তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের জড় বস্তুগুলোও যেন স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:১৫
তেজগাঁওয়ের আনিসুল হক সড়ককে সড়ক বললে ভূল হবে, এটি একটি ট্রাক স্ট্যান্ড। জনগণের যাতায়াতের রাস্তা যেন কিছু পরিবহন মাফিয়ার বিশ্রাম নেওয়ার অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।
তেজগাঁওয়ের আনিসুল হক সড়কের প্রস্থ বরাবর প্রায় ৭০% জায়গা জুড়ে নিয়েছে ট্রাক এবং বাকি ৩০% রাস্তায়, রিক্সা, লেগুনা, প্রাইভেট কার সহ যানবাহন চলাচল করে। তবে বেশিরভাগ সময়ই লেগে থাকে যানজট। আর এই যানজট লেগে থাকার মূল কারণ হলো সিংহভাগ জায়গা জুড়ে থাকা ট্রাক স্ট্যান্ড। শুধু তাই নয়, সড়কের বেশির ভাগ অংশে ট্রাক অবস্থান করায় প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ তিনটি সমস্যার সম্মুখীন হয়। যানজট সৃষ্টি, ছিনতাইকারীর ভয়, ট্রাকের আড়ালে থাকা ময়লা-আবর্জনা হতে পরিবেশ দূষণ।
যানজট সৃষ্টি: সিংহভাগ জায়গা জুড়ে ট্রাক থাকার কারণে অত্র এলাকার যানজট এতটাই দুঃসহনীয় হয়ে পড়েছে যে কেউ কেউ বলে ওঠেন এই জড় বস্তু গুলোও স্বৈরাচারী আচরণ করছে। দেখা যায় কোন ট্রাক আড়াআড়ি ভাবে রাখায়, রাস্তা সরু হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়। আবার কখনো ট্রাক ঘুড়ানো বা পার্কিংয়ের সময় পুরো রাস্তায়ই জ্যাম সৃষ্টি হয়। আর এই জ্যামের কারণে, সাধারণ নাগরিকগণ বেশ সমস্যার সম্মুখীন হন। যেমন: নির্দিষ্ট সময় গৌন্তব্যে না পৌঁছানো, রিক্সাওয়ালাদের আয় কমে যাওয়ায় তাদেও পক্ষ থেকে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ইত্যাদি।
ছিনতাইকারীর ভয়: যে এলাকার জন্যে বিশেষায়িত “শিল্পাঞ্চল থানা” রয়েছে সে এলাকার রাস্তার পাশ অথবা ফুটপাত দখল করে থাকে ট্রাকের পিছনের অংশ। যার করণে হেঁটে যাওয়াও কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে যেসব নাগরিক পায়ে হেঁটে চলাচলা করে। তারা অনেক সময় ছিনতাইকারীর কবলে পরে।
ট্রাকের আড়ালে থাকা ময়লা-আবর্জনা: অধিক জায়গা জুড়ে ট্রাক থাকায় ট্রাকের আড়ালে জমে থাকা ময়লা-আর্বজনা গুলো পরিষ্কার করতে অক্ষম পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এতে করে ময়লাগুলো পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে।
সমাধান:
উপরোক্ত সবগুলো সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। উক্ত পদ্ধতিগুলোকে অনুসরণ করলে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত, রাস্তায় যানজট মুক্ত এবং বেকারত্ব সমস্যাও সমাধান করা সম্ভব।
পদ্ধতি-১: ট্রাক গুলো রাখার জন্য উক্ত সড়ক হতে নিদিষ্ট দূরত্বে উন্নতমানের স্ট্যান্ড গড়ে তোলা যার দৃষ্টান্ত বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর রয়েছে। যেখানে অল্প জায়গাতেই অনেক বেশি গাড়ি পার্কিং করা সম্ভব। তবে কোন একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত ট্রাক স্ট্যান্ড পরিচালনা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি বা আধা সরকারী হতে পারে। উক্ত ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে প্রতি ঘন্টা অনুসারে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব, সেই অর্থ দিয়ে দেশকে আরো বেশি সমৃদ্ধ ও বেকারত্বের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সেই সাথে জনদুর্ভোগের সমাধান হবে।
পদ্ধতি-২: যদি নিতান্তই রাস্তার পাশে ট্রাক পার্কিং করতে হয় সেক্ষেত্রেও কিছু পদ্ধতি অবলম্বণ করার মাধ্যমে উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।
ট্রাকগুলো রাস্তার পাশে রাখতে চাইলে, নির্দিষ্ট বডার এবং নিদিষ্ট দূরুত্ব অবলম্বন করে রাস্তার সাথে মিল রেখে সারিবদ্ধ ভাবে, রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গাড়ি গুলো কোন ভাবেই যেন নির্দিষ্ট বডার ক্রস না করে। এক্ষেত্রে একটি বর্ডার থেকে অন্য আরেকটি বর্ডারের দূরত্ব কমপক্ষে ৪-৫ ফিট হতে হবে। যাতে করে, ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা ব্যাক্তিগণ এবং যানবাহনে চলাচল করা ব্যাক্তিগণ একে অপরের দিকে খেয়াল রাখতে পারে। এতে ছিনতাইকারীর আক্রমণ হবেনা এবং ময়লা-আর্বজনার ফেলার জন্য নির্দিষ্ট দূরুত্ব পর পর ডাস্টবিন বসাতে হবে। কোন ব্যাক্তি যেন, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে, ট্রাকগুলো যেন বর্ডার ক্রস না করে তার জন্য কঠিন ভাবে নজরদারী করতে হবে।
উক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য দক্ষ দল গঠন করতে হবে। যাদের মূল লক্ষই থাকবে-
• গাড়িগুলো যেন কোন অবস্থায় সীমা পার না করে, সেদিকে খেয়াল রাখা। অন্যথায় জরিমানা আদায় করা।
• গাড়িগুলো প্রথম ১ ঘন্টা বিনামূল্যে রাখতে পারে এবং পরবর্তী সময় থেকে প্রতি ঘন্টা অনুসারে চার্জ গ্রহন করা।
• কোন ব্যাক্তিই যেন কোন অবস্থায় যেখানে-সেখানে ময়লা আর্বজনা না ফেলে, সে দিকে ২৪ ঘন্টা নজরদারী করতে হবে। যদি কোন ব্যাক্তি ময়লা আর্বজনা যেখানে-সেখানে ফেলে সেক্ষেত্রেও জরিমানা করতে হবে।
• সেই সাথে সবসময় টহল দিতে হবে, যেন কোন অবস্থায় ছিনতাইকারী আধিপত্ত বিস্তার না করতে পারে।
উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে পারলে, পরিবেশ দূষণ, যানজট, ছিনতাই কারীর আক্রামণ থেকে রক্ষা পাওয়া সহ দেশকে আরো বেশি সমৃদ্ধ, পরিচ্ছন্ন এবং সুবিন্যাস্ত রাখা সম্ভব। সেই সাথে দেশের বেকারত্ব সমস্যারও দূর হবে।
একটি পরিপূর্ণ মডেল অবলম্বন কওে সারা দেশ ব্যাপী এই সমস্যার সমাধান যেমন সম্ভব ঠিক তেমনি অনেক কর্মসংস্থান (সরাসরি ১০,০০০ লোকের ও হাজার কোটি রেভিনিউ কালেক্ট করা) ও পরিবেশ বান্ধব শহর গড়ে তোলা সেটাও সম্ভব।
পুর্বে অনেক চেষ্টা দেখা গেছে জনগণকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে। খোদ যার নামে তেজগাঁওয়ের এই সড়ক, তিনি নিজেও চেষ্ট করেছিলেন। কিন্তু চরম বাস্তবতা হল, তিনি বিগত হওয়ার পর থেকে দেখা যায় আগে যা ছিল তাইই আছে। শুধু বারবার হেরে যাচ্ছে সাধারণ জনগণ।
লেখক: শিক্ষার্থী, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এজেডএস
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের জড় বস্তুগুলোও যেন স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে মো. তুহিন আলম