দারিদ্র্য বিমোচন মডেল ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকথা
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫৬
আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দারিদ্র্য বিমোচন মডেল এরই মধ্যে দেশে বিদেশে সম্মানের স্থান করে নিয়েছে যা ছিল তিন বছর আগে পালিত স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীর শ্রেষ্ঠ উপহার। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে দারিদ্র্য বিমোচনের পথে যাত্রা শুর হয় নব্বইয়ের দশকে যদিও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনটাই কেটেছে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এবং তিনি তার এক ভাষনে বলেছিলেন ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে, যদি দুঃখী মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পারে, কাপড় পরতে না পারে, বেকার সমস্যা দূর না হয়, তাহলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না। দেশের মাটির সঙ্গে, দেশের মানুষের সঙ্গে, দেশের কালচারের সঙ্গে, দেশের শিকরের সঙ্গে, দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করেই দেশের ইকনমিক সিস্টেম গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধু প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটি (১৯৭৩-১৯৭৮) ছিল স্বনির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা যদিও সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ওই পরিকল্পনায় বিদেশী সাহায্যর উপর নির্ভরশীলতা ৬২ শতাংশ থেকে ১৯৭৭-৭৮ সালের মধ্যে ২৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কৃষি ও কল-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিমাবে দায়িত্বভার গ্রহণ পর দশ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রনয়ন করেছিলেন যার অধ্যায়ের ১৫-এর ‘ঘ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়-‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন। এই সংবিধানের চারটি মূল ভিত্তি ছিল সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম্মনিরপেক্ষতা। বঙ্গবন্ধু তখন সারা দেশের চৌষট্টি হাজার গ্রামে বাধ্যতামূলক সমবায় সমিতি গঠনের ঘোষনা দিয়েছিলেন যা ছিল তখনকার সময়ের জন্য যুগান্তকারী ঘটনা যখন এবং সে সময়ে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের ছেয়েও বেশী।
সুদীর্ঘ ৫৩ বছরের পথ পরিক্রমায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলিগ মাত্র ধারাবাহিকভাবে ১৫ বছর এবং সর্বমোট তেইশ বছর দেশ শাসনের সুযোগ পেয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর তিন বছর ছয় মাস শাসন কাল বাদ দিলে ১৯৭৫ পরবর্তি দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণ জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। এই বছর ২৩শে জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগনের সরকার গঠিত হলে পরিকল্পনা ও নীতিতে স্থান পায় দারিদ্র্য বিমোচনের খাত গুলো যেমন সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসাবে বিধাব ভাতা,মুক্তিযুদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য আশ্রয়ণ, ঘরে ফেরা, একটি বাড়ি একটি খামার, সহ আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো। পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেয়েদের জন্য বৃত্তি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ উল্লেখযোগ্য। এই পথ পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিন াস্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বাপ্ন বাস্তবায়নে করে চলছেন তার মধ্যে রয়েছে গৃীহহিনকে গৃহ দান, আমার গ্রাম আমার শহর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অষ্ঠম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কর্মসংন্থানের উপর সর্বাদিক গুরুত্বো প্রদাম , কভিড-১৯ এর অভিঘাত থেকে গ্রামীন অর্থনীতিকে রক্ষায় প্রণোদনা প্রদান ,এস,এম,ই খাতের জন্য আলাদা আর্থিক প্রণোদনা,গ্রাম/কৃষি গবেষনায় বরাদ্ধ বৃদ্ধি , সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপকল্প-২০২১-এর মূল উপজীব্য হিসাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন শুর হলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি ক্রমাগত২০০৯ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার সাথে পরিকল্পনা ও নীতিতে সংযোজন হয় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারন যেমন ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশে কাজের বিনিময়ে দুস্থ ভাতাসহ ১২৩টির মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চলছে যাতে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৯৫,৫৭৪ কোটি টাকা, যা জিডিপি এর আড়াই শতাংশেরও বেশি। টানা চার মেয়াদে সরকার পরিচালনার অভিযাত্রায় সমাজের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নতুন নতুন কর্মসূচি যোগ হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ’ নির্বাচনি ইশতেহার দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে অসামান্য দলিল হিসাবে আবির্ভূত হয়। এ ইশতেহার বাস্তবায়নে সরকার একদিকে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের লক্ষ্যে গ্রহণ করে নানামুখী প্রকল্প, অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এগিয়ে নিতে দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বৃদ্ধি করা হয়।
এখন প্রধানমন্ত্রীর দারিদ্র্য বিমোচন মডেল নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা যাক: এক: মুজিব বর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসাবে বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ প্রকলাপটি গ্রামোন্নয়নের অনেক উদ্বোগের মধ্যে আরও একটি প্রয়াশ । আজ থেকে তিন বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সমবায় অধিদফতর ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ ধারণায় গ্রামের বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রেখে ইতোমধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ’ প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। দেশের ১০ জেলার ১০ উপজেলার ১০ গ্রামে গড়ে পাঁচ হাজার জন করে মোট ৫০ হাজার মানুষ প্রকল্পটির উপকারভোগী হবেন। এই প্রকল্প দেশের আট বিভাগের নির্বাচিত জেলাগুলোয় বাস্তবায়ন করা হবে যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইল জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, চট্টগ্রামের কুমিল্লা, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, খুলনার বিভাগের যশোর, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল জেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে আগামী ১লা জুলাই,২০২২ থেকে এবং সমবায় অধিদপ্তর হবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সংস্থা । বঙ্গবন্ধুও কৃষি এবং পল্লী উন্নয়নকে সামগ্রীক উন্নয়নের মূল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। এই প্রকল্পেও গ্রামের বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রেখে সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষির আধুনিকায়ন-যান্ত্রিকীকরণ এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে ১০টি গ্রামের কৃষি খাতে ২৫ শতাংশ কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হবে, মধ্যম আয়ের দেশ থেকে পর্যায়ক্রমে উন্নত দেশের মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে ১০ গ্রামের ১০ হাজার লোককে দক্ষভাবে গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হবে। প্রত্যাশিত আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে ১০টি সমবায় সমিতি গঠনসহ প্রায় ৫ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ১০টি কমিউনিটি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর আর্দশের ১০টি গ্রাম সমবায় সংগঠিত করা, কৃষি উৎপাদনের যান্ত্রিক ও উত্তম পদ্ধতির প্রচলন করা, ১০টি গ্রামে দুটি এক একর পুকুরে মৎস্য চাষ ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দুটি গরুপালনের মাধ্যমে আধুনিক ও উত্তম পদ্ধতির প্রচলন, গ্রামীণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে পুনর্জাগরণ এবং গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার কমানোর লক্ষ্যে কাজ করা। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রামকে শহরে পরিণত করার জন্য সরকারী সম্পদের শতভাগ সুষম বণ্টন, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, শতভাগ ভিক্ষুক মুক্তকরণ, শতভাগ বাল্যবিবাহ রোধ, শতভাগ ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত, বৃক্ষ রোপণ, মাদক নির্মূল, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, কৃষককে সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান, পরিচ্ছন্ন হাট-বাজার, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিতে অগ্রগতি, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠন এবং বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে বকদলে গেছে দেশের চিত্র যার আরও একটি সফল সংযোজন হবে এই প্রকল্প া কৃষি খাত ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যেন গ্রামীণ অর্থনীতিও বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের দ্রুতগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে া গ্রামীণ সমাজে জীবিকার বিচিত্রতা আনয়নের প্রচেষ্টায় দুটি প্রধান নিয়ামক রয়েছে: প্রথমত: গ্রামীণ অর্থনীতির প্রতিকূলতা যা গ্রামীণ জনগণ, বিশেষত দরিদ্রদের বিদ্যমান ক্ষেত-খামারভিত্তিক কৃষিকাজের পাশাপাশি অকৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করে এবং দ্বিতীয়ত : নতুন জীবিকার চাহিদা । এ ধারণা ব্যাপকভাবে গৃহীত যে কৃষি খাতের সঙ্গে অকৃষি খাতের সম্মিলন দারিদ্র্য বিমোচনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। অকৃষি খাতের উন্নয়ন সার্বিকভাবে কৃষি খাতের উন্নয়নকেও সহায়তা করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত বাংলাদেশে এ ধরনের জীবিকার সহমিশ্রণ গ্রামীণ সমাজকে আরো বেশি আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে এবং দুর্যোগ কবলিত এলাকাগুলোকে স্থিতিশীল হতে সহায়ক হবে; দুই: বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ছিল বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সময়ে সর্বসাধারণের জন্য যে পেনশন-ব্যবস্হা প্রচলনের উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটি দেশের সামগ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। বৈষম্যহীন কল্যাণকর রাষ্ট্রগঠন ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে সর্বসাধারণের জন্য পেনশন স্কিমের উদ্যোগ সরকারের দূরদর্শী চিন্তার একটি সফল প্রতিফলন এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসাবে সর্বসাধারণের জন্য ঘোষিত পেনশন-ব্যবস্হা উন্নয়ন অগ্রগতিতে আরো এক ধাপ নতুন মাত্রা সংযোজন করল; তিন : বর্তমান সরকার কীভাবে দেশের অসহায় ছিন্নমূল মানুষের জন্য কাজ করছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পই তার জলন্ত প্রমান যা সামগ্রিকভাবে পরিবারের কল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহ্রত। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এ থেকে বাদ যায়নি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষও। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীভুক্ত ৪ হাজার ৮৩২ পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে বসবাসরত ৮ হাজার ১০৬ পরিবারকেও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। তাদের পেশা উপযোগী প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা হয়েছে; চতুর্থত : চতুর্থ শিল্পবিপ পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ¬বে নেতৃত্ব দিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্লক চেইন, আইওটি, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবটিকস, মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে নেতৃত্ব দিতে সবাইকে একসঙ্গে উদ্ভাবনের পথে একযোগে কাজ করতে হবে, তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব। বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার, বিদ্যুতের ব্যবহার এবং ট্রানজিস্টার আবিষ্কার ব্যাপক শিল্পায়ন সৃষ্টির মাধ্যমে মানবসভ্যতার গতিপথ বদলে দিয়েছিল বলে ঐ তিন ঘটনাকে তিনটি শিল্প বিপ্ল¬ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।এখন বলা হচ্ছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ ধরে আসছে চতুর্থ শিল্পবিপ¬ব, যেখানে বহু প্রযুক্তির এক ফিউশনে ভৌতজগত্, ডিজিটাল জগত্ আর জীবজগত্ পরস্পরের মধ্যে লীন হয়ে যাচ্ছে। ৪র্থশিল্পবিপ¬ব শুধু আমাদের কর্মজীবনেই পরিবর্তন করছে না, পালটে দিচ্ছে সবকিছুকেই। এটি প্রভাব ফেলবে পরিচয় সত্তায় এবং এর সঙ্গে সংশি¬ষ্ট সবকিছুতে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তায়, সম্পদ মালিকানার ধরনে, ভোগের ধরনে, কাজ ও বিশ্রামের সময়ে, কর্মজীবন গডায়, দক্ষতাচর্চায়, মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতে এবং পারস্পরিক সম্পর্কে;পন্চমত: ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় আর্থ-সামাজিক ব্যবধান কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এগিয়ে নিতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাবহির্ভূত অধিকাংশ (প্রায় ৬০ শতাংশ) মানুষকে (যাদের আবার অধিকাংশই গ্রামের মানুষ) ব্যাংকিং সেবার অন্তর্ভুক্ত করেছে। ১০ বছর আগে চালু হওয়া মোবাইল ব্যাংকিং খাতে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লাখ এবং ২০২১ সালের এপ্রিলে লেনদেন হয় ৬৩ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে সরাসরি ৮৮ লাখ ৫০ হাজার ভাতাভোগীর কাছে ভাতা পৌঁছে দেওয়া হয়। ভাতাভোগীদের মধ্যে রয়েছে ৪৯ লাখ বয়স্ক মানুষ, ২০ দশমিক ৫০ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা এবং ১৮ লাখ প্রতিবন্ধী। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসরদেও ; চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ২৮টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট রয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৪টি। আউটলেটগুলোর মাধ্যমে মোট ১ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৩৫৮টি হিসাব খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৯টি হিসাব নারীদের। হিসাবগুলোয় জমা আমানতের পরিমাণ ২০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এছাড়া এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ১৮৬ কোটি টাকার।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান হলো দেশের এজেন্ট আউটলেটগুলোর মধ্যে ২ হাজার ১৯৯টি শহর এলাকায়, যা মোট আউটলেটের প্রায় ১৩ শতাংশ। বাকি ১৪ হাজার ৯৪৬টি গ্রামে। সে হিসাবে এজেন্ট আউটলেটের ৮৭ শতাংশেরও বেশি গ্রামাঞ্চলে থাকার কথা। তবে নগর অঞ্চলকেও গ্রাম হিসেবে দেখানোয় প্রান্তিক এলাকাগুলোয় এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ষস্ঠত: সরকার রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করে তার বাস্তবায়ন শুর করেছে যার লক্ষ্য-২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। একই সময়ে একটি দারিদ্র্যমুক্ত দেশ উপহার দেওয়া। ‘রূপকল্প-২০৪১’কে নীতিমালা ও কর্মসূচিসহ একটি উন্নয়ন কৌশলে রূপান্তরের জন্য এ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ দলিল মূলত: ২০৪১ সালের মধ্যে এক সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ অর্জনে সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলোর একটি কৌশলগত বিবৃতি এবং তা বাস্তবায়নের পথ-নকশা। চারটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি যেমন-সুশাসন, গণতন্ত্র, বিকেন্দ্রীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ পরিকল্পনার সুফলভোগী হবে জনগণ এবং তারাই হবে প্রবৃদ্ধি ও রূপান্তর প্রক্রিয়ার প্রধান চালিকাশক্তি: সপ্তমত: দরিদ্রদের নিয়ে বাজেটে অনেক কিছু বলা হয়েছে যেমন জীবন-জীবিকার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি ও রূপকল্প ২০২১-৪১-এর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা এবং ক্রমান্বয়ে শূন্য দারিদ্র্য লক্ষ্য অর্জন। সামাজিক সুরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি (বাজেটের ১৮ শতাংশ) হচ্ছে মূলত দরিদ্রদের ঘিরে ও সুরক্ষা ব্যয়ের ৭৫ শতাংশই সরাসরি দারিদ্র্যকেন্দ্রিক। কৃষি খাতের সব ব্যয় নিম্নমধ্যবিত্ত, খুদে ব্যবসায়ী, ভূমি শ্রমিক ও নিঃস্বদের জন্য ব্যয়িত , আছে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। সরকার পরিচালিত আটটি ফাউন্ডেশন/প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রাšিন্ত জনগোষ্ঠীর কর্মসৃজনে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের কথা উল্লেখ আছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে এরূপ বরাদ্দের পরিমাণ মোট ৩ লাখ ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা (বাজেটের প্রায় ৫৭ শতাংশ)। বাজেটে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘পল্লীর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধক কর্মকান্ড বৃদ্ধিতে পল্লী এলাকায় বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।। তাছাড়াও দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকার চলতি বছরের বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখেছে যা ১লাখ ৭০হাজার ৬১৪ কাটি টাকা যা মোট বাজেটে ১৭.৮ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.