বাঙালির রক্তে অর্জিত ত্রিশ লক্ষ শহীদের দেশ
২১ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৬
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাত এবং ২৬ মার্চ সমস্ত বাঙালির জীবনে এক বেদনাবিধুর ভারাক্রান্ত ইতিহাসের নির্মম সময়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতিকে নিশ্চিন্ন করে দিতে ছক আঁকতে শুরু করে সেই ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সুচনালগ্ন থেকে। রক্ত দিয়ে, প্রাণ দিয়ে ৫২’র ভাষা আন্দোলনে বাঙালির যে বিজয় অর্জিত হয়েছিল তা কোনোভাবে পাকিস্তানিরা মেনেনিতে পারেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একের পর এক সংগঠিত হতে দেখে পাকিস্তানীরা নানাভাবে নির্যাতনের খরগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় নীরিহ বাঙালিদের ওপর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পূর্ববাংলা অর্থাৎ বাঙালিদের জীবন যে কী পরিমান দূর্বিষহ ছিল তা এক কথায় অবর্ণনীয়। পাকিস্তানিরা কী রকম নরপশু ছিল সেই ইতিহাসের কথা ভাবলে বাংলার স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের হৃদয়ে এখনো রীতিমতো ক্ষোভ ও বিদ্রোহের আগুন জ¦লে ওঠে। কারণ পৃথিবীব্যাপী এমন নজির নেই প্রিয় স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ ও ২ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানী হয়েছে। যেভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী, সামরিক ও বেসামরিক লোকেরা বাঙালিদের জানমালের ওপর নৃসংসভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ব্রিটিশরা কেন পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেউ মানুষ হয়ে মানুষের ওপর ধ্বংসলীলা চালিয়েছে বিশে^ এমন নজর আছে বলে আমার জানা নেই। একশ দুইশ নয়, এক হাজার দুই হাজার নয়, দশ হাজার বিশ হাজার নয়, এক লক্ষ দুই লক্ষ নয়, পাঁচ লক্ষ দশ লক্ষ নয়, ত্রিশ লক্ষ অর্থাৎ অংকে যদি লিখি ৩০ এর পরে আরো পাঁচটি শুন্য যোগ করলে ৩০ লক্ষ লেখা হয়। তার সাথে নারীদের জীবন ধ্বংস হয় চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার নয়, দুই লক্ষ। দুই এর পরে আরো পাঁচটি শুন্য যুক্ত করলে দাড়ায় ২ লক্ষ। আমি নিজেও এতবছর এই অংকটিকে এই ভেবে কষে দেখিনি। মুখের ওপর এই অংকটা বক্তৃতাবাজিতে অতি সহজে বলে ফেলতাম। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া আর ফিলিস্তিনির ওপর ইসরাইল প্রতিদিন যে তান্ডব চালাচ্ছে সেটি দেখে যখন প্রতিদিন লাশের বহর গুনি (ইসরাইলে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার লোকের মৃত্যুর খবর আর ইউক্রেনে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১ হাজার সেনা মৃত্যু বরণ করেছেন আর বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন প্রায় ১২ হাজারেরও অধিক) এই এত সংখ্যক মৃত্যু নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত যখন উৎকন্ঠায় প্রহর গুনছি এ অবস্থা দেখে তখন একবার ফিরে তাকালাম সেই অতীতের দিকে আমাদের স্বাধীনতা পাওয়ার চিত্রটি যে কতো দুঃসাধ্য, ভয়ংকর ছিল ভাবতে সত্যিই বিস্ময় জাগে। মানুষ হয়ে মানুষের ওপর এভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে পৃথিবীর কোথাও তখন এ নজির ছিল না। সর্বোতভাবে মনেপ্রাণে চিন্তা করি আগামীতে কোনো একজন মানুষও যেন বিচারহীনতায় মুত্যু বরণ না করুক। বিশ্বব্যাপী প্রতিটি শান্তিপ্রিয় মানুষেরও ঠিক একই কামনা। একথা সত্যি যে, আজ থেকে ৫৩ বছর আগে পাকিস্তানিরা নারকীয় তান্ডব চালিয়ে পুরো বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সেটিতে তারা সফল হতে পারেনি। প্রাণপণ জীবনবাজি রেখে বাঙালিরা দেশকে হানাদার মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, এগিয়ে যায় সম্মুখপানে শেষ পর্যন্ত সফলকাম হয়। এই হচ্ছে বাঙালি। বলাবাহুল্য যে, বাঙালি যেমন মাতৃভূমি রক্ষার জন্য মরতে শিখেছিল আবার শক্রকে জীবনের তরে নিশ্চিন্ন করে দিতে উদ্ধত ছিল।
২৫ মার্চ ১৯৭১ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে সেদিন গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যায়। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-কুলি-কামার সব বাঙালি একত্রিত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যে সামরিক সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তার নাম দেয় হয় অপারেশন সার্চলাইট। ২ সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী অভিযানের নির্দেশ নামা তৈরি করেন। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অপরাগত প্রকাশ করার কারণে পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দেখা দেয়, রাজনৈতিক অচলাবস্থা। এমন একটি সময়ে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা করে ধ্বংসের পথ বেছে নেয়। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। তখন নিরীহ বাঙালিদের ওপর এ বর্বরোচিত হামলার দৃশ্য বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে দেখেছিল। কীভাবে পাক বাহিনীর সদস্যরা গণহারে হত্যাকা- চালিয়েছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ, করে অগ্নিসংযোগ। এই রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। ২৫ মার্চের কালরাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেও সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই কালরাতের হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল। পাক হানাদার বাহিনী জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে জল্লাদের মতো বাংলার নিরপরাধ জনগণের ওপর মেশিনগান, মর্টার আর ট্যাংক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে। রাত ১টা নাগাদ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমন চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পাল্টা আক্রমণ করতে ব্যর্থ হয়। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারী বাজারসহ ঢাকাজুড়ে শুরু হয় প্রচ- আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচ্ছ হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী। রাত দেড় টা পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধের বহর ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে পৌঁছে যায়। হানাদার বাহিনী এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় তার বাসভবন থেকে বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর কানে পৌঁছে ছিল। ইয়াহিয়া খানের ছলচাতুরী দেখে রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখ- পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।
২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে মার্কিন সাঁঝোয়া ট্যাংক, সঙ্গে সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহীদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। হানাদারেরা চলার পথে রাস্তার দুই পাশে গুলি ছুড়ে মেরে ফেলে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করে অজস্র নিরাপরাদ সাধারণ মানুষদের। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই। ট্যাংক আর ভারি মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এই হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।’ পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজ এ বার্তা গ্রহণ করে। তখন চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।
বাঙালির স্বাধীনতা পাওয়া ছিল খুব দুঃখের কষ্টের। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীনতার স্বাধ পাইয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে সেদিন যারা নিষ্ঠুরভাবে মরণপণ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল তারা বাঙালির স্বপ্ন সাধনার অগ্নি সন্তান। সেইসব বীর সন্তানদের জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
বাঙালির রক্তে অর্জিত ত্রিশ লক্ষ শহীদের দেশ বিপ্লব বড়ুয়া মুক্তমত