অভিশপ্ত ক্ষমতার মূল্য
১৬ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৩৫
প্রিয় ভ্রাতা-ভগ্নিগণ, মন খারাপের ব্যামো থেকে বেরিয়ে আসুন; আওয়ামী লীগের বর্তমান দুরবস্থায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটি একদিন না একদিন হওয়ারই কথা ছিল। আওয়ামী লীগ এতদিন নিজেদের অজেয় মনে করেছিল, ধরাকে রাজাকার জ্ঞান করেছিল। কিন্তু এখন তারা উপলব্ধি করছে, পিতার স্বপ্নের ভুল ব্যাখ্যার জটিলতা কতটা গভীর। নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশের পথ তৈরি করেছে।
আওয়ামী লীগ সবসময় নিজেদের একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি ভাবত, একটি বিশাল হাতি, যাকে কেউ সরাতে পারবে না। কিন্তু হাতি যখন পাঁকে পড়ে, তখন চামচিকার লাথিও তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এটি কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। ক্ষমতার অপব্যবহার, অবিচার ও প্রতিহিংসার বীজ বপন করলে সেসবই একদিন ফিরে আসে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা এমন এক অভিশপ্ত স্থান, যেখানে গিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ শাপমুক্ত থাকতে পারেনি। ক্ষমতার এ অভিশাপ কোনো সাধারণ অভিশাপ নয়; এটি রাবণের অভিশাপের চেয়েও ভয়ংকর। যারা একবার রাষ্ট্রক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে, তাদের অনেকেই নিজেদের নীতিগত অবস্থান থেকে সরে গেছে। অনেক পীর, মহাপীর, এমনকি অনেকে নিজেদের পয়গম্বর বলেও ভাবতে শুরু করেছে, কিন্তু ক্ষমতার প্রলোভন তাদের শয়তানের চ্যালায় পরিণত করেছে।
আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিল, সেই প্রতিটি প্রতিহিংসা তাদের দিকেই ফিরে আসছে। যে মায়ের বুক খালি হয়েছে, যে সন্তান এতিম হয়েছে, যে স্ত্রী বিধবা হয়েছে—তাদের প্রত্যেকের প্রতিশোধের আগুনে আওয়ামী লীগের পতন শুরু হয়েছে। ইলিয়াস আলী বা আবু সাঈদের পরিবার কখনোই আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করবে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, নির্যাতন, গুম এবং খুনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে ক্ষত তৈরি করেছে, তা আজ তাদের নিজেদের দিকেই ফিরে আসছে।
এই পতন শুধু তাদের রাজনৈতিক ভাগ্যের পরিণতি নয়, এটি নৈতিক এবং সামাজিক পতনেরও প্রতিফলন। এতদিন বিএনপি-জামাতকে নর্দমায় সাঁতার কাটতে হয়েছে, এখন সেই নর্দমায় আওয়ামী লীগকেও নামতে হবে। এটাই সময়ের নির্মম সত্য।
পৃথিবীতে কোনো কিছু হারায় না; সবকিছুই সময়ের সিন্দুকে জমা থাকে। এই সিন্দুক একদিন খুলবেই, এবং তখন প্রতিটি অন্যায়ের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। আওয়ামী লীগ নিজেদের পাপে নিজেই ধ্বংস হবে। তাদের পতনের মধ্যে শুধুমাত্র দলীয় ধ্বংস নয়, জাতির কয়েকটি মহামূল্যবান অর্জনও ধ্বংস হয়েছে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু—এই কয়েকটি শুদ্ধতম বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছে আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে গোটা কয়েক কুলাঙ্গার ছাড়া কেউ প্রশ্ন তুলত না। মুক্তিযুদ্ধের গৌরব এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব নিয়ে কখনোই প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে মানুষ এখন বাঙালির এই মহত্তম অর্জনগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই শাসনামল কেবল আওয়ামী লীগের নয়, পুরো বাংলাদেশের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আজ যখন তারা ধ্বংসের মুখোমুখি, তখন তাদের উচিত নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাদের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা সেই ক্ষমাও পাবে না।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটকাগজ ‘শব্দপাঠ’ সম্পাদক
সারাবাংলা/এজেডএস