১১শতাংশ এবং এই খাতে থেকে পল্লীী অঞ্চলে বসবাসকারী অনেকেই সরাসরি উপকৃত হবে। এর মধ্যে আছে সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী যথা বৃদ্ধভাতা,প্রতিবন্ধী, এসিড দগ্ধ, তালাকপ্রাপ্তা, মাতৃত্বজনীতছুটি ভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কাবিখা, বিজিএফ, বিজিডি, অতি দারিদ্রিদের জন্য কর্মসূচ, আশ্রয়ন প্রকল্প, ,অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধদের প্রশিক্ষন এবং আত্বকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহন, গৃহহীনদের গৃহ নির্মান প্রকল্প, ভিক্ষুকদের পুর্নবাসন প্রকল্প ইত্যাদি। আগামী বছরে ১৫০ টি উপজেলায় সব বয়স্ক ভাতার আওতায় আনলে আরও ৮ লাখ যোগ হয়ে মোট সংখ্যা দাড়াবে ৫৭ লাখ যার জন্য অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪২১ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হবে া এতে মাথাপিছু মাসিক ভাতার পরিমাণ দাড়াবে ৫০১ টাকা, বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে এবং এর জন্য বাড়তি ১,৯২০ কোটি টাকার বাজেটে আছে া বর্তমানে দেশে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। বর্তমানে ১১২টি উপজেলায় সব বিধাব,বয়স্ক ও স্বামী পরিতাক্ত ২০ লাখ নারী ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পাচ্ছেন এবং চলতি বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা, ্ বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তার ১২৩ টি কর্মসূচী রয়েছে ও ৩০টি মন্ত্রনালয়/বিভাগ এগুলো বাস্তবায়িত করছে া চলতি বাজেটে আরও ২ লাখ ৮ হাজার জন প্রতিবন্ধীকে এই কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে এবং এতে মোট ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে : অষ্ঠমত:: , বিশ্বব্যাপী মোট খাদ্য উৎপাদনের ৮০ শতাংশই আসে পারিবারিক কৃষির মাধ্যমে যার বিবেচনায় জিাতিসংঘ ইতোমধ্যে (২০১৯-২০২৮) পারিবারিক কৃষি দশক ঘোষণা করেছে এবং একটি বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছে। এই কর্মপরিকল্পনার আলোকে জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নে সরকার এবং কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবাই মিলে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার নকশা তৈরি অত্যন্ত জরুরি যার জন্য বাজেট বরাদ্ধ বাড়িয়ে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কুটির শিল্প, সংরক্ষণাগার, যান্ত্রিকীকরণ, বাজার ব্যবস্থাপনাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও পারিবারিক কৃষির উন্নয়ন, কৃষি সংশ্নিষ্ট উৎপাদন ও সেবা এবং জৈব কৃষি বা জলবায়ু সহনশীল স্থায়ীত্বশীল কৃষিচর্চায়, যা খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ;নবমত: দারিদ্র্য নিয়ে কাজ করে যে তিন মহান বাঙালি নোবেল জয়ের অনন্য গৌরব অর্জন করেছেন তারা হলেন ড. অমর্ত্য সেন (১৯৯৮)যিনি পেয়েছেন দারিদ্র্য বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান তৈরির জন্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূস (২০০৬) যিনি পেয়েছেন দারিদ্র্য দূরীকরণে গরিবদের উপযোগী ব্যাংক তৈরির জন্য আর ড. অভিজিৎ ব্যানার্জি (২০১৯) পেয়েছেন দারিদ্র্য দূরীকরণে পরীক্ষাগার পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য। তারপরও দারিদ্র্য জয় পুরোপুরি হয়নি । বাংলাদেশের সার্বিক দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে ড. আখতার হামিদ খানের কুমিল্লা মডেলের চার স্তর যথাক্রমে পল্লী পূর্ত কর্মসূচী, টিটিডিসি,থানা সেচ কর্মসূচী ও দ্বি-স্তর বিশিষ্ঠ সমবায় া দারিদ্র্য বিমোচন বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরের অন্যতম বড় কার্যক্রম যার কিছু মডেল বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশে জাতীয় কর্মসূচী হিসাবে। সত্য হলো, বাংলাদেশে দারিদ্র্য, আর্থিক অসচ্ছলতা, ঊর্ধ্বমুখী অসমতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক রূপান্তর অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে এবং আজকের নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে কাজ করতে পারে। । দেশটির সাফল্যের বড় অংশের পেছনে ফজলে হাসান আবেদের ব্র্যাক এবং মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের মতো এনজিগুলোর অবদান রয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে একটি হস্তক্ষেপ প্রত্যাশার চেয়ে বড় অবদান রেখেছিল। আর তা হলো, পরিবারের জ্যেষ্ঠ নারী সদস্যদের কাছে ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথমদিককার সিদ্ধান্ত। এটি ঘরে নারীদের কথা বলার অধিকার সংহত করেছিল, পালাক্রমে শিশুকল্যাণে পারিবারিক ব্যয় প্রবাহিত করায় ভূমিকা রেখেছিল। এটি অন্যতম প্রধান কারণ গড় আয়ু, সাক্ষরতা ও অপুষ্টি মোকাবেলায় বাংলাদেশ কেন এত উন্নতি করেছে।বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম বড় ক্ষুদ্রঋণ খাত আছে, যা ঋণ ফাঁদ থেকে পরিবারগুলোকে বেরিয়ে আনতে এবং নিজস্ব ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করেছে। একটি কম্পিউটেবল জেনারেল ইকুলিব্রিয়াম মডেল ব্যবহার করে দেখিয়েছেন ক্ষুদ্রঋণ নিছকই অর্থগ্রহণের চেয়ে বেশি মাত্রায় পরিবারগুলোকে সাহায্য করেছে। আর্থিক-রাজস্ব ও মুদ্রানীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা জুগিয়ে এটি দেশটির জিডিপি ৯-১২ শতাংশ চাঙ্গা করেছে। তবে ভাগ্যগুণেও বাংলাদেশের অনেকটা সাফল্য এসেছে।
কিন্তু বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত দেড় দশকে দ্রুত দারিদ্র্য কমানোর প্রতিযোগিতায় শীর্ষ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই অর্থাৎ সেই সকল দেশ যে গতিতে দারিদ্র্য কমেছে (৩.২শতাংশ হারেতানজানিয়), বাংলাদেশে কমেছে এর চেয়ে কম (১.৩৭ শতাংশ হারে)। প্রশ্ন হচ্ছে, দারিদ্র্য জয়ের প্রমাণিত এবং প্রতিষ্ঠিত নিজস্ব মডেল থাকার পরও বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্তির হারে অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে কেন? বাংলাদেশের অর্থনীতির সফলতার আরেক সোপান হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৫তম বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সংরক্ষণকারী দেশে পরিণত হয়েছে। নভেম্বর ২০১৯ ও নভেম্বর ২০২০ শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩১ হাজার ৭২৯ মিলিয়ন ও ৪০ হাজার ৮৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বছর শেষে গত ৩০ ডিসেম্বর রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১৭০ মার্কিন ডলারে অতছ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা ও মিয়ানমারের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ বছর শেষে কমেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রিজার্ভ রক্ষণকারী দেশ হিসেবে ভারত বর্তমানে পঞ্চম, পাকিস্তান ৭১তম, নেপাল ৭৫তম, মিয়ানমার ৯৫তম ও শ্রীলংকা ৯৬তম স্থানে অবস্থান করছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ হচ্ছে ১৩ হাজার ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের অন্তর্মুখী রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি, আমদানি হ্রাস এবং বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তি ইত্যাদি কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১০-১২টি মেগা প্রকল্পসহ কয়েকশ প্রকল্প দেশী-বিদেশী অর্থায়নে বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। করোনাকালে সরকারি ব্যয় ক্রমবর্ধমান হারে চালু থাকায় কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হয়েছে। বাংলাদেশের অথর্নীতি সচল থাকার পশ্চাতে সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সঠিক কর্মপন্থা ছাড়াও কৃষক, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, ব্যাংকার, বৃহৎ ভোক্তাশ্রেণীসহ সবার অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি এখন স্বীকৃত। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) এক নতুন জরিপে বলা হয়েছে, ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান আকার ৩০২ বিলিয়ন, যা ২০৩৩ সালে হবে ৮৫৫ বিলিয়ন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দারিদ্র্য বিমোচন মডেল বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্র হিসাবে বেড়ে উঠছে। গণমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ একদিকে উন্নয়ন অভিযাত্রায় গৌরবময় অধ্যায় পার করেছে, অপরদিকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বৃদ্ধি এবং নাগরিকদের অধিকতর দায়িত্ব গ্রহণে একের পর এক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে অভাবনীয় উন্নতি হচ্ছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের আগেই দেশ হবে দারিদ্র্যশূন্য।
লেখক: গবেষক, উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
সারাবাংলা/এসবিডিই
ড. মিহির কুমার রায় দারিদ্র্য বিমোচন মডেল ও স্বনীর্ভর বাংলাদেশের রূপকথা মুক্তমত