Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনগণের শেখ মুজিব

মাহবুব আলম
১৭ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪৫

একাত্তর সাল। চারদিকে বিক্ষুব্ধ ও আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে। ১৭ মার্চ কয়েকজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না। আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালাই না, কেকও কাটি না। এদেশে সাধারণ মানুষের জীবনেরই নিরাপত্তা নাই। আমি জনগণেরই একজন। আমার জন্মদিনই কী আর মৃত্যুদিনই কী? আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু।’

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গোটা জীবনটাই ছিলো সংগ্রামমুখর। স্বাধীনতার আগে তার বহু জন্মদিনই কেটেছে কারাগারের নির্জন কক্ষে। যেখানে ছিলো না স্বজনের সাহচর্য, না ছিলো জন্মদিনে ভালো-মন্দ খাবারের আয়োজন। বঙ্গবন্ধু কোনোবারই আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করতেন না নিজের জন্মদিন।

নিজের ৪৭তম জন্মবার্ষিকী কেটেছে কারাগারের প্রকোষ্ঠে। সেখানে বসে তাঁর লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’য় তিনি লিখেছেন, ‘আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনোদিন নিজে পালন করি নাই- বেশি হলে আমার স্ত্রী দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মদিন পালন করছে। বোধহয়, আমি জেলে বন্দী আছি বলেই।’

”আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস’— দেখে হাসলাম। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি নূরে আলম- আমার সঙ্গে ২০ সেলে থাকে, কয়েকটা ফুল নিয়ে ঘরে এসে উপস্থিত। আমাকে বলল, এই আমার উপহার, আপনার জন্মদিনে। আমি ধন্যবাদের সাথে গ্রহণ করলাম। তারপর বাবু চিত্তরঞ্জন সুতার একটা রক্তগোলাপ এবং বাবু সুধাংশু বিমল দত্তও একটি শাদা গোলাপ এবং ডিপিআর বন্দি এমদাদুল্লা সাহেব একটা লাল ডালিয়া আমাকে উপহার দিলেন,” লিখেছেন বঙ্গবন্ধু। (সূত্র:কারাগারের রোজনামচা)।

বঙ্গবন্ধু তার জীবনের ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছিলেন। সময়ের হিসেবে তা প্রায় ১৩ বছর। বঙ্গবন্ধুর ঠিক কতগুলো জন্মদিন কারাগারে কাটিয়েছিলেন তা জানা নেই। তবে ১৯৬৭ সালের জন্মদিনটি যে তিনি কারাগারে কাটিয়েছিলেন তা তার ডায়েরির পাতাতেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন কেমনভাবে কাটত তার বর্ণনা পাওয়া যায় ‘কারাগারের রোজনামচায়’। ১৯৬৭ সালে জন্মদিনে কারাগারে বসে লেখা ডায়েরির শেষাংশে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘তখন বেলা সাড়ে চারটা বেজে গিয়েছে, বুঝলাম আজ বোধ হয় রেণু ও ছেলে-মেয়েরা দেখা করার অনুমতি পায় নাই। পাঁচটাও বেজে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে জমাদার সাহেব বললেন, চলুন আপনার বেগম সাহেবা ও ছেলে-মেয়েরা এসেছে। তাড়াতাড়ি কাপড় পরে রওয়ানা করলাম জেলগেটের দিকে। ছোট মেয়েটা আর আড়াই বৎসরের ছেলে রাসেল ফুলের মালা হাতে করে দাঁড়াইয়া আছে। মালাটা নিয়ে রাসেলকে পরাইয়া দিলাম। সে কিছুতেই পরবে না, আমার গলায় দিয়ে দিল। ওকে নিয়ে আমি ঢুকলাম রুমে। ছেলে-মেয়েদের চুমা দিলাম। দেখি সিটি আওয়ামী লীগ একটা বিরাট কেক পাঠাইয়া দিয়াছে। রাসেলকে দিয়েই কাটালাম, আমিও হাত দিলাম। জেল গেটের সকলকে কিছু কিছু দেওয়া হলো।’।’

বিজ্ঞাপন

‘ ….ছয়টা বেজে গিয়াছে, তাড়াতাড়ি রেণুকে ও ছেলে- মেয়েদের বিদায় দিতে হলো। রাসেলও বুঝতে আরম্ভ করেছে, এখন আর আমাকে নিয়ে যেতে চায় না। আমার ছোট্ট মেয়েটা খুব ব্যথা পায় আমাকে ছেড়ে যেতে, ওর মুখ দেখে বুঝতে পারি। ব্যথা আমিও পাই, কিন্তু উপায় নাই। রেণুও বড় চাপা, মুখে কিছুই প্রকাশ করে না। ফিরে এলাম আমার আস্তানায়। ঘরে ঢুকলাম, তালা বন্ধ হয়ে গেল বাইরে থেকে। ভোর বেলা খুলবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির কাছে একটা চেতনার নাম। একটা আদর্শের নাম। একটা শক্তির নাম। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া খোকা একাত্তরের ০৭ মার্চে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেই শক্তি-আদর্শ ধারণ করে মরণপণ যুদ্ধে যায় আপামর বাঙালি। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থেকেও আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে শক্তিরূপে অবতীর্ণ হন তিনি। তাঁর দেশপ্রেমের সুমহান চেতনায় মুক্ত করে বাংলাদেশকে। আর এখন তাঁরই চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাঙলা গড়ে প্রত্যয় নিয়ে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত জন্মভূমিকে সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’য় রূপান্তরের উদ্যোগ নেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে। কিন্তু তিনি তা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি কতিপয় নিকৃষ্ট মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শহিদের রক্ত বৃথা যায়নি। সত্যি-ই শহিদের রক্ত বৃথা যায়নি। তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

প্রতিবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ দেশে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। তিনি শিশুদের প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। ওইদিনটিতে তিনি আনুষ্ঠানিক জন্মদিন পালন না করে শিশুদের নিয়ে আনন্দঘন সময় কাটাতেন। বাংলাদেশে শিশুর কল্যাণ ও উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট চারটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

এক, শিশু কল্যাণের জন্য মায়েদের সম্পৃক্ত করে প্রতিষ্ঠা করেন মা ও শিশুকল্যাণ অধিদপ্তর। দুই, শিশুর সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় শিশু একাডেমি। উল্লেখ্য, এ দুটো প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ভাবনা-পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধুর সব সময়ই ছিল।

তিন, শিশুর শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩-এ ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। বাংলাদেশের সে সময়ের সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্তটি ছিল সাহসী ও যুগান্তকারী। চার, ১৯৭৪-এর ২২ জুন শিশু আইন জারি করা হয়। এ আইন শিশু অধিকারের রক্ষাকবচ।

বিশাল হৃদয়ের অধিকারী বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিশুর মতো সরল। তার এই সারল্যকে কাজে লাগিয়েছে ঘাতকচক্র। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ এমপি জেমস ল্যামন্ড-এর খেদোক্তি ছিল এমন- ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী একজন মহান সন্তানকে হারিয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই। তার আদর্শ রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় চেতনা ও আদর্শে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাঙালিকে আর দাবায়া রাখতে পারবে না কেউ।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

জনগণের শেখ মুজিব মাহবুব আলম মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর