Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিজেকে পরিবর্তন করুন, সমাজ পরিবর্তন হবে

আহসান হাবিব
১৬ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সময়ে তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। শুরু হয় একদফা আন্দোলন। নির্বাচনী সরকার উৎখাতের আন্দোলন। তাই-ই হলো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে একটি নির্বাচনী সরকারের পট-পরিবর্তন হলো। বয়স যত বাড়তে থাকে মানুষের অতীত স্মৃতি ততই তার কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মত চেপে বসতে থাকে। কোনো ঘটনাকেই ছোট করে ভাবার উপায় নেই। ঘটনা ঘটনাই। আন্দোলন আন্দোলনই। কোনো কোনো ঘটনা এমনভাবে চোখের সামনে ভাসতে থাকে যেন, কয়েক যুগ আগে ঘটেছে। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। সমাজের রীতিনীতি, বিশ্বাস, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই মানুষ যুগের পর যুগ একত্রে অবস্থান করে। সমাজের এসব রীতিনীতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। তবে এ পরিবর্তন একদিনেই আসেনি। ধীরে ধীরে চলতে থাকে পরিবর্তনের ধারা। সমাজের মানুষদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনার উদয় ঘটে এবং তা বাহ্যিক আচরণে প্রকাশিত হয়। সমাজে ভালো কোনো চিন্তা-ভাবনার উদয় ঘটলে এবং মানুষ সেটা অনুসরণ করলে তা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। এই ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনাগুলো যখন সমাজের মানুষ গ্রহণ করে এবং নিয়মিত করতে থাকে তখন সমাজ আলোকিত হয়। আলোকিত সমাজ গঠনে ছোট-বড় ভালো কাজগুলো সমাজ পরিবর্তনে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে। বাংলা ইংরেজি কোনোটার অর্থই বোধ হয় সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। দুটোই সমান। তাই নিজেকে পরিবর্তন করুন সমাজ পরিবর্তন হবে। পরিবর্তন আনতে যে সংগ্রাম করতে হয়, সে সংগ্রাম করার সাহস বা শক্তি গরিব নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের নেই। আর জীবনযুদ্ধে পর্যুদস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণির সময় নেই কোনো সংগ্রাম-টংগ্রামে অংশ নেয়ার। রইল বাকি উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাদের তো সামাজিক পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে সারকথা দাঁড়াল─সাহস নেই, শক্তি নেই, সময় নেই, প্রয়োজন নেই সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিবর্তনের। অতএব কোনো কিছু যখন নেই, তখন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। এটাই ভবিতব্য। কথাটা শুনতে যতই ‘সিনিক্যাল’ বা নৈরাশ্যজনক শোনাক না কেন, এটাই বাস্তব।

সামাজিক বৈষম্য বঞ্চনা দুর্দশা অব্যবস্থাপনা যাই বলি না কেন, এগুলোর উদ্ভব তো আর হঠাৎ করে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে হয়নি। এগুলো চলে আসছে সেই আদ্যিকাল থেকেই। মানুষ যখন গুহা থেকে বেরিয়ে এসে একটি এলাকায় বসবাস করতে শুরু করল তখন থেকেই। আরণ্য জীবনের গুহাবাসী মানুষ ধীরে ধীরে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল, দেখা দিল একে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কিন্তু সেই গুহাবাস থেকে শুরু করে পরবর্তী জীবনেও যে উপাদানটি জীবনযাপনে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করতে লাগল, তা হলো দৈহিক শক্তি। বাহুবল। শিকারের পশুটির সিংহভাগ আমি পাবো, তা ওটা আমি শিকার করে থাকি আর নাই করে থাকি। কারণ তোমাদের সকলের চেয়ে আমি দৈহিক শক্তিতে, পাথরের তৈরি অস্ত্র চালনায় অধিক শ্রেষ্ঠ। আমার শক্তিকে তোমরা সবাই ভয় কর। আমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ টুঁ শব্দটি করলেই তোমরা জানো আমি এক আছাড় মেরে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দেবো। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে সেই যে শুরু হলো শক্তিপূজা, তাই হয়ে গেল সব কিছুর নিয়ামক। আদিম গুহাজীবনের পর যূথবদ্ধ জীবনে সভ্যতার উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ধীরে ধীরে নিজেদের জন্য কিছু কিছু নিয়ম প্রবর্তন করল। ফলে অশরণে শুরু হলো হত্যা, রক্তপাত। আর আমরা যেগুলোকে বলি মানবিক গুণ, একসঙ্গে থাকতে থাকতে সেই অপত্য স্নেহ, মায়া-মমতা, প্রেম-ভালোবাসা, বিপন্ন ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি গুণাবলিও বিকাশ লাভ করতে লাগল সেই যূথবদ্ধ মানুষের মধ্যে। সৃষ্টি হলো পারস্পরিক বন্ধন, যার পরিণতিতে এলো পরিবার, গোষ্ঠী, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও সমাজের ধারণা।

গুহাজীবনের সেই শক্তির দাপটে পারিপার্শ্বিক সব মানুষ ও ভোগ্যবস্তুর ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য সভ্যতার শুরুতেও বহাল থাকল বটে, তবে তা আগের মতো তর্কাতীত, প্রতিবাদহীন রইল না। কথায় আছে দেয়ালে পিট ঠেকে গেলে যা হয়। তাই হলো। অপেক্ষাকৃত কম শক্তিধররা ধীরে ধীরে সংঘবদ্ধ হয়ে ‘মানি না, মানব না’ বুলি আওড়াতে শুরু করল। তাদের একদার কম্পমান মুক্ত করতল হয়ে উঠল ‘পরাশক্তির’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বজ্রমুষ্টি।

বই জ্ঞানের প্রতীক। বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়। সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। সমাজের মাঝে বই পড়া ছড়িয়ে দিতে সবার আগে নিজে বই পড়তে হবে। নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের বই পড়ার প্রতি উৎসাহ দিতে হবে। নিজের প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি না থাকলে লাইব্রেরি করতে হবে এবং লাইব্রেরি থাকলে সেখানে গিয়ে বই পড়তে হবে। এছাড়া প্রিয় মানুষদের বই উপহার দিয়েও তাদেরকে বই পড়ার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা যায়। প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি বই পড়া ও বই উপহার দিয়ে বছরে ১২টি বই পড়া ও বই উপহার দেয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।

মানুষের বেঁচে থাকার পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি তা হলো অক্সিজেন। আর গাছ থেকে আমরা সেটি অনায়াসেই পাই। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান হারে গাছ কাটার উৎসব চলছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। বিশ্বের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে সমান তালে। ফলে গাছের গুরুত্ব বোঝা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ছে। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত গাছ লাগানো। বাড়ির চারদিকে, রাস্তার পাশে, রেললাইনের দুই ধারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাতে হবে। নিয়মিত গাছ লাগানোর অভ্যাস গাছের পাতার সজীবতার ন্যায় আমাদের মন-মানসিকতাও সজীব রাখতে সহায়তা করে। নিয়ম মেনে নিয়মিত রক্তদান শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মুমূর্ষু ব্যক্তির রক্ত প্রয়োজনে রক্ত দান করলে রোগীর জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যথাসময়ে রক্তের অভাবে অনেক রোগীই মৃত্যুবরণ করে। রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানো পৃথিবীর অন্যতম সেরা মানবিক কাজ। তাই আমাদের এ কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে হবে। নিয়মিত রক্তদানে সকলকে উৎসাহ দিতে হবে। মানুষের প্রথম ও প্রধান মৌলিক চাহিদা খাদ্য। দারিদ্র্যপূর্ণ দেশগুলোতে ব্যাপক খাদ্য চাহিদা বিদ্যমান থাকে। সমাজের মানুষরা অতি কষ্টে দিনযাপন করে। তাই সামর্থ্যবান ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন সংস্থার উচিত ক্ষুধার্তদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে দুর্যোগপূর্ণ সময়গুলোতে খাদ্য ও পানির চাহিদা বৃদ্ধি পেলে সকলে মিলে একসাথে কাজ করা।

যেকোনো বিপদ-আপদ, দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে সমাজের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জোরালো ভ‚মিকা পালন করতে হবে। সমাজে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিলে তা নিয়ে কথা বলতে হবে। এর নেতিবাচক দিকগুলো সমাজের মাঝে তুলে ধরতে হবে ও সকলকে সচেতন করতে হবে। এভাবে সমাজের কল্যাণে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং তার সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন করতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে যার যার অবস্থান থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে আলোকিত সমাজ গড়তে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

আহসান হাবিব নিজেকে পরিবর্তন করুন সমাজ পরিবর্তন হবে


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর