Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশপ্রেমে উজ্জীবিত শিক্ষার্থীরা এবার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে

আবুল বাশার মিরাজ
৯ আগস্ট ২০২৪ ১৯:৪০

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন এদেশের শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে সাধারণ মানুষও এগিয়ে এসেছে। এই ঘটনাটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলোর পাশাপাশি, সামাজিক ও সামষ্টিক দায়িত্ববোধকেই প্রকাশ করে। ঢাকার ব্যস্ততম সড়কের প্রত্যেক জায়গায় তাদের এ দায়িত্ববোধ, নতুন বাংলাদেশের সবাইকে আশার আলো দেখালো। অনেকেই ভেবেছিলেন, আন্দোলন করেই হয়তো তরুণরা থেমে যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি, বরং ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে, কোন পথে পরিচালিত হবে, আপদকালীন সময়ের সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে, সবকিছুই তারা একে একে ঠিক করে দিতেছেন। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সূর্যের আর্বিভাব। সবাই বলছেন, তরুণদের হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ, আমিও তাই মনে করি। কারণ, তরুণরা কারো উপর কখনও জুলোম করবে না, অত্যাচার করবে না কিংবা দুর্নীতিতে মেতে উঠবে না। আর এ কারণেই তরুণরা এদেশের বিশ্বাসী শক্তি হয়ে উঠেছে সবার কাছে।

বিজ্ঞাপন

কেবল বাংলাদেশে নয় বরং সারাবিশ্বেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন সাধারণত বেশ কিছু প্রভাব ফেলে। তবে যে কোন ধরণের হামলা, ধ্বংসলীলা কারও কাছেই শোভাকর নয়। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। তবে, এই অস্থিরতার মাঝে শিক্ষার্থীরা যেভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তা তাদের সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেমের উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিনা পারিশ্রমিকে সারাদেশের ব্যস্ততম সড়কের বড় বড় সিগন্যাল ও মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন প্রশংসার দাবিদার, অন্যদিকে এটি আমাদের দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার সংকটকেও প্রকাশ করে। আমাদের এই ধরণের সংকটগুলোকে কাটিয়ে উঠার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা, যারা সাধারণত বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তারা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে একদিকে যেমন তাদের সমাজসেবার প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করেছে, অন্যদিকে এটি প্রমাণ করেছে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে একটি শক্তিশালী সংকট বিদ্যমান। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দেশে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ এবং কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থার অভাব কতটা দরকারী?

আমাদের সকলকেই শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগের প্রশংসা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, তাদের এই ভূমিকা দীর্ঘমেয়াদী কোন সমাধান নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ট্রাফিক পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং সড়ক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ এবং তাদের এই দায়িত্বশীল ভূমিকা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দেশের উন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এই পরিস্থিতি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়ে আমাদের বিভিন্ন শ্রেণী ও বয়সের মানুষের মধ্যে একাত্মতা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারি। শিক্ষার্থীরা যখন সম্মিলিতভাবে সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করে, তখন তাদের এই প্রেরণা ও উদ্যোগ দেশের জন্য একটি ইতিবাচক শক্তির উৎস হয়ে ওঠে। সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে সমন্বিতভাবে কাজ করলে, নিশ্চয়ই একটি উন্নত এবং সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

লেখক: কৃষিবিদ ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

আবুল বাশার মিরাজ দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত শিক্ষার্থীরা এবার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর