Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজয় যেন প্রতিহিংসার উপলক্ষ্যে পরিণত না হয়

রাকিবুল ইসলাম
৯ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৩৬

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন।ছাত্র জনতার আন্দোলনে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। শেষ হয় টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা হাসিনা শাসনের।

আজকের পুরো আলোচনা তুলে ধরব কোটা সংস্কার আন্দোলনের সব ঘটনা নিয়ে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৩ সাল। সে বছরই প্রথম সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন দেখেছিল মানুষ। হামলা, ভাঙচুরের পাশাপাশি সেবারের আন্দোলনে আহত ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।

৫বছর পর ২০১৮ সালে ২বার আন্দোলন শুরু হয় এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করে দেন। ফলে চাকরিতে কোটা প্রথা আবার বহাল হয়। এরপর ফের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করে ছাত্ররা।

আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় আন্দোলন স্থগিত থাকে। ছুটি শেষে ১জুলাই পুনরায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহার আহ্বান জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

২ জুলাই আন্দোলনকারীরা বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল করে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও বাটা সিগন্যাল মোড় ঘুরে শাহবাগে গিয়ে থামে। সেখানে তারা ১ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। একই দিন বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ঢাকা-আরিচা ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন।

৩ জুলাই আন্দোলনকারীরা ঢাকার শাহবাগ মোড় ২ ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। একই দাবিতে আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন।

৪ জুলাই সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে স্থগিত করেনি। পরের সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানানো হয়। এদিন শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন। আর ঢাকায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন ৫ ঘণ্টা। সমাবেশ থেকে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

৫ ও ৬ জুলাই শুক্রবার শনিবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’।

পরের দিন বাংলা ব্লকেডে স্থবির রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।পরেরদিন ৮ জুলাই : ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, তিনটি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ছয়টি মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে ও স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়।

৯ জুলাই হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করে। ১১ জুলাই : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন।

১২ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

১৩ জুলাই সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। পরের দিন ১৪ জুলাই গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।

১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান করতে হবে।’ শেখ হাসিনা আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’এ কথার পর ফুঁস ওঠে সারাদেশের ছাত্র সমাজ।একই দিনে পদযাত্রা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন।

১৫ জুলাই বেলা ২টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুপুর ২টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগ দেবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বেলা ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়। গুলি করতেও দেখা যায়। হামলা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে ।

১৬ জুলাই সারা দেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার সমর্থকরা। রংপুরে আন্দোলনকারী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।’ এদিন রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।

১৮ জুলাই দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলি করা হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশ ছিল প্রায় অচল। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পালটাপালটি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এদিন মোট ৪১ জন নিহত হন ও আহত হন কয়েক শতাধিক। ফলে সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এদিন সারা দেশে ৮৪ জন নিহত হন ও আহত হন ৫০০শতাধিক।আন্দোলনকারীরা জানান, ৯ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত চলবে ‘শাটডাউন’।

২০ জুলাই : শনিবার দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন করা হয়। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে। এদিন নিহত হন ৩৮জন।

২১ জুলাই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রদান। রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসাবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। একই দিন চার দফা দাবি পূরণের জন্য বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।

২২ জুলাই সোমবার কোটাপ্রথা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি করা প্রজ্ঞাপনে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয়।

২৪ জুলাই বুধবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুজনই জানায়। আর রিফাত আত্মগোপনে আছে বলে জানানো হয়।

২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ছুটির দুদিন-শুক্র ও শনিবার কারফিউ শিথিল থাকবে ৯ ঘণ্টা।

২৬ জুলাই এলাকা ভাগ করে চলে ‘ব্লক রেইড’। চলে সারা দেশে অভিযান। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা। গ্রেফতারের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার।

২৭ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান। গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। হাসপাতালে আহতদের দেখার পর সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও টোল প্লাজা দেখেন প্রধানমন্ত্রী।

২৮ জুলাই রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ভোরে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ডিবির হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলেছেন। ডিবি কার্যালয়ে ধারণ করা একটি ভিডিও বার্তা রাত ৯টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এক ব্রিফিংয়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ডিবির হেফাজতে নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গ্রেফতার করা হয়নি। রাত ৯টার দিকে নাহিদ ইসলামসহ ছয় সমন্বয়কের ওই ভিডিও বার্তা আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৃথক বার্তায় এসব কথা বলেন এই আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের ও আব্দুল হান্নান মাসুদ। মাহিন সরকার বলেছেন, ‘অস্ত্রের মুখে ডিবি অফিসে ছয় সমন্বয়কের ভিডিও বিবৃতি নেওয়া হয়েছে। এদিন মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়।

৩০ জুলাই মঙ্গলবার হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতিতে স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙায় অনেকেই। রাঙিয়েছেন অনেকে। এসব ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। অন্যদিকে সরকার-সমর্থকদের অনেকে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো রঙের ফ্রেম জুড়েছেন। এদিন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।

৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হয়। সারা দেশে ‘ছাত্র-জনতা হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলার প্রতিবাদে ও জাতিসংঘের অধীনে ঘটনার তদন্ত করে বিচার এবং ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
৩১ জুলাই মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচির পর ১ আগস্ট ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’পালন হয় সারাদেশে।
এদিন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।রাতে ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়।

২ আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র হত্যার বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে খুলনায় এক পুলিশ সদস্য ও হবিগঞ্জে একজন নিহত হন।

৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিক্ষোভ মিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৫জন নিহত হন। শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ ২ শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক, অভিভাবক, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আন্দোলনে অংশ নেন। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পালিত হলেও এদিন বিকেলে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন। এতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় শহীদ মিনার এলাকা।সরকার পতনের ‘একদফা’।

৪আগস্ট সরকার পতনের ‘একদফা’ দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। কর্মসূচির প্রথম দিন ৪ আগস্ট সারা দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জীবন হারান ১১৫ জন। আহত হন কয়েক হাজার। সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। এ ছাড়া তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় আদালতের কার্যক্রম।একদিন এগিয়ে মার্চ টু ঢ্কা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় ৫ আগস্ট।

ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ কর্মসূচি পালিত হয়। কারফিউয়ের ঘোঘণা থাকায় সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তারা রাজপথে কাউকে নামতে দেয়নি কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে বাড়তে থাকে গণমানুষের জমায়েত। দুপুর গড়াতে গড়াতে রাজপথগুলো গণজোয়ারে পরিণত হয়। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে গুলি করা হয়। এদিনও ৮৮ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দুপুরে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দেশ দেশ ছাড়েন গোপনে।শেষ হয় টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা হাসিনা শাসনের।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় বিজয় উল্লাস।ছাত্র জনতা দখল নেয় গণভবন ও সংসদ ভবনের।বিকেল থেকেই শুরু হয় লুটপাট অগ্নিসংযোগ চলে রাতভর।ভেঙে ফেলা হয় দেশের অধিকাংশ ভাস্কর্য।দূর্বত্তরা আগুন দেয় বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২নম্বার বাড়িতে।হামলা চালায় সংখ্যা লঘুদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অফিসে ও সদ্য সাবেক এমপি মন্ত্রীর বাড়িতে চলে অগ্নিসংযোগ লুটপাট।হামলা হয় দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যলয়ে।ভাংচুর হয় কয়েকটি মন্দির ও মাজারে।ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চলে সরকারি নানা স্থাপনায়। প্রতিহিংসায় প্রাণ হারান সারাদেশে কয়েকজন।মুক্তি দেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সহ বিএনপির প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীকে।মুক্ত হয় আন্দোলন থেকে গ্রেফতার হওয়া ছাত্র জনতারা।

৬ তারিখ রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩সদস্যদের সাথে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতি জানান দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.ইউনূস। ৭তারিখ সেনাপ্রধান জানান ৮ তারিখ রাত আটটায় শপথ নিবেন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ।

৬, ৭ ও ৮ তারিখ রাজধানী সহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা রাস্তাঘাট পরিষ্কার করে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকাতেও এদুদিন ছিলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে নিহত হওয়া ছাত্র জনতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদ ভবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রোজ্জ্বলন করা হয় মোমবাতি এতে অংশ নেয় শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণির মানুষ।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের কয়েকঘন্টার মধ্যে যে প্রতিহিংসার আগুন আমরা দেখলাম তা আর কখনোই দেখতে চাইনা। দেশটা আমাদের সকলের আসুন প্রতিহিংসার আগুন নিভিয়ে সব বিভেদ ভূলে আমরা মানুষ পরিচয় এগিয়ে যাই সামনের দিকে।

লেখক: সাংবাদিক,সাংস্কৃতিককর্মী ও সাবেক ছাত্রনেতা

সারাবাংলা/এজেডএস

বিজয় যেন প্রতিহিংসার উপলক্ষ্যে পরিণত না হয় রাকিবুল ইসলাম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর