Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধু: যার কাছে বাঙালির আজন্ম ঋণ

মানিক লাল ঘোষ
১৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:৪৯

১৭ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক আনন্দময় উচ্চ্বাসের দিন। কারো ভাবনায়ই ছিল না যে ১৯২০ সালের এই দিনে শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের ঘর আলো করে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান একদিন হাজার বছরের পরধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালির আস্থা বিশ্বাস ও মুক্তির দূত হয়ে উঠবেন। বাঙালি জাতি মনে প্রাণ বিশ্বাস করে যে শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামের এই নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, লাল সবুজের পতাকা ও জাতীয় সংগীত নিয়ে পৃথিবীতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারত না। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সংগ্রামমুখর জীবন-সাধনার মাধ্যমে বাঙালির হৃদয় মণি কোঠায় অবিসংবাদিত,আপসহীন নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। আর এ কারনেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের বিশেষ দিনটি আজ বাঙালির কাছে শুধু উচ্চ্বাসের নয় উৎসবের দিনে পরিনত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক নিভৃত পল্লিতে জন্ম নিয়ে প্রকৃতির যে প্রাণরস সংগ্রহ করে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি তা ব্যতিক্রম ছিল বলেই হয়তো তিনি অন্য সবার মতো না হয়ে আলাদা হয়ে উঠেছিলেন। অনেকে মনে করেন রাতে জন্ম গ্রহণ করায় তিনি আলোর মশালবাহী হয়ে উঠেছিলেন কালক্রমে সব নামের একটা অর্থ থাকে। অনেকের বিশ্বাস ব্যক্তি জীবনে তার প্রভাব ও পড়ে। মুজিব শব্দের অর্থ সঠিক উত্তরদাতা বা সাড়াদানকারী। আমৃত্যু শেখ মুজিব মানুষের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন। প্রয়োজনে মানুষের পাশে থেকেছেন। মানুষের জীবনমান উন্নয়নকে জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো সাহসী, লড়াকু, দূরদর্শী আবার উদার, সহজ সরল মনের রাজনৈতিক নেতা পৃথিবীজুড়েই বিরল।

বিজ্ঞাপন

বিরল গুণের অধিকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ধৈর্যশীলতা ও সহনশীলতা ছিল তার সবচেয়ে বড় গুণ। তিনি চরম বিপদের মুখেও মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একদিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গোলাবারুদের নিশানা অন্য দিকে দলের মধ্যে তরুণ নেতাদের সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণার চাপ। আর মুক্তিকামী বাঙালির মুখে মুখে স্বাধীনতার শ্লোগান। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। সেই চরম মুহূর্তেও শেখ মুজিব ধৈর্য্যশীলতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁর জীবনের সেরা ভাষণের মধ্য দিয়ে। যা আজও মুক্তিকামী নির্যাতিত মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণে একটি দেশের মানচিত্র বদলে যাওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল।

বঙ্গবন্ধু যার যা কিছু আছে তা দিয়ে শত্রুর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলে দিলেন সেই কালজয়ী ভাষণে। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। নিজের জীবন ও পরিবারের কথা না ভেবে পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী অবস্থায় নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপের মুখে মাথা নত করেননি। আপসের পথে না হেঁটে মানসিক দৃঢ়তা, সততা ও দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন বঙ্গবন্ধু।

আন্দোলন- সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতিকে ধাপে ধাপে জাতীয়তাবাদের চেতনার আন্দোলিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রায় চার হাজার বছর ধরে বাঙালি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জাতির পদানত থেকে সহ্য করতে হয়েছে তাদের শাসন ও শোষন। পরাধীনতার এই শৃঙ্খল ভেঙে তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিলো দীর্ঘ দিনের। হাজার বছরের কাঙ্খিত সেই স্বাধীনতার স্বপ্নবীজকে অঙ্কুরিত করে বঙ্গবন্ধুই বাঙালিকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, তাদের বাঁচার একমাত্র পথই হচ্ছে স্বাধীনতা।

বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সাংগঠনিক কর্ম তৎপরতায় একদিকে তার দল আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে পাকিস্তানের শাসন, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরূদ্ধে মানুষকে সংঘবদ্ধ করেছেন, করেছেন আন্দোলিত। অন্যদিকে দলের প্রচার-প্রচারণা ও আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তিনিই ছিলেন বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাসের একমাত্র ঠিকানা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়। দীর্ঘ, ২১ বছর চলে ইতিহাস বিকৃতির এই নোংরা খেলা। মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের ত্যাগ তিতিক্ষাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার সকল ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল বিভিন্ন মেয়াদে রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি।

ইতিহাসের সেই দায় মোচন করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানতে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ত্যাগ, তিতিক্ষা রাজনৈতিক দর্শন, দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে, এজন্য বাড়াতে হবে বঙ্গবন্ধুচর্চা। তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এর কোন বিকল্প নেই।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য

সারাবাংলা/এসবিডিই

বঙ্গবন্ধু: যার কাছে বাঙালির আজন্ম ঋণ মানিক লাল ঘোষ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর