Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইয়াসমিন হত্যার ২৯ বছর

রাকিবুল ইসলাম
২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৬:২০

আপনাদের কি মনে পড়ে আজকের দিনটির কথা? মনে পড়ার কথাও নয়। বিশাল এই পৃথিবীতে প্রতিদিন কত ঘটনাই ঘটে। সব কিছু কেই বা মনে রাখে বলুন। তবে সময় যতই স্রোতের মতন আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাক না কেন কিছু ঘটনা খুব আবছা আবছা হলেও মনের মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন নিয়ে উকি মারে। আর চাইলেও সেই সব ঘটনা গুলি আমরা ভুলতে পারিনা। ভোলা সম্ভব ও নয়। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে যেমন অনেক কিছুই লেখা থাকে তেমনি কলঙ্কের কালি মাখা লেখাও থাকে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আজ তেমনি একটি দিন।

বিজ্ঞাপন

চুলন একটু মনে করে আসি ২৯বছর আগের ইয়াসমিনের কথা —

ভোর রাত, ১৯৯৫ সালে ২৪ আগস্ট ভোরবেলা ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও গামী ‘হাছনা এন্টারপ্রাইজ’ নামে রাত্রিকালীন কোচে ইয়াসমিন রাত আনুমানিক তিনটার দিকে দিনাজপুরের দশ মাইল মোড়ে নামে। কোচের সুপারভাইজার দশ মাইল মোড়ের পান দোকানদার জাবেদ আলী, ওসমান গণি, রহিমসহ স্থানীয়দের কাছে কিশোরী ইয়াসমিনকে দিয়ে সকাল হলে মেয়েটিকে দিনাজপুর শহরগামী যেকোনো গাড়িতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা টহল পুলিশের একটি পিক আপ ভ্যান সেখানে আসে। তারা মেয়েটির পরিচয় জানতে চায়। একপর্যায়ে শহরের রামনগর এলাকায় বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুলিশ ইয়াসমিনকে পিক আপে তুলে নেয়। এরপর পুলিশের টহল ভ্যানটি দশমাইলের কাছে সাধনা আদিবাসী প্রাথমিক স্কুলের সামনে এসে থামে এবং পুলিশ সদস্যরা ইয়াসমিনকে স্কুলের মধ্যে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করে। পরে তারা ইয়াসমিনের লাশ দিনাজপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ব্র্যাক অফিসের পাশে একটি আদিবাসীর বাড়ির সামনে ফেলে চলে যায়। পরের দিন সকালে ইয়াসমিনের লাশ পাওয়া যায় দিনাজপুর দশমাইল মহাসড়কে রানীগঞ্জ ব্র্যাক অফিসের সামনে। পরবর্তী সময় ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়, পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণ শেষে খুন হয়েছিল দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিন।

পুলিশের এ পৈশাচিক ঘটনা দিনাজপুরবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দিনাজপুর কোতোয়ালী পুলিশ বিষয়টি সামাল দেয়ার জন্য ‘একজন অজ্ঞাত পরিচয় যুবতীর লাশ উদ্ধার’ মর্মে ঘটনাটি সাজিয়ে থানায় একটি ইউডি মামলা ফাইল করে। লাশের তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমানে মফিদুলের মাধ্যমে বালু বাড়ি শেখ জাহাঙ্গীর গোরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের কোনো প্রকার গোসল ও জানাজা করা হয়নি। এখানে উল্লেখ্য যে, উত্তর গোবিন্দপুর এলাকায় পড়ে থাকা ইয়াসমিনের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির উদ্দেশ্যে কোতোয়ালী থানার এসআই স্বপন কুমার প্রকাশ্যে জনতার সামনেই লাশ উলঙ্গ করে ফেলে, যা উৎসুক জনতার মাঝে ক্ষোভ সঞ্চার করে। ২৫ আগস্ট ১৯৯৫ আগের দিন ঘটনার পরে পুলিশ প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়া ও অন্যখাতে সরিয়ে নেয়ার জন্য যে রহস্যময় আচরণ করে আসছিল তার অংশ হিসেবে নিহত ইয়াসমিনকে ‘পতিতা বানু’ বানাবার চক্রান্ত চালায়। একজন পরিচিত বালিকাকে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ ও ‘পতিতা’ বানানো, তাকে সর্ব সম্মুখে বেআব্রু করা, গোসল ও জানাজা ব্যতিরেকে লুকোছাপা সতর্কতার সঙ্গে লাশ দাফন করা, সেই কবরে প্রহরার ব্যবস্থা নেয়া, বানুকে মেরে কবরের লাশ বদলের পাঁয়তারা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত পুলিশ ও প্রশাসনের রহস্যময় আচরণ জনমনে কৌতূহল ও বিক্ষোভ শতগুণে জাগিয়ে তোলে।

বিজ্ঞাপন

এক পর্যায়ে ২৬ আগস্ট স্থানীয় জনতা কর্তৃক রামনগর মোড়ে মিটিং আহ্বান করে প্রচারণা চালানোর সময় কোতোয়ালী থানা এলাকায় পুলিশ মাইক ভেঙ্গে দেয়। এই ঘটনায় আশেপাশের এলাকার লোকজন সংগঠিত হয়। সন্ধ্যার পরে রামনগর মোড়ে ইয়াসমিনের গায়েবি জানাজা শেষে রাত দশটার দিকে প্রতিবাদী জনতা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে কোতোয়ালী থানা ঘেরাও করে অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্তৃক ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ, ন্যায্য বিচার ও শাস্তি দাবি করে। হাজার হাজার জনতা কোতোয়ালি থানার সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে এবং সারারাত থানা অবরোধ করে রাখে। এসময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এতে আট-দশজন ব্যক্তি আহত হয়। ২৭ আগস্ট শহরে থমথমে পরিস্থিতির মধ্যেই সকাল এগারোটার দিকে ঘটনার প্রতিবাদ ও সব প্রশাসনিক কর্মকর্তার বদলি এবং দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবীতে বিক্ষুব্ধ জনতা শহরে একটি বিশাল মিছিল বের করলে মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মিছিলকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলি চালালে সামু, কাদের ও সিরাজসহ নাম না জানা ৭ জন নিহত হয়। আহত হয় প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ। পরে বিক্ষুব্ধ জনগণ শহরের ৪টি পুলিশ ফাঁড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। শহরের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। শহরে নামানো হয় বিডিআর। দিনাজপুর থেকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এসব ঘটনায় দিনাজপুরবাসীর পক্ষে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে নিরাপত্তা জনিত কারণে ইয়াসমিন হত্যা মামলাটি দিনাজপুর থেকে স্থানান্তর করা হয় রংপুরে।

১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মতিন মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে আসামী পুলিশের এ,এস,আই মইনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিক আপ ভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মণের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান ‘৯৫-এর ৬ (৪) ধারায় ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন। আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ,এম,আই মইনুলকে আরো ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অপর দিকে দণ্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারায় আলামত নষ্ট, সত্য গোপন, অসহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী দিনাজপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার আব্দুল মোতালেব, ডা. মহসীন, এসআই মাহতাব, এসআই স্বপন চক্রবর্তী, এ,এস আই মতিয়ার, এসআই জাহাঙ্গীর-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দেন। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। মামলার অন্যতম আসামী এ.এস.আই মইনুল হক (পিতা-জসিমউদ্দীন, গ্রাম-বিশ্রাম পাড়া, উপজেলা-পলাশবাড়ী, জেলা-গাইবান্ধা) ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার (পিতা-এস.এম খতিবুর রহমান, গ্রাম-চন্দনখানা, উপজেলা-ডোমার, জেলা-নীলফামারী) কে রংপুর জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ১ সেপ্টেম্বর ’০৪ মধ্য রাত ১২টা ১ মিনিটে। অপর আসামী পিক আপ ভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মণ ( পিতা-লক্ষ্মীকান্ত বর্মণ, গ্রাম-রাজপুর, উপজেলা-সদর, জেলা-নীলফামারী) কে রংপুর জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয় ২৯ সেপ্টেম্বর ’০৪ মধ্য রাত ১২টা ১ মিনিটে। ২৬ পর আগের নারী নির্যাতনের এই যুগান্তকারী প্রতিবাদী ঘটনাকে স্মরণীয় করতেই প্রতিবছর ২৪ আগস্ট দিনটি ‘নারী নির্যাতন ও প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ইয়াসমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা ও বাস্তবায়িত হলেও আজ পর্যন্ত ইয়াসমিন হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন করতে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের হত্যাকারীদের বিচার হয়নি। ইয়াসমিন হত্যার ২৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও কমেনি নারী নির্যাতন।

আমি ঠিক বুঝতে পারি না, কতটা নিচে নামলে তবে পশুর সঙ্গে আমাদের চরিত্রগত আর কোনো ফারাক থাকবে না। প্রাণী হিসেবে আমরা এখন উদ্বাহু হয়ে ভোগের নৃত্য করছি। সেখানে পছন্দের সামগ্রী হিসেবে বেশ বিকোচ্ছে আমাদের নারীরা।সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক পত্রিকার পাতায় আর সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিষয়টি বার বার চোখে পড়ছে সেটি হলো ‘ধর্ষণ’। তিন অক্ষরের ছোট এই শব্দের ছায়া এতই কুৎসিত যা ব্যাখ্যা করতে গেলেও ভ্রুকুঞ্চন অনিবার্য। ভোগবাদী সমাজে নারীমুক্তির স্লোগানের আড়ালে নারীর অবস্থান আসলে কোথায়? গত কয়েক মাসে ধর্ষণের সংবাদ গুলো বিশ্লেষণে যে চিত্র উঠে এসেছে তা সত্যি ভয়াবহ। এক একটি ধর্ষণ ঘটনা পুরো জাতিকেই লজ্জার কাঁটাতারে বিদ্ধ করছে।

প্রতিদিনই আমাদের দেশের কোথায়ও না কোথায়ও মেয়ে শিশু, কিশোরী ও যুবতী নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা বা হত্যার চেষ্টা চলছে। যে সব ধর্ষিতা কিশোরী বা যুবতী নারী প্রাণে বেঁচে যাচ্ছে তাদের জীবনে নেমে আসছে অমানিশা। পরিবার ও সমাজ তাদেরকে ভালোভাবে গ্রহণ করছে না। অথচ তাদের কোনোই অপরাধ নেই। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণের স্বীকার নারীরা আত্মগ্লানি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অনেক মেয়ে ধর্ষিত হওয়ার পর লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টা পিতামাতাকেও জানাতে ভয় পায়। ফলে ধর্ষকরা পার পেয়ে গিয়ে সমাজে বুক ফুলিয়ে বেড়ায় এবং তারা বারংবার মেয়েদের প্রতি অশালীন আচরণ করতে প্রলুব্ধ হয়।

আমরা বর্তমানে দাবি করছি- সমাজ এগিয়েছে, আধুনিকতা এসেছে। সমাজের কতিপয় মানুষের কর্মকাণ্ডে সমাজ ক্রমেই কলুষিত হয়ে উঠছে। এমনকি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নারী ও শিশুদের ওপর ধর্ষণ ও সহিংসতার মাত্রা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় সহিংসতার শিকার অনেক নারী ও শিশু চাইলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারে না। সহিংসতার শিকার হয়েও তারা তা সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছে।

প্রতিনিয়ত ঘরে-বাইরে নানাভাবে নির্যাতিত-নিগৃহীত হচ্ছে নারী। পারিবারিক বিরোধ, প্রতিহিংসা, লালসা ও স্বার্থের বলি হচ্ছে শিশুরাও। বর্তমানে পরিবারের সদস্য,বন্ধু,প্রেমিক,শিক্ষক,কর্মস্থলের সহকর্মী ও গৃহকর্তা-কর্ত্রী, কারো কাছেই যেন নিরাপদ নয় নারী-শিশু। নারী ও শিশু নির্যাতনের কঠিন আইন বাংলাদেশে বিদ্যমান। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, আইনের শাসনের অকার্যকারিতা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ প্রভৃতি কারণে আজও নারী ও শিশু ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলেই সমাজের অঙুলি থাকে নারীর দিকেই। ফলে ধর্ষিতার ঠাঁই মেলে না সমাজ বা পরিবারে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কোনো ভাবেই মেনে নেয় না তাকে। অথচ মেয়েটির কোনো অপরাধই নেই। ফলে ধর্ষিতা নারী চরম দুর্ভোগে পড়ে হয় আত্মহননের পথ বেছে নেয়, নয়ত বিপথগামী হতে বাধ্য হয়। এছাড়া রয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা ও উদাসীনতা। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে আড়াল করতে আইনি জটিলতাকে দায়ী করা হয়।

বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা, তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখান দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের উৎসব চলছে। সমাজের প্রত্যেক নারী, শিশু,কিশোরী বালিকা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে যে কোন জায়গায় যে কোন সময়।জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী কিংবা তার পরিবার বা উভয়ের দ্বারা নির্যাতিত হন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)-এর মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন মতে, জুন মাসে ২৯৬ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এবং সংগঠন কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনমতে জুন মাসে ২৯৬ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা মোট ৪১টি। সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১১টি এবং ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনা ঘটে তিনটি। এর মধ্যে ছয় জন প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।উল্লেখ্য, ধর্ষণের শিকার ৪১ জনের মধ্যে ছয় জন শিশু, ১৮ জন কিশোরী রয়েছে, অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে পাঁচ জন কিশোরী ও ছয় জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার দুই জন শিশু ও এক জন প্রতিবন্ধী নারী। এ সময় ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ২৭টি, যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে ২৬টি। এ সময় শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৪১টি। এ সময় এক জন শিশু, ১৯ জন কিশোরী ও ৪১ জন নারীসহ মোট ৬১ জন আত্মহত্যা করেছে। এ মাসে অপহরণের শিকার হয়েছে দুই জন কিশোরী অন্যদিকে চার জন কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া জুন মাসে তিন জন শিশু, চার জন কিশোরী ও আট জন নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ সময় মোট ৭৬ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ২৭ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছেন। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ও অভিমান ইত্যাদি কারণে এগুলো সংঘটিত হয়েছে। এ মাসে তিন জন মৃত ও এক জন জীবিত মোট চার জন নবজাতক শিশুকে বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা অমানবিক ও নিন্দনীয়। এই শিশুদেরকে কী কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপণের চেষ্টা করছে না।

দেশে একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে এ মাসেই আশাবাদী হতে চাই অন্তর্বতীকালীন সরকার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিবেন।নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী স্বাধীনতার দ্বার উন্মোচিত করবেন বলে আশা রাখছি। বিচারাধীন সকল নারী নির্যাতন মামলার সুরাহ করার দাবি জানাচ্ছি।

লেখক: সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইয়াসমিন হত্যার ২৯ বছর মুক্তমত রাকিবুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর