প্রতিভা রানীকে মারধর: এ সহিংসতার নেপথ্যে কী
২৩ মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৫
সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ‘রমজান মাসে প্রকাশ্যে পান খাওয়ার’ অভিযোগ এনে প্রতিভা রানী নামে এক হিন্দু বৃদ্ধাকে বেধড়ক মারধর করেছে নুরুল আমিন নামে এক স্কুল শিক্ষক।
জানা যায়, অভিযুক্ত নুরুল আমিনের বাড়ির কাছে পাতা কুড়াতে যায় প্রতিভা রানী। তখন নুরুল আমিনের স্ত্রী তার ঘরের কাজ করার জন্য বললে প্রতিভা রানী এতে সম্মত হন। পরে ঘরের কাজের এক পর্যায়ে নুরুল আমিনের স্ত্রী প্রতিভাকে পান খেতে দেন।
আর তখনই প্রতিভা রানীর পান খাওয়া অবস্থায় নুরুল আমিন দেখে তাকে গালমন্দ করে, বাঁশের লাঠি দিয়ে অমানবিকভাবে তার পুরো শরীরে আঘাত করে এবং গলায় পা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়।
এমন ঘটনা কীসের ইঙ্গিত? স্কুল শিক্ষক নুরুল আমিন রমজানে প্রকাশ্যে পান খাওয়াকে কেন্দ্র করে হিন্দু বৃদ্ধাকে যে বেধড়ক মারধর করে হত্যার চেষ্টা করেছেন, সেটা কি ইসলাম সমর্থন করে? তাকে এমন গুন্ডামির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির সাহস কে করে দিয়েছে? তার শক্তির শেকড় কোথায়?
এদেশে সব ধর্মমতের স্বাধীনতা রয়েছে এবং তা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। আর ইসলাম ধর্মের কোথায়ও কি অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর আঘাত করার কথা বলা হয়েছে? বরং বলা হয়েছে সহনশীলতার কথা। আর পান এমন কী জিনিস যেটা প্রকাশ্যে খেলে ধর্ম বা রোজার ওপর আঘাত আসে? ধর্মকে কেন হাতিয়ার বানালেন নুরুল আমিন?
নুরুল আমিন একজন স্কুল শিক্ষক, অর্থাৎ জাতি গড়ার কারিগর। কিন্তু এমন নুরুল আমিন দিয়ে কীভাবে জাতি গঠিত হবে, যে একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে ‘মানুষ’ বলতে রাজি নন। যিনি সরাসরি সাম্প্রদায়িক সহিংসতাতে উস্কে দিচ্ছেন। নুরুল আমিনের মতো ধর্মসেনারাই দেশকে অস্থিতিশীল করতে ব্যাকুল হয়ে থাকেন। কিন্তু এ ঘটনায় এদেশের তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের কাউকেই কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না। যদিও এদেশের বুদ্ধিজীবীদের কন্ঠে এখন বাজে বিড়ালের রণসঙ্গীত! এখনকার বুদ্ধিজীবীরা ভুলে গেছেন তাদের কাজ কী। তাই সমাজ-রাষ্ট্র যাচ্ছে অন্ধকারের অতল গহ্বরে।
এমন নুরুল আমিন গংরাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টির জন্য দায়ী। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন নুরুল আমিন গংদের কিছু হয় না কেন? এদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তাহলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
ইমরান ইমন প্রতিভা রানীকে মারধর: এ সহিংসতার নেপথ্যে কী মুক্তমত