Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাধ্যমিকের ফলাফল, পাসের হার, জিপিএ ও শিক্ষার মান

ড. মিহির কুমার রায়
২২ মে ২০২৪ ১৬:২২

২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসির তাত্বীক পরীক্ষা ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১২ মার্চ শেষ হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় ২০ মার্চ। একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলের তাত্বীক পরীক্ষা ১৪ মার্চ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২১ মার্চ শেষ হয়। আর একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও ভোকেশনালের তাত্বীক পরীক্ষা ১২ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২১ মার্চ শেষ হয়। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ পরীক্ষার্থী। অর্থাৎ পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। আগের বছরের চেয়ে পাসের হার বেড়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ কমেছে ১ হাজার ৪৪৯। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন। ছাত্র ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। এসব পরিসংখ্যান শিক্ষার কোনো মান নির্দেশ করে কি না, সেটাই প্রশ্ন।কোনো শিক্ষার্থী পাস না করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাদ্রাসার সংখ্যাই বেশি। শূন্য পাস অবস্থানে থাকা ৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৪২টি মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ৪টি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৩টি ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে যশোর বোর্ড। আর এ বছর সবচেয়ে পাসের হার সবচেয়ে কম সিলেট শিক্ষা বোর্ডে। দুই শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার যথাক্রমে ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ ও ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ বছরের এসএসসির ফলাফলে দেখা যায়, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার এসেছে ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৯ শতাংশ। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে এ বছরে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৮ জন। ২০২৩ সালে পাসের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৫৮ জন।এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় এবার রাজশাহী বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ হাজার ৭৪ জন শিক্ষার্থী। এর আগের বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৬ হাজার ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৪৯৫ জন ছাত্রী এবং ১২ হাজার ৫৭৯ জন ছাত্র রয়েছে।ছাত্র পাসের হার ৮৬ দশমিক ৭৮ এবং ছাত্রী ৯১ দশমিক ৯০ শতাংশ। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এ বছর ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো ফল করেছে।

বিজ্ঞাপন

এবারের ফলাফলে বিশ্লেষনে দেখা যায় জিপিএ-পাসের হার সব বোর্ডেই এগিয়ে মেয়েরা । এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি ভালো ফলাফল করেছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড তো বটেই, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও মেয়েদের পাসের হার ছেলেদের চেয়ে বেশি। জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। সার্বিকভাবে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সব বোর্ড মিলিয়ে মেয়েদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বিপরীতে ছেলেদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলেও মেয়েরা এগিয়ে। ৯ বোর্ড মিলিয়ে মেয়েদের পাসের হার ৮৫ শতাংশ। বিপরীতে ছেলেদের পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। একই চিত্র দেখা গেছে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও। মাদরাসা বোর্ডে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মেয়েদের ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশই পাস করেছে। ছেলেরা পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মেয়েদের পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, যেখানে ছেলেদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে মেয়েরাই। কেবল পাসের হার নয়, জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে অনেকটাই। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত তথ্য বলছে, ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন মেয়ে শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায়। ছেলেদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। সে হিসাবে প্রায় ছেলেদের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার বেশি মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের তথ্য বলছে, মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৯ হাজার ১৬৮ জন। বিপরীতে এসব বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৭৪ হাজার ৬৭৭ জন ছেলে পরীক্ষার্থী পেয়েছে জিপিএ-৫।মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সাত হাজার ৪৬৭ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছেলেরা পেয়েছে ছয় হাজার ৭৩৯ জন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেওয়া দুই হাজার ১৪১ মেয়ে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছেলেরা জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৯৩৭ জন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের জীবনে মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পাসের হার বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি শিক্ষার মান বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তার যথাযথ নিরীক্ষা হওয়া দরকার। কারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি বড় অংশ পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর আগেই ঝরে পড়ছে। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে বর্তমানে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা কমে গেছে- এটা ঠিক, তবে এখনো দেশে নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য, কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এগুলো শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আরো দৃষ্টির প্রয়োজন। বলতেই হয়, সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হলে উত্তীর্ণদের কলেজ বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিকল্প নেই। ইতোমধ্যেই সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনায় দেশে এ জাতীয় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ধারণা করা যায়, এসএসসি উত্তীর্ণদের ভর্তি নিয়ে সংকট থাকবে না। তবুও প্রত্যেক কৃতকার্য শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কলেজে ভর্তির সুযোগসহ সুশিক্ষা নিশ্চিত করাও বিশেষ জরুরি।

আমাদের দেশে শিক্ষার মানের কতটুকু উন্নতি ঘটল, এটা বোঝাতে সাধারণভাবে পাসের হারকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পাসের হার যে শিক্ষার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না তার প্রমাণ এইচএসসির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতা। প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করে। অথচ এসব পাস করা শিক্ষার্থীর শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর তুলতে পারে না।

এখন শিক্ষা মানে জিপিএ-নির্দেশক একটি সার্টিফিকেট। সেটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কতটা সুবিধা দেবে কিংবা চাকরির বাজারে কতটা এগিয়ে রাখবে, এটা নিয়েই ভাবনা সবার। জিপিএ-৫ নিশ্চিত করার জন্য অভিভাবকেরা সবকিছু করতে প্র¯স্তুত থাকেন। কিন্তু এই জিপিএ ও নম্বর শিক্ষার্থীর দক্ষতা বা পারদর্শিতা যথাযথভাবে নির্দেশ করে না। আর কৃতকার্য– অকৃতকার্যের হার দেখে কিংবা আগের বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করে শিক্ষার অগ্রগতি-উন্নতি নির্ধারণ করাও সম্ভব নয়।

