Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন অশান্তির অন্যতম কারণ!

সুমিত বণিক
১৮ জুন ২০২৪ ১৬:০৫

মানুষের বসবাসের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য সমানাধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, আয় এবং বয়সের মানুষ সমানভাবে বাস করতে পারে এবং একে অপরের সহানুভূতি এবং সহযোগিতায় উন্নতি করতে পারে। এই ধরণের সমাজে ধনী-গরীব, বড়-ছোট, পুরুষ-নারী সকলের অধিকার নিশ্চিত এবং সবাই নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকে। সামাজিক সদাচার, নৈতিকতা এবং সত্য-শুভ-সুন্দরের মতো আদর্শিক চিন্তা ও কর্মের প্রতিফলন এই ধরণের সমাজ ব্যবস্থায় নিশ্চিত হয়ে থাকে। যেখানে বিপদে সকলে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, ধনী-গরীবের মধ্যে সহমর্মিতা বজায় থাকে এবং অর্থের অভাবে কেউ অনাহারে মরে না। যেখানে নারী ও শিশুরা নিরাপদে বাস করতে পারে এবং সকল মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব ও রীতি পালনের অধিকার রক্ষা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিপদে অপরকে সাহায্য ও সহযোগিতা সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মানবিক চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ। একজনের অসুস্থতা, অর্থনৈতিক দৈন্য অবস্থা, বা অন্যান্য কোন পরিস্থিতিতে অপরকে সহযোগিতা ও সহানুভূতি প্রদান করা উচিত। যা সকলের মাঝে ভালোবাসা পূর্ণভাব বিনিময় এবং একত্রিতভাবে মানবিক জীবনধারা বজায় রাখতে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বর্তমান সমাজে আমরা এইসকল চিত্রের পরিবর্তে দেখতে পাচ্ছি নানা ধরণের অনাচার ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়! ধর্ম, যা মানবতাকে এক সূত্রে বেঁধে রাখার উপকরণ, এটিও এখন নানা কারণে বিভেদ-বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মীয় অনুশীলনকে কেন্দ্র করে অশান্তি ও সংঘাত বেড়েই চলেছে। মানবিক মূল্যবোধের পরিবর্তে ক্রমশ প্রাধান্য পাচ্ছে স্বার্থপরতা ও লোভ। এই প্রবণতা বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর কারণ, এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শতাব্দী ধরে সহাবস্থান করে আসছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও বৈষম্যের ঘটনাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী ও শিশুরা যৌন নির্যাতন, হত্যা, ও অপহরণের শিকার হচ্ছে। দারিদ্র্য ও অসমতা বেড়েই চলেছে।

বিজ্ঞাপন

আমাদের সমাজে সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম আরও একটি কারণ হলো সমাজে ন্যায়বিচারের গ্রহণযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতি না থাকা। এমনকি আমরা অনেক ক্ষেত্রে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যটাই ভুলে গিয়েছি। সর্বক্ষেত্রে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার অপপ্রয়াস। এসব কারণে অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি এখন অস্বাভাবিকভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে হানাহানি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, চোরাকারবারি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি সমাজটাকে গ্রাস করেছে। এসবের মূলে রয়েছে ন্যায় বিচার ও উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের অভাব। সেই সাথে স্থানীয়ভাবে যারা বিচারক হিসাবে থাকছেন, তাদের যোগ্যতা ও নৈতিকতার ভিত্তি সম্পর্কেও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। সমাজের এই দূরবস্থাকে সুযোগ হিসেবে দেখছে সমাজের চিহ্নিত মোড়ল ও সালিশ বিচারকরা। কারণ তাদেরও রয়েছে আধিপত্য বিস্তারের দুর্ভেদ্য সিন্ডিকেট! যার ফলে সর্বত্র মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত ও সিন্ডিকেটদের শোষণের শিকার হচ্ছে। যারা বিবেকবান তারাও এসবের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস খুঁজে পায় না। কারণ তাদের সব কিছু ‘ম্যানেজ’ করা। ফলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে অন্যায়-অনাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা না বলার সংস্কৃতি। আমাদের এসকল দুর্বলতার ফলশ্রুতিতে এসব তথাকথিত মোড়ল ও সালিশ বিচারকরা সর্বত্র পক্ষপাতিত্বের সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। সমাজের বড় বড় অপরাধীরা বরাবরই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। যার ফলে অসহায় ও সাধারণ মানুষগুলো অন্যায় আর দুর্নীতির বোঝা মাথায় নিয়ে চলছে। আর এভাবেই চলছে আমাদের সমাজ বাস্তবতা আর ন্যায়-বিচারের চাকা। এদিকে সাধারণ মানুষ প্রায় ভুলতে বসেছে, ন্যায়-অন্যায় আর শান্তি সুখের কথা!

এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আজ হয়তো অনেকেই সামাজিক এই সকল দুরবস্থা নিয়ে কথা বলছি না, সমস্যা সমাধানে সোচ্চার হচ্ছি না, কিন্তু সমস্যা ঘনীভূত হলে, সমাধানের সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। ধর্মীয় নেতাদের উচিত সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল হওয়ার শিক্ষা প্রদান করা এবং ধর্মীয় অনুশীলনকে শান্তিপূর্ণ ও মানবিক রাখার জন্য কাজ করা। শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ করে তোলা প্রয়োজন। সর্বোপরি, সমাজের এই ধরণের সমস্যাগুলোর সমাধানে আমাদের সকলের মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। একে অপরের প্রতি সহানুভূতি এবং দুঃস্থ-এতিমদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, এবং মূল্যবোধের সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে এগিয়ে আসার বিকল্প নেই। আর এজন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে যাতে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে পারে। মানুষের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য সমাজ গঠন আমাদের সকলের দায়িত্ব। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতির ভিত্তিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলের মঙ্গলের স্বার্থে এদেশের মানুষ যখনই একত্রিত হতে পেরেছে, তখনই এর সুফল পুরো দেশের মানুষ ভোগ করেছে। আসুন, একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হই, শান্তিপ্রিয় মানুষের কল্যাণ ও নিরাপদ বাসযোগ্য সমাজের জন্য সবাই মিলে সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।

লেখক: জনস্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশিক্ষক

সারাবাংলা/এসবিডিই

মুক্তমত মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন অশান্তির অন্যতম কারণ! সুমিত বণিক

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর