Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সম্প্রীতির বাংলাদেশ: আমাদের সবার স্বপ্ন

আবুল বাশার মিরাজ
১৩ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৩২

বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, যার জন্ম হয়েছে একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই দেশের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে এমন এক মূল্যবোধের ওপর, যেখানে সকল ধর্ম, বর্ণ, ও সম্প্রদায়ের মানুষ সমান অধিকার ও সম্মানের অধিকারী। এই মহান আদর্শকে সামনে রেখে দেশ অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে। কিন্তু এই অগ্রগতির মাঝেও কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যেখানে দেশের সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়কে আক্রমণের শিকার হতে হয়। এই ধরনের ঘটনা শুধু তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং দেশের সামগ্রিক মূল্যবোধকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ও অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বীদের দেশ। এ দেশ গড়ে উঠেছে আমাদের সকলের ত্যাগ, সংগ্রাম, ও ভালোবাসার ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী সময়ে সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়ে দেশের শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালায়।

সাম্প্রতিক সময়ে, সংখ্যালঘুদের উপর এই ধরনের আক্রমণ আমাদের সমাজের একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব হামলা শুধু যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত হানে তা নয়, এটি আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক মূলনীতির বিরুদ্ধেও কাজ করে। ধর্মের নামে বা যে কোনো অজুহাতে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং এটি আমাদের জাতীয় মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই ধরনের হামলা আমাদের সকলের জন্য লজ্জার কারণ এবং আমাদের অবশ্যই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও সম্মান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। যে কোনো ধরনের হামলার ঘটনার পর দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কেউ ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার সাহস না পায়। দোষীদের আইনের আওতায় আনার মাধ্যমে সমাজে একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া যাবে যে, এমন কোনো কাজের পরিণতি অত্যন্ত কঠোর। দ্বিতীয়ত, সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে, যা সমাজে ঐক্য ও ভালোবাসার বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করতে হবে, যাতে আগামী প্রজন্মের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতা গড়ে ওঠে। তৃতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিটরিং জরুরি। আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এ কারণে অনলাইনে উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানো থেকে বিরত রাখতে কঠোর নজরদারি ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। চতুর্থত, সমাজের সকল স্তরে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সংস্কৃতি, সঙ্গীত, সাহিত্য, ও অন্যান্য মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের সম্মান ও অধিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিল্পী, লেখক, এবং সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিদের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতির বীজ বপন করা যেতে পারে, যা আমাদের সমাজকে আরও সুদৃঢ় করবে।

বিজ্ঞাপন

শেষকথা, ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ গড়তে আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব, শুধুমাত্র সরকারের নয়। ধর্ম, বর্ণ, বা সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ ভুলে আমাদের একত্রিত হতে হবে এবং একযোগে কাজ করতে হবে যাতে বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু বলে নিজেকে অবহেলিত বা নিরাপত্তাহীন মনে না করে। ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ আমাদের সকলের স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের সবাইকে একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে যে, বাংলাদেশ সকলের জন্যই সমানভাবে নিরাপদ ও শান্তির একটি স্থান। এ দেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, সকলের জন্যই সমানভাবে নিরাপদ এবং শান্তির জায়গা। আমরা যদি একসঙ্গে এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করি, তবে আমরা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সত্যিকারের একটি সম্প্রীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো, যেখানে সকল নাগরিক স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে এবং নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারে।

লেখক: কৃষিবিদ

সারাবাংলা/এসবিডিই

আবুল বাশার মিরাজ মুক্তমত সম্প্রীতির বাংলাদেশ: আমাদের সবার স্বপ্ন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর