ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনই বড় চ্যালেঞ্জ
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৩
বন্যায় মানুষের ভোগান্তির অন্ত নেই এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে এই ভোগান্তি আরো চরম পর্যায়ে থাকে। তাই বন্যায় বিপৎসীমার ওপরে ওঠা পানি যখন আস্তে আস্তে নেমে আসে ঠিক তখনই শুরু হয় আসল যুদ্ধ। সাধারণত বন্যার চাইতেও কঠিন হয়ে থাকে বন্যা পরবর্তী সময় মোকাবিলা করা। সে সময় বর্তমান সময়ের মতো এত মানুষও পাশে থাকে না। তখন সামাল দিতে হয় নিজেদের। মোকাবিলা করতে হয় বন্যা পরবর্তী সময়ের কঠিন পরিস্থিতিকে। ঘুরে দাড়াতে অনেক বেগ পোহাতে হয়।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর করল বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলা যদিও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও মীরসরাইয়ে পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। যেসব এলাকায় এখনও পানি বেশি রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রেই অবস্থান করছেন। যেসব এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে সেখানে খাবারের পাশাপাশি তীব্র বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সে সঙ্গে, গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু-পাখিরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
কয়েকদিনের বন্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূ্র্বাঞ্চলের অন্তত ১১টি জেলা কবলিত হয়েছে, যাতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম জেলার মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে বন্যায় এখন পর্যন্ত মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জনজিবনে দূর্ভোগ বানবাসি মানুষের ঘরবাড়ি, পোল্ট্রি ফার্ম, মাছের খামার বন্যার পানিতে ভেসে গেছে, অনেকের বাড়িঘরের নিশানা পর্যন্ত নেই। বেঁচে থাকার তাগিদে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়েছে হাজার হাজার পরিবার। বন্যার খবর পেয়ে অনেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। যা সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে। মানুষ মানুষের জন্য। মানবতা মানুষের ভেতর ফুটে উঠেছে। কিন্তু বন্যা-পরবর্তী এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্থায়ী পুনর্বাসন না করলে তারা এই ক্ষতি পোষাতে পারবে বলে মনে করেন না ক্ষতিগ্রস্তরা।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বন্যা দুর্গত এলাকার ক্ষয়-ক্ষতি পূরণের পাশাপাশি রোগ-ব্যাধি মোকাবেলা করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এবারের বন্যায় সেটির ব্যতিক্রম হবে না। তবে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এমন একটি সময়ে যখন বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার। এই সরকারে মানুষের আস্থাও অনেক। অনেক পরিবর্তন আর আশার আলো দেখছেন সবাই সরকারকে ঘিরে।
বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা, বন্যার পরে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ সামনে আসে এবং সেটি কীভাবে মোকাবেলা করতে হয় তা কমবেশি অনেক সংগঠণ, প্রতিষ্ঠান, ব্যাক্তি, ও সরকার করেছেন। অতীতের অভিজ্ঞতা, মানবতা বন্যা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পদক্ষেপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তাই আমাদের হাতে হাত রেখে একত্রিত হয়ে পাশে দাড়ানোর জোড়ালো ভুমিকার প্রয়োজন। কারণ, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দেয়। বন্যায় সরাসরি ক্ষতির চেয়ে এই ক্ষতি কম নয়। তবে জানা গেছে, ডায়েরিয়া, কলেরাসহ পানিবাহিত রোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যেই প্রায় আটশো মেডিকেল টিম দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করেছে।
আকষ্মিক বন্যার কারণে শিক্ষার্থীদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। বইপত্র, খাতা-কলম ভেসে যায় বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসময়ে এসে তা জোগার করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে অনেকের জন্য। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার সম্ভবানা বেশি। তাই সরকার এবং ত্রাণদাতাদের এদিকেও নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবী।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনই বড় চ্যালেঞ্জ খোরশেদ মাহমুদ মুক্তমত