ভর্তিযুদ্ধে হেরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বাস্তবতা ও সম্ভাবনা
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৯
ভর্তিযুদ্ধ- একজন শিক্ষার্থীর জন্য যেন কঠিন এক মুহুর্ত! এ মুহূর্তটাতে নিজেকে নিয়ে অনেক সংগ্রাম আর অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে দিন পার করতে প্রতিটি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীকে। নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও চালিয়ে নিতে হয় নিজের পড়াশোনা। মাথাভর্তি চিন্তা আর স্বপ্নরা কেবল উঁকি দেয়। সারাক্ষণ ভাবনা, স্বপ্নের একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নতুবা স্বপ্ন পূরণের একটা যথাযথ প্লাটফর্ম। কজনই বা পারে সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে? তাহলেই অবশেষে তাদের কি হয়? কেমন থাকে তাদের শারিরীক, মানসিক অবস্থা?
বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর শুরু হয় একজন শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার সময়। মাথায় আসে নতুন নতুন স্বপ্ন পূরণের চিন্তা। আর এই চিন্তা থেকে মননিবেশ করে নিজেকে একজন অধ্যবসায়ী হিসাবে পরিচয় দিতে। চারপাশের মানুষের নানা চিন্তাধারা থেকে মুক্তি আর বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণে নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি হয় দেশের প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করার তীব্র আকাংখা।সে জানে যে, প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সফলতা একজন শিক্ষার্থীকে শুধু তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ লাভ করে না বরং ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে সমাজে ভিন্নমাত্রার মর্যাদায় উন্নীত করবে। আবার ভর্তিযুদ্ধে হেরে গেলে তার জন্য বয়ে আনবে অন্য রকম গ্লানি।
কতশত রাত জাগা, নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজেকে একজন যোদ্ধা ভেবে হার না মেনে পড়াশোনার গতিকে সমুন্নত রাখে ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষার্থী। তবুও অধিকাংশ শিক্ষার্থী হেরে যায়। হার মেনে নেয় এই যুদ্ধে। আর এই হারে চারপাশ থেকে তাদেরকে ঘিরে ধরে নানা হতাশা আর দুশ্চিন্তা। সমাজের মানুষের মুখে খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি আর আচরণে অতিষ্ট হয়ে পড়ে একজন ভর্তিযুদ্ধে হেরে যাওয়া শিক্ষার্থী। ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে শারীরিকভাবে। পাশাপাশি পরীক্ষায় সফলতাকেন্দ্রিক এই সামাজিক বেড়াজাল প্রভাব ফেলে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থেও চরমভাবে।
পরবর্তীতে একদিকে নিজেদের স্বপ্ন ভঙ্গের তীব্র যন্ত্রণা, অন্যদিকে পরিবার ও পারিপার্শ্বিক অদৃশ্য চাপ, সব মিলিয়ে তারা নিজেদের মনে করে যুদ্ধে হারা সৈনিক। ফলে তারা হতাশাগ্রস্থ হয়ে নানা ধরনের আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল পার্সপেকটিভস ইন সাইকিয়াট্রিক কেয়ার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর একটি গবেষণা নিবন্ধ(`Suicidal behaviors and university entrance test‐related factors: A Bangladeshi exploratory study’) শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ বিষণ্নতা, ২৯ শতাংশ উদ্বেগ এবং ৪৪ শতাংশ অবসাদ ও ক্লান্তিতে ভুগছেন। এর মধ্যে ১৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী গত এক বছরে আত্মহত্যার চিন্তা করছেন। আর ৮ শতাংশ আত্মহত্যার পরিকল্পনা এঁকেছেন এবং ২ শতাংশ আত্মহত্যার প্রচেষ্টা করেছেন।’
পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা দ্বিতীয় প্রধানতম মৃত্যুর কারণ। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ আত্মহত্যা অনূর্ধ্ব ৩০ বছরের মধ্যে। মূলত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়া, অকৃতকার্য হওয়া, সম্পর্কজনিত সমস্যা আত্মহত্যার প্রধান কারণ।
কিন্তু এসবের পিছনে সমাজের মানুষের কানাকানি আর উস্কানিমূলক কথাগুলোই সবচেয়ে বেশি হতাশায় ভোগায় একজন শিক্ষার্থীকে। ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। তবে আমাদের যারা অভিভাবক আছেন, তাদের এসব বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। তাদের সন্তানের এ সময়ে তাদের পাশে থাকতে হবে। মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়ে তাদের মনোবল শক্ত রাখতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে সামনে দিন গুলোতে ভালো করার।
আর শিক্ষার্থীদের মাথায় রাখতে হবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না মিললে ভেঙে না পড়ে দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে নতুনভাবে প্রমাণ করা যায়। ভর্তিযুদ্ধে অনুত্তীর্ণ হলে যে জীবন শেষ তা কিন্তু নয়। এখান থেকেই শুরু করা যায়। কেননা, একজন শিক্ষার্থীর সামনে বিশাল এক সম্ভাবনা অপেক্ষায় থাকে। তাই কাঙ্ক্ষিত এই অর্জনে সামিল হতে না পারলেই যে জীবনযুদ্ধে হার মানতে হবে তা ভাবা মোটেও উচিৎ নয়।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই
তৌহিদ-উল বারী ভর্তিযুদ্ধে হেরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বাস্তবতা ও সম্ভাবনা মুক্তমত