ভালো শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে দেয় এবং জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার কোন পর্যায়ে শিক্ষার্থী কতটুকু দক্ষতা অর্জন করবে, তা পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করা থাকে। ভালো শিক্ষাব্যবস্থা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের রূপ বা ধরন বদলে নিতে পারে। পুরো প্রক্রিয়াটি হয় শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক এবং তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। শিক্ষা গ্রহণের জন্য নানা রকম উপাদান ও উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ থাকে। বারবার অনুশীলন ও পরীক্ষণের মাধ্যমে নতুন নতুন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগের সক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়। শিক্ষার্থীকে যাচাই ও মূল্যায়ন করার জন্য বৈচিত্র্যময় উপায় থাকে। অর্জিত শিক্ষা শিক্ষার্থীর মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। তা ছাড়া ভালো শিক্ষাব্যবস্থায় সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংযোগ তৈরি হয়।কোনো ধরনের শিক্ষায়ই নম্বর বা জিপিএ–প্রধান হতে পারে না; বরং শিক্ষার্থীর দক্ষতা অর্জনের দিকটি প্রধান। দক্ষতা অর্জনকে গুরুত্ব দিয়েই শিক্ষাকাঠামো পরিচালিত হওয়া উচিত। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিটি শ্রেণির একেকটি বিষয়ের জন্য যোগ্যতা বা দক্ষতা নির্দিষ্ট করা আছে। এসব দক্ষতা অর্জন করা সাপেক্ষে শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করানোর কথা। কিন্তু আমাদের দেশের মূল্যায়ন বা পরীক্ষাপদ্ধতি নম্বর ও জিপিএ-ভিত্তিক হওয়ায় শিক্ষার্থীর দুর্বলতার ক্ষেত্রগুলো শনাক্ত করা যায় না। আর শনাক্ত করা যায় না বলে বিভিন্ন পারদর্শিতায় দুর্বল থেকেই তারা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। এ সমস্যা কাটানোর ভালো উপায় হতে পারে পরীক্ষাপদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করা এবং মূল্যায়নের ধরনে বদল আনা বর্তমান পদ্ধতিতে নম্বরপত্রে দেখানো হয়, একজন শিক্ষার্থী বাংলায় ৭৮ নম্বর এবং এ গ্রেড পেয়েছে। শিক্ষার্থীর এই নম্বর ও গ্রেড তার বাংলা বিষয়ের সক্ষমতার দিক বা ক্ষেত্র চিহ্নিত করে না। অথচ মূল্যায়নপত্রে বাংলা বিষয়ের ঘরে দেখানো দরকার ছিল, শিক্ষার্থী ভাষা-যোগাযোগে কতটুকু পারঙ্গম, বিবরণমূলক ও বিশ্লেষণমূলক লেখা কেমন লিখতে পারে, ভাষার ব্যাকরণ কতটুকু প্রয়োগ করতে পারে, তার সাহিত্যের বোধ পর্যালোচনায় কতটুকু সক্ষম তা দেখা । পরীক্ষায় এখনকার মতো কেবল গতানুগতিক ধারায় প্রশ্নের উত্তর লিখতে দিয়ে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিষয়গত দক্ষতা যাচাই করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমাদের দেশে এখনো শিক্ষার্থীর নম্বর কম-বেশি হয় প্রশ্ন ‘কমন-আনকমনের’ কারণে! এবার কত ভাগ প্রশ্ন ‘কমন ফেলা’ সম্ভব হয়েছে, গাইড বই আর কোচিং সেন্টারগুলো সদর্প সেই সংখ্যা তুলে ধরে।

আসলে, সাজেশন দিয়ে আর নোট-গাইড সরবরাহ করে শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন মুখস্থ করানো শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে না। এই প্রবণতা বন্ধ করতে না পারলে দেশে শিক্ষা বলে কিছু থাকবে না। এই সংবাদও অনেকের নজরে পড়েছে যে এ বছর ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। এর অর্থ কি এই যে এসব প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব যোগ্যতা ও পারদর্শিতা অর্জন করে দশম শ্রেণিতে উঠেছে, কিন্তু দশম শ্রেণিতে কোনো পড়াশোনা করেনি? ব্যাপারটি আসলে তা নয়। মূল ব্যাপার হলো, বর্তমান পরীক্ষাপদ্ধতি ও মূল্যায়নপ্রক্রিয়ায় দক্ষতা বা পারদর্শিতা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। ফলে নম্বরের অস্পষ্ট ধারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে নতুন শ্রেণিতে ওঠানো হয়। প্রতিবার এসএসসি পরীক্ষার ‘কৃতকার্য-অকৃতকার্য’ হিসাব করা হয়। কিন্তু উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয় না কিংবা পরবর্তী দুই বছর আর পড়াশোনা চালাতে পারে না। এসব শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার কারণ নিয়েও ভাবতে হবে। দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থী জীবনের এ পর্যায়ে বিভিন্ন পেশায় ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়। পেশাগত জীবনেও তারা দশম শ্রেণির নির্ধারিত যোগ্যতাগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারে না। তাই সার্বিকভাবে সকলকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে দেশের উন্নয়নে।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য,সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ও এলকপ মনোনীত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষন টিমের সদস্য

সারাবাংলা/এসবিডিই

ড. মিহির কুমার রায় মাধ্যমিকের ফলাফল- পাসের হার জিপিএ ও শিক্ষার মান মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর