বাংলাদেশ বিচার বিভাগ সংস্কার এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ
২১ আগস্ট ২০২৪ ১৪:০০
বাংলাদেশ বিচার বিভাগ এর স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং বাংলাদেশ সরকারকে বিচার বিভাগের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষে আমরা হয়তো এ সকল পদক্ষেপ নিতে পারি—
১. সুপ্রীম কোর্ট এর অধীন পৃথক সচিবালয় গঠন বিচারমন্ত্রী হিসাবে ইংল্যান্ডের আদলে এটর্নী জেনারেলকে দায়িত্ব প্রদান করা কিংবা একজন সুপ্রীম কোর্টের দল নিরপেক্ষ পরিষ্কার চরিত্রের আইনজীবীকে টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা, সচিবালয় সৃষ্টির জন্য রুলস্ অব বিজনেস পরিবর্তন করে সচিব থেকে সহকারি সচিব পর্যন্ত সকল কর্মকর্তা অধস্তন আদালত হতে প্রেষণে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করা,সচিবালয় এর জন্য বাজেট বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের জন্য নির্ধারিত বাজেট এর অন্তর্ভূক্ত করা,সুপ্রিম কোর্টের অধীন সচিবালয় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর নির্ধারিত সীমানার মধ্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে ভবন নির্মাণ করা;
২. অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক এটর্নী ও প্রসিকিউসন সার্ভিস সৃষ্টি করা;
৩. বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে স্বাধীন স্বনির্ভর ন্যায়পাল নিয়োগ প্রদান করা যেখানে অবসরপ্রাপ্ত আপীল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ প্রাপ্ত হইবে এবং তার কার্যালয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা এবং তার জন্য কনসলিডেশন ফান্ড থেকে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ রাখা এবং ন্যায়পালের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষী সাংবিধানিক পদধারীদের বিরুদ্ধে মূলত অভিসংশন প্রক্রিয়া আরম্ভ হইবে, সংসদ বা প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে অভিসংসন প্রক্রিয়া আরম্ভ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতির প্রয়োজন হবে;
৪. বিচার বিভাগের আদালত ভবন, সরকারী আবাসস্থল এবং এজলাশের নিরাপত্তা ও প্রহরা, হাজতখানা এবং আলামত এর মালখানার দায়িত্ব এবং বিচারপতিণের প্রটোকল এর জন্য একটি মার্শাল সার্ভিস আদলে বাহিনী গঠন;
৫. বিচারপতি নিয়োগ এর আইন, নীতিমালা এবং বিধিমালা নিয়োগ করা যেখানে এটর্নী জেনারেল অফিস এর বর্তমান বা সাবেক এএজি, ডিএজি, এডিঃএজি (যেহেতু তারা ডি জুরি এবং ডি ফ্যাক্টো সরকার এর অংশ এবং দলীয় বিবেচনাতে নিয়োগপ্রাপ্ত), সুপ্রীম কোর্ট বারের বর্তমান বা সাবেক সভাপতি, সহ সভাপতি, সেক্রেটারি, এজিএস, সদস্য (যেহেতু তারা নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত) এবং কোন রাজনৈতিক দলের কোন পদে সুপ্রীম কোর্টের কোন এডভোকেট নিযুক্ত থাকলে তারা কেউ বিচারপতি পদে নিয়োগ পেতে অযোগ্য বিবেচিত হবেন মর্মে বিধান থাকা এবং সুপ্রীম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগে জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক যার প্রেষণ বাদে বিচারিক কর্মকাল ২০ বছর এবং সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট ২০ বছর সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে নিরবচ্ছিন কর্মরত থাকা ও নুন্যতম ২৫টি সিভিল রিভিসন মামলা এবং ৩০টি ক্রিমিনাল রিভিসন মামলা এবং ১০টি রীট মোকদ্দমা মূল আইনজীবী হিসাবে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা থাকা।
অধস্তন আদালত হতে ৫০ ভাগ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ সংরক্ষিত রাখা এবং এজন্য ফিটলিস্ট প্রস্তুত করা তাদের যুগ্ম জেলা জজ এবং অতিঃ জেলা জজ পদে থাকাকালে আপীল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগে রিসার্চ অফিসার নিয়োগ করা এবং তাদের দেশে বিদেশে ট্রেনিং করানো।
৬. একমাত্র বিচারপতিদের নিয়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা বা বিচারপতি এবং সাংবিধানিক পদধারী বিভিন্ন কর্মকর্তা সমন্বয় গঠিত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা বা আর্টিক্যাল ৭০ একমাত্র নো কন্ফিডেন্স মোশন এর জন্য নির্ধারিত রেখে একটি শুনানী করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে পাল্টা যুক্তি খন্ডন ব্যবস্থা রেখে অভিসংশন এর মাধ্যমে বিচারপতিসহ সাংবিধানিক পদধারীদের অব্যহতির ব্যবস্থা করা;
৭. সিজেএম এবং জেলা জজ পদের জন্য ফিটলিস্ট প্রস্তুত করা এবং প্রতিবছর তালিকা হালনাগাদ করা ;
৮. সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট জজ হতে জেলাজজ পর্যন্ত পৃথক এডমিনিস্ট্রেসন, ম্যানেজমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, এটিচ্যুড এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর জন্য চার স্তরের তিন মাসের ট্রেনিং করানো;
৯. অতিঃ জেলা ও দায়রা জজ এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদ বাইফারকেশন করে অতিঃ জেলা জজ ও অতিঃ দায়রা জজ পদ এবং যুগ্ম জেলা জজ ও যুগ্ম দায়রা জজ পদ সৃজন করা;
১০. সচিব এবং অতিঃ সচিব মর্যাদা মানের আবাসন জেলা জজ এবং সিজেএম এর জন্য এবং সচিব মর্যাদা মানের পৃথক আবাসন কমপক্ষে একটি হতে তিনটি আবাসন বা জেলা অনুসারে একটি বাউন্ডারীতে এক ইউনিট করে তিন তলায় লিফ্ট জেনারেটর সহ তিন, চারটি বিল্ডিংয়ে ২৮০০ স্কয়ার ফিটের ফ্লাট নির্মাণ করা জেলাজজ পদমর্যাদার বিচারকদের জন্য। প্রতিটি জেলাতে জাজেস রেস্ট হাউস নির্মাণ করা যাতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষ্য দিতে আসলে এবং অবকাশকালীন ডিসেম্বর মাসে জেলা জজগণ ভিন্ন জেলাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে এবং নবনিযুক্ত সহকারী জজ গণ সদ্য যোগদানে আবাসন সংকটে না পড়েন;
১১. সিজেএম, অতিঃ জেলা জজ এবং জেলা জজ এর জন্য তাদের উপযুক্ত এবং প্রাপ্য মর্যাদা অনুসারে পাজেরো সেভেন সিটার গাড়ী ব্যবস্থা করা। যুগ্ম জেলা জজ, এসিজেএম এবং সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট জজ এর যাতায়তের জন্য প্রাইভেট কার এর ব্যবস্থা করা। সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট জজ কোর্ট এবং সিনিয়র জুডিঃ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট (সিঃ এসিঃ জজ) প্রতি উপজেলাতে স্থাপন করা।
১২. প্রতি জেলাতে একজন যুগ্ম জেলা জজ কে ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড অফিসার এবং তিনজন সিনিয়র এসিঃ জজ কে এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল এইড কে আরও কার্যকর ও গতিশীল করা এবং মিমাংসা সভার জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা করা;
১৩. বিচার বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশ (ক্রাইম এন্ড ইন্ভেস্টিগেসন) উইং সৃষ্টি করে এজাহার, তদন্ত, পুলিশ প্রতিবেদন বিচার বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্তাবধান এবং নিয়ন্ত্রণে আনা এবং উইং এর এসপি হতে আইজিপি এর এসি আর হাইকোর্টের অনুবেদনাধীন করা;
১৪ চাকরিচ্যুত, বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত, সেচ্ছায় অবসরপ্রাপ্ত, অবসরপ্রাপ্ত এবং ন্যূনতম দশ বছর পর পদত্যাগকৃত বিচারক এবং স্থায়ী বিচারপতিদের অবসরউত্তর রাজনীতি সম্পৃক্ত হওয়া এবং রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান নিষিদ্ধ করা এবং বিচারপতিগণ অবসর পরবর্তী বিচারপতি মর্যাদা ভোগ করাতে আইন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দূর্নীতি দমন কমিশন ইত্যাদি পদে নিয়োগ তাদের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় এবং সরকার কর্তৃক প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হবার সুযোগ থাকাতে নিষিদ্ধ করা;
১৭. দ্রুত এবং সর্বাধিক নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি পদক প্রতি টায়ারে দশজন করে সহকারী জজ,সিনিঃ সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা জজ, এসি জে এম, অতিঃ জেলা জজ, সিজেএম, জেলাজজ এবং জেলা জজ পদ মর্যাদার বিচারককে (পারিবারিক মামলা, ছানী মিস, ক্রিমিনাল মিস কেইস, ক্রিমিনাল রিভিসন, অর্ডারের এগেইন্স্টে সিভিল রিভিসন, এন আই অ্যাক্ট মামলা, যৌতুক দাবীর মামলা, যৌতুক দাবীতে নির্যাতন মামলা ছাড়া) প্রতিবছর দুটি মূল বেতন পরিমাণ ভাতা পুরস্কার দেবার এবং পদকের ব্যবস্থা করা।
লেখক: যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস
সারাবাংলা/এসবিডিই
আহমদ সাঈদ বাংলাদেশ বিচার বিভাগ সংস্কার এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ মুক্তমত