Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতুড়ে রুটিন বন্ধ করুন

এস.এম. রাহমান জিকু
২৩ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৩

চলতি মাসের গত ২০ মার্চ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের নিয়মিত-অনিয়মিত বি.এ, বি.এস.এস, বি.বি.এ ও বি.এস.সি স্নাতক (সম্মান) কোর্স শেষ বর্ষ পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষ পরীক্ষার এই সময়সূচিকে মনগড়া, ভিত্তিহীন ও অবান্তর আখ্যা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষার্থীদের তীব্র ক্ষোভের জোয়ার বইছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন অযাচিত সিদ্ধান্ত বরাবরই দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যার দায় এড়াতে পারেন না।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষ পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ মে থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে ১১ই জুন পরীক্ষা শেষ হওয়ার তারিখ ঘোষিত হয়েছে। এরমধ্যে যদি কোন প্রকারের বিড়ম্বনা পোহাতে না হয়, তবে এই সময়সূচী অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষার আয়োজন করবেন।

এই সময়সূচিতে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে– মে’র ২১, ২৩ তারিখ ও মে’র ২৮, ৩০ তারিখের পরীক্ষা। আবার জুনের ৪, ৬ ও ১১ তারিখের পরীক্ষা সমূহ। এরইমধ্যে পরীক্ষার সময়সূচি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল চোখে পড়ে, তা দুঃখজনক। প্রকাশিত সময়সূচিতে দেখা যায়, ২৩ মে পরীক্ষার তারিখে ২০২৫ সালের ২৩ মে’র কথা প্রকাশ করা হয়েছে। যা টাইপিং মিস্টেক হলেও, মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন খামখেয়ালিপনাকে নেটিজেনরা নানাভাবে ট্রল করছে। এই দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বীকারের সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষ পরীক্ষার সময়সূচিতে ১১ টি পরীক্ষার তারিখ উল্লেখ উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৭ টি পরীক্ষার সময়সূচি দারুণভাবে সমালোচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যা মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ বছরের ইতিহাসে এমন অদ্ভুত, মনগড়া, অযাচিত ও অবান্তর সময়সূচি প্রকাশের আর নজির নেই। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের সম্মানিত শিক্ষকরাও সম্প্রতি প্রকাশিত স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষ পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

অন্যদিকে দুপুর ১ টা থেকে পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার সময় উল্লেখ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময় ৪ ঘন্টা পেরিয়ে বিকেল ৫ টায় পরীক্ষা শেষ হবে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিরতিহীন ৪ ঘন্টা পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফিরতে হবে, সড়কপথে নানান প্রতিবন্ধকতা পার করে বাসায় পৌঁছাতে হবে, ফ্রেশ হতে হবে, খাওয়া দাওয়া করতে হবে। তারপর পুনরায় পরের দিনে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ক্লান্ত দেহ নিয়ে, যা প্রায় অসম্ভব। তবে একটু বিশ্রাম নেওয়ার সময় কই?

বিতর্কিত ৭ টি পরীক্ষার সময়সূচিতে মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে ব্যাক টু ব্যাক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় উল্লেখ আছে। বাকি ৪ টি পরীক্ষার সময়সূচিতে কমপক্ষে ২ দিন করে সময় দেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছে। কিন্তু ১ দিনের ব্যবধানে ৭ টি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এরইমধ্যে পরীক্ষার দিন সকালে পড়াশোনা করবার সুযোগ তো কোনোভাবেই থাকছে নাহ্। কারণ ঘুম ভাঙার পর ফ্রেশ হতে হবে, নাস্তা করতে হবে। তাও কেউ পড়তে বসতে চাইলে, বসতে বসতে কমপক্ষে সকাল ৯ টা। সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা অর্থাৎ সকাল ১০ টা পর্যন্ত পড়তে পারবে। তারপর ফ্রেশ হওয়া, খাওয়া-দাওয়া এবং যথাসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর তীব্র প্রচেষ্টায় ছুটে চলা। এদেশের প্রায় শহরই জ্যামে আটকানো শহর। তাই শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা সময় হাতে রেখে বের হতে হয়।

এভাবে বিরতহীনভাবে ১ দিনের ব্যবধানে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক পরীক্ষা দেওয়া, খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। এরমধ্যে অনেকের বাসা, পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে দূরে হবে। আবার দেখা যাবে অনেককেই কিন্তু গ্রাম থেকে শহরে যাতায়াত করে পরীক্ষা দিচ্ছে। সেইসব শিক্ষার্থীদের কতটা শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় গড়তে পারে? তাদের কথা নিশ্চয়ই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একবারও চিন্তা করেননি।

এমতাবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ– ২০২২ সালের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষ পরীক্ষার সময়সূচি অচিরেই পরিবর্তন করে পুনরায় পরিবর্তিত সময়সূচি প্রকাশ করবার বিনীত নিবেদন। ১ দিনের ব্যবধানে ৭ টি পরীক্ষার সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে কমপক্ষে ২ দিন বিরত রেখে পরিবর্তিত সময়সূচি প্রকাশ করুন। এতে করে শিক্ষার্থীরা প্রফুল্ল ও সতেজ মনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এজেডএস

এস এম রাহমান জিকু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতুড়ে রুটিন বন্ধ করুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর