখন অস্তিত্ব সংকটে লাখ লাখ ভূমিহীন ফিলিস্তিনিরা। জবরদখলদার ইহুদিরা শুধু ফিলিস্তিনের মাটি কেড়ে নিয়ে ক্ষান্ত হননি বরং প্রতিনিয়ত তাদের জীবনও কেড়ে নিচ্ছে। গত ৭ই অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি যুবক প্রাণ হারিয়েছে এই বর্বর ইসরাইল সৈন্য বাহিনীর আগ্রাসনে। বাদ নেই নারী ও শিশু হত্যা। নিজ দেশে ই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই গাজা উপত্যকার মানুষের। জীবন বাঁচাতে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে আশ্রয় নিলে মিলছে না নিরাপত্তা।
ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে প্রায় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে গাজা। হাজার হাজার বহুতল ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় এবং এমনকি হাসপাতালে ও হামলা করতে দ্বিধাবোধ করছে না নিষ্ঠুর ইসরাইল। গাজার রাফা অঞ্চল যেখানে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে কয়েকদিন পরপরই নানান অজুহাতে হামলা চালাচ্ছে ইহুদিরা। খাদ্য এবং ঔষধ সংকটে কাতরাচ্ছে আহুত অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক। নারী ও শিশুদের আর্তচিৎকারে দিন দিন গাজার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। অথচ ইসরাইল যেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এই বর্বরতা থামানোর যেন কেউ নেই ! জাতিসংঘ, ওআইসি এবং মুসলিম বিশ্বের নেতাদের ভূমিকা কি?
কোনো ভাবেই রক্তশোষক ইসরাইলের গণহত্যা যেন থামানোই যাচ্ছে না। কোন প্রতিবাদই আমলে নিচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার। জো বাইডেন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে গাজায় নারকীয় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিন যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাতে নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি মার্কিন সৈন্য অ্যারন বুশনাল। গণহত্যা বন্ধে বিশ্ব মোড়লদের কোন কথাই যখন কর্ণপাত করছে না ইহুদিরা তখন নিজ দেশে ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে গিয়ে গায়ে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেন এই মার্কিন সৈন্য।
তিনি শুধু নিজের শরীরে ই আগুন দেননি বরং সেই সাথে অকার্যকর জাতিসংঘের নিকট অ্যারন বুশনালের একটি প্রতিবাদী বার্তা পাঠিয়েছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নিয়ে গঠিত জাতিসংঘ ফিলিস্তিন গণহত্যা বন্ধে বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে বরাবরের মতো সাম্প্রতিক সংঘাতে ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের জাতিসংঘ খ্যাত ওআইসির নিন্দা আর মায়াকান্না ছাড়া এখন পর্যন্ত তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। অথচ ইসরাইলের হাত থেকে ফিলিস্তিনের পবিত্র মাটি কে রক্ষা করতে ই ১৯৬৯ এ সালে ৫৩ টি মুসলিম প্রধান দেশের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল ওআইসির।
অ্যারন বুশনালের আত্মহত্যা পর ইসরাইলি বর্বরতা বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে মুসলিম উম্মাহ। তিনি তার জীবন দিয়ে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের দেখিয়ে গেলেন কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। গাজার আগ্রাসন চলমান রাখতে অস্ত্র এবং সৈন্য দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাঁর মিত্ররা। অপরদিকে সৌদি আরব এবং অন্যান্য আরব দেশ এমন ভাবে পিঠ বাঁচিয়ে চলছে যেন নিজে বাঁচলে বাপের নাম। কেবল ইরান এবং তাঁর সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি সংগঠন গাজায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ান।
অসহায় ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের এই নরকীয় তাণ্ডবের জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা নীতির সঙ্গে পেরে না উঠে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নিজেকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে অ্যারন বুশনালর। হয়তো তিনি চেয়েছিলেন, তার জীবন দিয়ে হলেও ফিলিস্তিনের নিরীহ শিশু ও নারীদের পক্ষে থেকে রক্তখেকো ইহুদিবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। হয়তো তার প্রতিবাদী কণ্ঠের সাথে কণ্ঠস্বর মিলিয়ে তার স্বজাতির লোকেরা বলবে ‘ফিলিস্তিন কে মুক্ত করো। অথবা তার এই আত্মত্যাগে অনন্ত বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হবে।
লেখক: শিক্ষক
সারাবাংলা/এজেডএস