পথশিশুদের পুর্নবাসন ও সুশিক্ষায় আসবে সুন্দর আগামী
১১ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৩৩
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সংখ্যাক পথশিশু রয়েছে। যাদের পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন বলতে পৃথিবীতে কেউ নেই। যাদের আছে তাদের পিতা-মাতার সঠিক পরিচয় নেই। তবে তারা এ দেশের নাগরিক। কারো না কারো সন্তান। এ দেশের ভবিষ্যৎ সাফল্যমন্ডিত করতে হলে সবাইকে প্রয়োজন। পথশিশুরা আমাদের আগামীর সম্পদ। আমরা যেমন আমাদের সন্তানদের পড়ালেখার মাধ্যমে সুশিক্ষায় মানুষ করে তুলতে চাই তাদের ভবিষ্যতের জন্য। তেমনি তাদের জন্য প্রয়োজন আমাদের এই চিন্তা ভাবনা। পথশিশুরা যখন উপযুক্ত নিরাপদ ঠিকানা খুজে পায় না তখন তারা বেচে থাকার জন্য বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়। যার শিকার হই আমরা। বলা যায় আমাদের শিকার হয় তারা, তাদের শিকার হই আমরা। আসলে উভয়েই দোষী।
বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ছত্রছায়ায় সামন্য কিছু অর্থের বিনিময়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম ও অপরাধ করে থাকে। সমসাময়িক বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভাগীয় ও জেলা শহরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদকদ্রব্য বিক্রি, মানুষ মারা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ অপকর্মে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যাক্তিদের পছন্দের তালিকায় থাকেন এই পথশিশুরা। যারা অল্প কিছু টাকার জন্য যা কিছু করতে পারে। যা খুব সহজে স্বাভাবিক সুশিক্ষিত কোন ছেলে মেয়েকে দিয়ে করানো সম্ভব নয়।
পথশিশুদের ধারা তৈরি অপকর্ম —
১। মাদকদ্রব্য বিক্রি: দেশের প্রথম সারির মাদকদ্রব্য বিক্রেতার তালিকায় এই পথশিশু। যাদের ধারা অনায়াসে পাবলিকলি মাদক সবার কাছে পৌছে দেওয়া যায়। রাজধানী ঢাকায় দিনের আলোতে প্রকাশ্য নেশাদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। যাদের বেশিরভাগ পিতৃ পরিচয়হীন পথশিশু। যাদের আইনের আশ্রয়ে আনলেও রাজনৈতিক আশ্রয়ে বেরিয়ে যায়।
২। ছিনতাই: এ দেশের শহর অঞ্চলের অন্যতম আতংকের নাম ছিনতাই। গ্রাম থেকে যখন কোন মানুষ শহরে আসে তখন প্রথমে যে ভয় পায় সেটি হলো শহরে গেলে ছিনতাই হবে। যেই ভয় সেই কাজ। বাসে চলাচলের সময় আমরা ইদানিং দেখছি জানালা দিয়ে ফোন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে পথশিশুরা। এদের কে আবার প্রোটোকল দেয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা। বলা যেতে পারে তাদের চাকরী করেন এ পথশিশুরা। অনেকে ভিডিও ধারন করে অনলাইন মিডিয়াতে প্রকাশ করলেও তার কোন সমাধান আসে নি। তাছাড়া রাস্তাঘাট, অলিগলি, বাসস্ট্যান্ডে, মার্কেট, রেলস্টেশন ইত্যাদি জায়গায় বেশিরভাগ এ পথশিশুরা চুরি-ছিনতাই করে থাকে।
৩। চাঁদাবাজি: চুরি, ছিনতাই, মাদকদ্রব্য বিক্রি যারা করে তারা আবার চাঁদাবাজি করবে না তা কি হয়। মার্কেট, দোকানপাট, হর্কাস, বাস-অটো-সিএনজি স্ট্যান্ডসহ ইত্যাদি জায়গা গুলোতে এই পথশিশুদের চাঁদা উত্তোলনে ব্যবহার করা হয়। তাদের ধারা এ জায়গাগুলোতে অপরাধের বিষয় গুলো বেশি করানো হয়। যেমন: কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে টাকা না দিতে চাইলে তাকে শারিরীকভাবে আঘাত করা, মেরে ফেলা ইত্যাদি।
৪। মানুষ মারা: পথশিশুদের কাছে মানুষ মারা ওয়ান টু’র ব্যাপার। তাদের নেই কোন বাধা পিছুটান শুধু আছে ক্ষুধার জ্বালা। তাই তারা একবেলা খাওয়ার টাকা উপার্জনের জন্য সব করতে পারে। অল্প কিছুর টাকার জন্য মানুষের প্রান তাদের কাছে ভাবনার বিষয় নয়। যেমন: রাজনিতীর মাঠে বিরোধী নেতাকে হত্যা, চাঁদা না দেওয়ায় হত্যা, জমি দখলের জন্য হত্যা, ক্ষমতা দখলের জন্য হত্যা ইত্যাদি অযুহাতে এদের ধারা এ কার্যক্রম গুলো করানো হয়।
৫। রাজনৈতিক মিছিল ও আন্দোলন: পথশিশুদের বহুল ব্যবহৃত একটি জায়গা। ঢাকা শহরে কোন মিছিল ও আন্দোলন-ধর্মঘটের জন্য প্রয়োজন পথশিশু। বর্তমান সময়ের প্রায় প্রত্যাকটি প্রোগ্রামে গাড়িতে করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পথশিশুরা আসে। শোনা যায় ঘন্টায় ২০০/৩০০/৫০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে কন্টাকটাররা এখানেও তাদের কে ঠকায়। কোন সুন্দর আন্দোলনকে ব্যহত করার জন্য পথশিশুর একটি ঢিল তৈরি করে রণক্ষেত্র। রাজপথকে করে তুলে রক্তাক্ত। যেমনটা মনে করি ঘটেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনে। এই বিষয় নিয়ে ভিন্ন কোন প্রতিবেদনে আলোচনা করা যেতে পারে।
উপরোক্ত পাঁচটি বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত করা হয়েছে পথশিশুদের। এদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কে নষ্ট করে তুলে দিয়েছি আমরা নিজেরাই। তাদের পুণর্বাসন ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা হলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো। পেটের দায়ে অপকর্মে লিপ্ত হতে হতো না।
এখন সময় এসেছে পরিবর্তনের মাধ্যমে সুন্দর সুষ্ঠ দেশ বিনির্মান করার। দারিদ্রতা, দুর্নিতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য আজই পদক্ষেপ নেওয়ার। শিক্ষা হোক প্রতিটি মানুষের জন্য সে পথের অথবা পরিবারের। শিক্ষার আলো সবার জন্য হোক এবং পথশিশুদের জন্য অত্যাবশকীয়। পথশিশু তৈরি হওয়ার পিছনের ঘটনা নিয়েও সচেতন হতে হবে। সকল মানুষ সুন্দর পরিচয় নিয়ে স্বাধীন ভাবে বেচে থাকার অধিকার রাখুক। রাষ্ট্র তাকে তার পরিচয় নিশ্চিত করুক। এ দায়িত্ব রাষ্ট্রের তাতে যা প্রয়োজন। সর্বপোরি রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সকল বৈষম্য ভেদে সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সকল মানুষকে। সে পথের অথবা পরিবারের যাই হোক না কেন। মনে রাখতে হবে শিক্ষার মাধ্যমে এ দেশ এগিয়ে যাবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
পথশিশুদের পুর্নবাসন ও সুশিক্ষায় আসবে সুন্দর আগামী মুক্তমত মো.শাহিন আলম